ময়মনসিংহে যুব মহিলা লীগ নেত্রী তনুকে ঘিরে বিতর্ক
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি ইসরাত জাহান তনুকে ঘিরে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ছড়িয়ে পড়েছে তার বিভিন্ন আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এর জেরেই শৃঙ্খখলা পরিপন্থি কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তবে ইসরাত জাহান তনুর দাবি, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হওয়াকে কেন্দ্র করে তার প্রতিপক্ষ গ্রুপ ও সাবেক স্বামী খায়রুল ইসলাম মনির ইন্ধনে আপত্তিকর ফেক ছবি ও ভিডিও তৈরি করে ফেসবুকে আপলোড করে সম্মানহানি করার পাশাপাশি তাকে নির্বাচন থেকে সরানোর পাঁয়তারা করছে। প্রতিকার পেতে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন বলেও তিনি জানান।
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তনুর প্রাক্তন স্বামী খায়রুল ইসলাম মনির। শনিবার (৬ এপ্রিল) বিকেলে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে মনির বলেন, পরকীয়া ও নানা কুকর্ম ধামাচাপা দিতেই তনুর লোকজনই অন্যের মদ পানের ভিডিও তার নামে ফেসবুকে ছড়িয়ে মানুষের সহানুভুতি আদায়ের চেষ্টা করছে। আর পরকীয়া প্রেমিকের হাতে করা হোটেলের আপত্তিকর ভিডিওর সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
জানা গেছে, গত ১ এপ্রিল বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের দলীয় প্যাডে সংগঠন বিরোধী ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে ইসরাত জাহান তনুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পরবর্তীতে ৪ এপ্রিল মোহাম্মদ রাকিবুল হাসান নামে এক ব্যক্তির ফেসবুক আইডি থেকে তনুর মদপান ও ইয়াবা সেবনের স্থিরচিত্র ও অশ্লীল ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করা হয়। পরে একে একে বিভিন্ন আইডি থেকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সেই ছবি ও ভিডিও। পরবর্তীতে ওই ছবি ও ভিডিও বিভিন্ন মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে জানা যায়, মদপান ও ইয়াবা সেবনের ছবি দুইটি ফেক। তবে হোটেল কক্ষে আপত্তিকর ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও তনু তার নিজের বলে জানিয়ে দাবি করেছেন, ভিডিওটি তার সাবেক স্বামীর মোবাইলে ধারণ করা একটি পুরাতন ভিডিও।
ইসরাত জাহান তনুর দাবি, সাবেক স্বামী খায়রুলের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ায় তিনি কিছু লোকজন দিয়ে তাকে হয়রানি ও ব্ল্যাকমেইল করছেন। পরে ফেসবুকে ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্নভাবে অর্থ দাবি করে ব্ল্যাকমেইল করেন। তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু ছবি ও ভিডিও ছেড়ে দেন। এতে মুহূর্তের মধ্যে ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে আইনের শরণাপন্ন হতে থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন তনু। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করার কথাও জানান তিনি।
এ বিষয়ে ইসরাত জাহান তনু বলেন, আমাকে দল থেকে বহিষ্কারের পেছনে এবং নির্বাচনের প্রার্থিতা থেকে সরাতে আমার সাবেক স্বামী খাইরুল ইসলাম মনিরকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে প্রতিপক্ষ। ২০২২ সালের ভারতের একটি ভিডিওতে কিছু ছবি এডিট করে আমার নামে চালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এ বিষয়ে আমি থানায় জিডি করেছি এবং আইসিটি আইনে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিষয়টি জেলা ও কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেছি। আশা করি ন্যায়বিচার পাব।
তবে তনুর প্রাক্তন স্বামী খায়রুল ইসলাম ইসলাম মনি বলেন, নিজের কুকর্ম ধামাচাপা দিতেই আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ ও মনগড়া তথ্য উপস্থাপন করেছে। এমনকি আমার জামিন বাতিল করতে উঠে পড়ে লেগেছে এবং আমার নামে মিথ্যা মামলা দায়ের ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। এ ব্যাপারে জিডিও করা আছে। মূলত তার যে পরকীয়া ও অপকর্ম রয়েছে সেগুলো ঢাকতে এবং নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য মদপানের ভিডিও তার লোকজনই ছড়িয়েছে। তার অন্যান্য ভিডিওর সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
মুক্তাগাছা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক আহমেদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উবায়দুল হক/আরএআর