তাজমহলের আদলে নির্মিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন আফতাবগঞ্জ জামে মসজিদ
ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রীর জন্য তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন। তাজমহলের খ্যাতি আজ বিশ্বজোড়া। সেই তাজমহলের আদলেই বিশালাকৃতির সুউচ্চ গম্বুজ, নকশাখচিত কারুকাজ, চকচকে মার্বেল পাথর আর উচ্চমাত্রার আধুনিকতায় নির্মিত হচ্ছে আফতাবগঞ্জ জামে মসজিদ। দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে নবাবগঞ্জ উপজেলায় এটি অবস্থিত।
উত্তরবঙ্গের বৃহৎ পর্যটন এলাকা স্বপ্নপুরীর কোলঘেঁষে নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জ হাটে প্রায় এক বিঘার বেশি জায়গা নিয়ে চলছে মসজিদের নির্মাণকাজ। এটি নির্মাণ করছেন স্বপ্নপূরীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও দিনাজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন এবং দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক।
দিনাজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, স্থানীয় মুসল্লিদের কথা ভেবে তার প্রয়াত বাবা ডা. আফতাব হোসেন আফতাবগঞ্জ বাজারে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। সেখানে মুসল্লিদের জায়গা সংকুলান না হওয়ায় নতুন করে এই মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন তারা।
সরেজমিনে গেলে দূর থেকে দেখে মনে হবে যেন ভারতের আগ্রার যমুনা নদীর ধারে স্বপ্নের সেই তাজমহল। নির্মাণাধীন এই মসজিদটি ঠিক তাজমহল না হলেও তাজমহলের মতো করেই গড়া। তাই তো এর সৌন্দর্য দেখতে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন দর্শনার্থীরা। ইতোমধ্যে নামাজ পড়াও শুরু হয়েছে সেখানে।
আরও পড়ুন
জানা যায়, মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে বাংলা ১৪২১ সালের পয়লা বৈশাখে। কোনো বিশেষজ্ঞ আর্কিটেকচার বা প্রকৌশলী ছাড়াই নিজস্ব নকশা ও পরিকল্পনায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ও সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক গড়ে তুলেছেন নয়নাভিরাম এই স্থাপনা। নিজস্ব পরিকল্পনা ও অর্থায়নে তাজমহলের অনুসরণে স্থানীয় ৫০ জন নির্মাণশ্রমিক এর কাজ করছেন।
চার তলাবিশিষ্ট মসজিদটির নিচতলায় থাকবে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, যেখানে থাকবে ধর্মীয় বিভিন্ন গবেষণামূলক বই। সেখান থেকে জ্ঞানপিপাসুরা জ্ঞান আহরণ করবেন। থাকবে সেমিনার কক্ষ। ধর্মীয় বিতর্ক কিংবা আলোচনা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাও থাকবে। এ ছাড়া তাবলিগ জামাত কিংবা জ্ঞান অন্বেষণে আসা অতিথিদের থাকার সুব্যবস্থা থাকবে এখানে।
দ্বিতীয় তলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোরে ২০ হাজার স্কয়ার ফুটের এ মসজিদে প্রায় পাঁচ হাজার লোকের নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি নারীদের জন্যও রাখা হয়েছে নামাজের সুব্যবস্থা।
১৬টি পিলারের ওপর তৈরি এ মসজিদে রয়েছে ৩২টি ছোট মিনার। চার কোনায় চারটি সুউচ্চ গম্বুজ, যেগুলোর প্রতিটির উচ্চতা ৯৭ ফুট। বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, ভারত ও ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গ্রানাইট, কাঠ, টাইলস, মার্বেল পাথরসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী মসজিদটির নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের দেয়াল, ছাদসহ পুরো মসজিদজুড়ে বিভিন্ন নকশা, আরবি ক্যালিওগ্রাফি ও চাঁদ-তারাসহ বিভিন্ন ডিজাইন স্থান পেয়েছে নকশায়।
মসজিদটি দেখতে আসা জাকির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি জয়পুরহাট জেলা থেকে এসেছি। দিনাজপুর জেলায় এত সুন্দর মসজিদ আছে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। ইউটিউবে ভিডিও দেখেছি, ভিডিওর থেকে বাস্তবে আরও বেশি সুন্দর আল্লাহর এই ঘর।
মসজিদটির খাদেম মো. মোকা রাব্বিন বলেন, ২০১৫ সাল থেকে মসজিদটি সুন্দরভাবে তৈরির জন্য দিন-রাত কাজ করছেন শ্রমিকরা। স্বপ্নপুরীর মালিকরা বাইরের দেশ থেকে টাইলস, মার্বেল, পাথরসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসপত্র আনছেন। দেশের বাইরের অনেক দর্শনার্থীও মসজিদটি দেখার জন্য আসছেন।
দিনাজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, মসজিদ নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নির্মাণশ্রমিকদের নিয়ে একাধিকবার তাজমহলসহ ভারতের বিভিন্ন মসজিদ পরিদর্শন করেছেন তিনি। কয়েক শতাব্দী পেরোলেও তাজমহল আজও নিজস্ব মহিমায় ভাস্বর। তাই তো তাজমহলের আদলেই মসজিদটি নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। এটি নির্মাণে আরও বছর দুয়েক সময় লাগবে, এমনটিই জানান নির্মাণশ্রমিকরা।
মসজিদের নির্মাণব্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে দেলোয়ার হোসেন জানান, এর কোনো বাজেট নির্ধারণ করা হয়নি। নির্মাণকাজে যত টাকাই লাগুক, তিনি খরচ করবেন।
উল্লেখ্য, দেলোয়ার হোসেনের বাবা ও এমপি শিবলী সাদিকের দাদা প্রয়াত ডা. আফতাব হোসেন স্থানীয়ভাবে মসজিদ, স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছেন। বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং তাদের স্বপ্ন পূরণ করতেই এই বিশাল স্থাপনা নির্মাণে ব্রত হন তারা।
এমজেইউ