স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান নিয়ে প্রভাষক মিনুর ফেসবুক পোস্ট, শোকজ
রাজবাড়ীর পাংশা সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক শামীমা আক্তার মিনুর বিরুদ্ধে সরকারি অনুষ্ঠান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২৭ মার্চ) তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে তাকে এ নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, শামীমা আক্তার মিনু একজন সরকারি বেতনভুক্ত কর্মচারী হয়েও গত বুধবার (২৭ মার্চ) আনুমানিক সকাল ৮টার দিকে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টের মাধ্যমে বিষাদগার করেন। অনুষ্ঠানের কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে প্রতিযোগিতার বিচার কার্যক্রম ও পুরস্কার প্রদানকে প্রশ্নবিদ্ধ দাবি করে অযৌক্তিকভাবে উপজেলা প্রশাসনকে হেয় প্রতিপন্ন করেন। তবে তার বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন হলেও তা জনমনে অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযুক্ত প্রভাষক শামীমা আক্তার মিনু বলেন, আমার কাছে কারণ দর্শানোর নোটিশ আসে নাই। আপনার কাছ থেকেই জানলাম। ফেসবুক পোস্টের বিষয়টি তিনি শিকার করে বলেন, আমি দেশ প্রেম জাগ্রত করতে ফেসবুকে লিখেছি। তবে সেখানে কাউকে উল্লেখ্য করে কিছু লিখি নাই। আমার পোস্টে অনেক গুণীজনেরা ভালো ভালো কমেন্ট করেছেন। আমার লেখায় সরকার বিরোধী কিছু নেই। আমার সন্দেহ হয় যারা আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছে তারা কি আসলেই সরকারের লোক! তিনি আরও বলেন, এখন দেখছি আমার প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করতে হবে।
পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, প্রভাষক শামীমা মিনু তার ফেসবুক আইডিতে যা লিখেছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।বিষয়গুলো নিয়ে জনমনে অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করেছে। যা সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯-এর অনুচ্ছেদ ১০-এর উপানুচ্ছেদ (৪), (ছ) এবং (বা) অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের জন্য পরিহারযোগ্য কাজ। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বুধবার তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সঠিক কারণ দর্শাতে না পারলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাংশা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন মো. ইয়ামিন আলী বলেন, প্রভাষক শামীমা মিনুর ফেসবুক পোস্টের ফলে কলেজের ভাবমূর্তিক্ষণ্ন হচ্ছে। এ বিষয়ে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব চাওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শামীমা আক্তার মিনু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন আমাদের কতটা অধঃপতন হয়েছে কষ্ট করে একটু ভাবুন। এই দিনকে কেন্দ্র করে স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েরা প্রায় এক মাস ধরে অনুশীলন করে কুচকাওয়াজ ডিসপ্লে ও অন্যান্য প্রতিযোগিতার জন্য। তারপর অনেক উৎসাহ আনন্দ নিয়ে রোদের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। আর এদিকে বিচারক মণ্ডলী সুন্দরভাবে সেজেগুজে এসে আরামে বসে গল্পে মেতে থাকে। তারা ভালোভাবে সময় নিয়ে দেখেই না। আগে থেকেই নির্ধারণ করে রাখে কাদেরকে পুরস্কৃত করবে। এতো কষ্ট করে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে সামান্য কয়েক টাকার একটা পুরস্কার নিয়ে যাওয়ার আশায় শিক্ষার্থীদের এতো আনন্দ উল্লাস। কিন্তু খুবই কম সংখ্যক প্রতিষ্ঠান এগুলো পায়। বাকি প্রতিষ্ঠান চলে যায় খালি হাতে। বাকি পুরস্কার বরাদ্দ থাকে লোক দেখানো বিচারকদের জন্য। সাংবাদিকদের জন্য। সুধী সমাজের জন্য, প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাদের জন্য। এই হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা দিবস পালন। সব জায়গাতেই স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি, মাইকের সামনে বড় বড় বুলি, শুধু লোক দেখানো, দায় সাড়া। দেশাত্মবোধ থেকে কিছুই করছি না। আমরা বাচ্চাদের কি শেখাবো, হায়রে আমার স্বাধীনতা।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এমএএস