সাব-রেজিস্ট্রারকে হত্যার হুমকি, আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় সাব-রেজিস্ট্রার আব্দুর রহমান মোহাম্মদ তামিমকে তার কার্যালয়ে ঢুকে হত্যার হুমকি ও কার্যালয়ের নথিপত্র ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় মামলা করেছেন সাব-রেজিস্ট্রার। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বিকেল ৩টার দিকে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সামনে থেকে দলিল লেখক ও উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস আলীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এর আগে গতকাল বুধবার (২৭ মার্চ) বিকেলে অফিস চলাকালে সাব-রেজিস্ট্রার আব্দুর রহমান মোহাম্মদ তামিমের ওপর হামলার চেষ্টা এবং দলিল ও নথিপত্র সেটা ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাতে সাব-রেজিস্ট্রার বাদী হয়ে সাতজনের নাম উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বকশীগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার আব্দুর রহমান মোহাম্মদ তামিম এজলাসে দলিল রেজিস্ট্রির সময় দেওয়াগঞ্জের সাপমারী কলেজ পাড়া এলাকার মো. ইদ্রিস আলীর স্ত্রী রেহেনা বেগম (৪৬) দাতা হিসেবে দলিল লেখক মো. শহীদুল্লাহ কর্তৃক একটি হেবা (দানপত্র দলিল) ঘোষণার দলিল এজলাসে উপস্থাপন করেন। দাতার শুনানিকালে দাতা স্বীকার করেন যে সমুদয় টাকা বুঝে পেয়েছেন। এখন বকশীগঞ্জ চরকাউরিয়া চন্দেরবন তিনানীপাড়া মো. আলমগীর হোসেনের স্ত্রী তার বোন রুবিনা আক্তারকে (৪৫) দান করবেন। এ সময় সাব-রেজিস্ট্রার বলেন, ‘টাকা বুঝিয়া পাইলে সেটা দান পত্র হয় না, সাব-কবলা (ত্রয় জমি) করতে হয়। দলিল হেবা করিলে সরকার রাজস্ব পায় মাত্র ২০১০ টাকা। অপর দিকে সাব-কবলা করলে সরকার রাজস্ব পায় প্রায় চার লাখ টাকার বেশি। একই দলিল খন্দকার মোহাম্মদ আলী হাসান (৬০), আমার এজলাসে দাখিল করেন। আমি আবার দলিল দাতার শুনানি করলে আগের মতোই টাকা পেয়েছেন বলে স্বীকার করেন।’
এ সময় দলিল লেখক দলিলটা করার জন্য জোরাজুরি করেন। তখন সাব-রেজিস্ট্রার বলেন, এটি সাব-কবলা দলিল হবে। যেহেতু এটি ক্রয় করেছে। ক্রয়কৃত জমি সেবা দলিল হবে না। এ সময় দলিল লেখকসহ অজ্ঞাত ১০/১৫ জন সাব-রেজিস্ট্রারকে গালিগালাজ করতে শুরু করেন। পরিস্থিতি অবনতি হলে তারা কার্যালয়ের দলিল ও নথিপত্র ছিঁড়ে ফেলেন। সাব-রেজিস্ট্রারকে হত্যার হুমকিও দেন। পরে পুলিশ খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সাব-রেজিস্ট্রার আবদুর রহমান মো. তামিম বলেন, আমি গত দুই মাস বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ শেষে সম্প্রতি আবার কাজে যোগদান করে জানতে পারি তিনটি কলামে কাঁটা ছেঁড়া ও ঘষামাজা করে জমির পরিমাণ জালিয়াতি করা হয়েছে। এই জালিয়াতিতে ফিরোজ মিয়া নামে একজন দলিল লেখকের নাম তদন্তে চলে আসে। এই জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে আমি অবস্থান নেওয়ায় দলিল লেখকরা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় বুধবার (২৭ মার্চ) হেবা দান দলিল সম্পাদন করা নিয়ে পরিকল্পিতভাবে কয়েকজন দলিল লেখক আমার খাস কামরায় আমার সঙ্গে অসদাচরণ করেন এবং গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিঁড়ে ফেলেন। সেই সঙ্গে আমাকে হত্যার হুমকি দেন। বর্তমানে আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
এ বিষয়ে বকশীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আহাদ খাঁন বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টা দিকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রকিব হাসান নয়ন/আরএআর