সেই মেহেনাজের পাশে একটিভ ফাউন্ডেশন
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মাহবুবা মেহেনাজের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন তার বাবা-মা। মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) বিকেলে মাহবুবা মেহেনাজের পাশে দাঁড়িয়েছেন একটিভ ফাউন্ডেশন। নগদ ২৫ হাজার টাকা তুলে দেন ফাউন্ডেশনটির চেয়ারম্যান ও নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির।
জানা যায়, মাহবুবা মেহেনাজ চাটখিল উপজেলার কড়িহাটি ছালেমিয়া ফাজিল মাদরাসার গণিতের সহকারী শিক্ষক কামরুল হাসানের চার মেয়ের মধ্যে বড়। মেহেনাজের মা মারজাহান বেগম একজন গৃহিণী। মেহেনাজ কড়িহাটি ছালেমিয়া ফাজিল মাদরাসা থেকে ২০২১ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে দাখিল পাস করেন। পরে স্থানীয় চাটখিল মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২৩ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। মেহেনাজ এ বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে জাতীয় মেধায় ১০৩৪তম হয়ে তার পছন্দের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু অর্থের অভাবে সব কিছু যেন থমকে গেছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার চিকিৎসক হওয়া।
মাহবুবা মেহেনাজের বাবা কামরুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাদরাসাশিক্ষক হিসেবে যা বেতন পেতাম তা দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হত। আমার মেয়ে টিউশনি করে নিজের খরচ চালাত। আমার স্ত্রী ঘরের কাজের পাশাপাশি সেলাই মেশিনের কিছু কাজ করত। সেই আয় আমাদের পারিবারিক কাজে লাগত। মেয়ের স্বপ্ন মেডিকেলে পড়ার। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেছি। তবে সামনে অনেক খরচ। নতুন জায়গায় টিউশনি পেতে সময় লাগবে। তার মেডিকেলে পড়াশোনা চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। একটিভ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা পাওয়ায় আমার ওপর থেকে অনেক বড় চাপ কমে গেছে।
মাহবুবা মেহেনাজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছাটা দশম শ্রেণি থেকেই। কলেজে ওঠার পর ইচ্ছাটা আরও প্রবল হয়। কলেজে পড়ার সময় থেকেই একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি মেডিকেলে ভর্তির কিছু প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। তখন থেকেই সাদা অ্যাপ্রোনের সঙ্গে স্টেথোস্কোপ পরা নিজেকে কল্পনা করতাম। বাবা মাদরাসাশিক্ষক, মা গৃহিণী। ফলে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজেকে লড়ে যেতে হয়েছে। আমার পথচলায় একটিভ ফাউন্ডেশন পাশে থাকায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমি যেন স্বপ্ন পূরণ করে মানুষের সেবা করতে পারি সেই জন্য দোয়া চাই।
চাটখিল মহিলা ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ ফারুক সিদ্দিকী ফরহাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০২৩ সালের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাহবুবা মেহেনাজ অন্যতম। তার মধ্যে পড়ার আগ্রহ এবং নতুন কিছু জানার আগ্রহ বেশি। নতুন কিছু শেখার আগ্রহ থেকে তার ইচ্ছা ছিল মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস-২০২৪ উপলক্ষ্যে মেহেনাজের কলেজ চাটখিল মহিলা ডিগ্রি কলেজে বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় এবং একটিভ ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে কৃতী শিক্ষার্থীদের পুরস্কার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। সেই সঙ্গে মেহেনাজকে একটিভ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে নগদ ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।
একটিভ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও চাটখিল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেধাবীরা সংগ্রামী হয়। আমিও সংগ্রাম করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। বর্তমানে ব্যবসায় সফল হয়েছি। মাহবুবা মেহেনাজের সংগ্রামের কষ্ট আমি বুঝি। আমি আগামীতেও মেহেনাজের খোঁজখবর রাখব। তার পাশে অভিভাবক হিসেবে থাকব।
হাসিব আল আমিন/এমজেইউ