বিধবার ৭ লাখ টাকা দিচ্ছে না এসআইবিএল’র উদ্যোক্তা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের চরবংশী বাজার এজেন্ট শাখার উদ্যোক্তা ফজলুল করিমের বিরুদ্ধে আসমা আক্তার নামে এক বিধবা গ্রাহকের ৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। উল্টো বিধবাকে বিভিন্ন অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে ওই উদ্যোক্তা। টাকা ফেরতসহ হয়রানি থেকে বাঁচতে সংশ্লিষ্টদের কাছে আকুতি জানিয়েছে ওই বিধবা নারী। ব্যাংক রশিদসহ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা শাখার ব্যবস্থাপক মাকসুদুর রহমান।
এদিকে একই দাবিতে মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসীর ব্যানারে দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চরবংশী বাজারে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। আসমা তার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় রায়পুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ভুক্তভোগী আসমা রায়পুর উপজেলার উত্তর চরলক্ষ্মী গ্রামের মাষ্টার আলী আহমেদ প্রধানের মেয়ে। তিনি নোয়াখালী সদর উপজেলার লক্ষ্মী নারায়ণপুর গ্রামের মৃত জাকির হোসেনের স্ত্রী। অভিযুক্ত এজেন্ট ব্যাংক উদ্যোক্তা ফজলুল করিম রায়পুরের দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের বেপারী বাড়ির সাত্তার বেপারীর ছেলে।
আসমা আক্তারের কাছে থাকা ব্যাংক রশিদ সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৭ জুলাই সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের চরবংশী এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় আসমা হিসাব খোলেন। একইদিন তিনি এক লাখ টাকা জমা দেন। এরপরই একই বছর ৪ আগস্ট ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। ২০২৩ সালের ৫ মে তিনি তার ব্যাংক হিসেবে ৬ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। ব্যাংকের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরিত সকল রশিদ আসমার কাছে রয়েছে। এছাড়া ৪ আগস্ট জমা দেওয়া টাকার রশিদে ডিপোজিটরের নামের স্থানে অভিযুক্ত ফজলুল করিমের নাম লেখা ছিল। যদিও ব্যাংক স্টেটমেন্টে টাকা জমা দেওয়ার তারিখ দেখানো হয়েছে একদিন আগে ৩ আগস্ট।
এদিকে গত ১৮ জানুয়ারি আসমা তার ব্যাংক হিসাবের স্টেটমেন্ট উত্তোলন করেন। এতে দেখা যায় ২০২২ সালের ৭ জুলাই তিনি মাত্র ১ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। একই বছর ৩ আগস্ট ৫০ হাজার টাকা জমা দেওয়া হয়। হিসাব খোলার পর থেকে ৫১ হাজার টাকা জমা রাখায় ব্যাংক কর্তৃক লাভ সংযুক্ত ও খরচ বাদ দিয়ে জমা দেখানো হয় ৫১ হাজার ৩৩৯ টাকা।
অন্যদিকে গত ১৪ মার্চ এজেন্ট ব্যাংক শাখায় ডাকাতি হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়। তবে চরবংশী বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি সেলিম কবিরাজ বলেন, ফজলুল করিম ২ জন লোক নিয়ে একটি দোকান থেকে রড নিয়ে ব্যাংকের তালা ভাঙেন। এখানে কোনো ডাকাতি হয়নি। ডাকাতির বিষয়ে তিনি আমাদেরকে জানায়নি। যে দোকান থেকে রড নিয়েছে ওই দোকানি পুলিশকেও জানিয়েছেন। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
আসমা আক্তার বলেন, ৩ ধাপে সাড়ে ৭ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়েছি। এটি আমার শেষ সম্বল ছিল। এখন দেখি আমার ব্যাংক হিসেবে মাত্র ৫১ হাজার টাকা রয়েছে। ফজুলল করিম আমার ব্যাংক হিসেবে টাকাগুলো জমা দেননি। আমার কাছে জমা দেওয়ার সকল রশিদ রয়েছে। আমি টাকার জন্য এলে লোক এনে আমাকে শ্বাসিয়েছে। আমাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে। আমি টাকা ফেরত চাই। টাকা আত্মসাতকারী ফজলুল করিমের বিচার চাই।
অভিযুক্ত ফজলুল করিম বলেন, ৬ লাখ ও ১ লাখ টাকার রশিদে রিসিভিং সিল আমাদের নয়। ৫০ হাজার টাকার রিসিভিং কপির সিলের সঙ্গে ওই সিলগুলোর সামঞ্জস্য আছে কি না তা খতিয়ে দেখলেই স্পষ্ট হওয়া যাবে। ৫০ হাজার টাকার সমস্যা ব্যাকআপ দিতেই হাতে বানিয়েছে রশিদগুলো। মূলত আমাদের শাখার তালা ভাঙার পরই আসমাসহ জড়িত অন্যরা ৭ লাখ টাকার অভিযোগ তুলেছে। আমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে ব্যাংকের জেলা শাখায় লিখিত অভিযোগ দিতেও পরামর্শ দেন তিনি।
সোস্যাল ইসলামি ব্যাংক লক্ষ্মীপুর শাখার ব্যবস্থাপক মাকসুদুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমরা শুনেছি। তবে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে হবে। ভুক্তভোগী গ্রাহক আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রায়পুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিন ফারুক মজুমদার বলেন, ভুক্তভোগী নারী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ঘটনাটি তদন্ত চলছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া ওই এজেন্টের তালা ভাঙা নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই।
হাসান মাহমুদ শাকিল/এমএএস