‘সিদ্ধ ডিম আর আলু ভাজি দিয়ে ভাত খেয়ে রোজা থাকি’
একটি ডিম সিদ্ধ আর আলু ভাজি দিয়ে ভাত খেয়ে রোজা থাকছেন বরগুনার ঢলুয়া এলাকার আদর্শ ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীরা।
খরচ কমাতে সবাই মিলে এই সামান্য খাবার খেয়ে রোজা থাকেন। আর ইফতার করেন নিজেদের তৈরি পেঁয়াজু, ছোলা, বেগুনি আর মুড়ি দিয়ে।
সিরাজগঞ্জ থেকে বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে লেখাপড়ার শিক্ষার্থী নাসির ফকির দীর্ঘদিন ধরে বরগুনার আদর্শ ছাত্রাবাসে বসবাস করছেন । তার সঙ্গে আরও ৪০ জন শিক্ষার্থী ওই ছাত্রাবাসে একত্রে বসবাস করেন। বর্তমান সময়ে বাজারমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে রমজান মাসে তাদের অবস্থা নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেন তারা।
বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকের পরিবারে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা থাকলেও অনেকের পরিবারের অবস্থা খুবই খারাপ। ফলে একই মেসে এক সঙ্গে সবার তালমিলিয়ে চলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে আদর্শ ছাত্রাবাসে বসবাসরত শিক্ষার্থীরা সবার কথা ভেবে সর্বনিম্ন খরচেই প্রতিদিনের সেহরি ও ইফতারের ব্যবস্থা করে থাকেন।
চলতি রমজান মাসে দৈনন্দিন জীবনের খোঁজ জানতে সরেজমিনে বরগুনার আদর্শ ছাত্রাবাসে গিয়ে দেখা যায়, ছোট আকারের একেকটি রুমে দুজন মিলে বসবাস করছেন। সবার সুবিধার কথা চিন্তা করে প্রতি সপ্তাহে বাজার থেকে মাত্র ৮ শ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে ইফতার ও সেহরির কাঁচা বাজার করেন তারা। মেসে একজন মাত্র কাজের বুয়া থাকলেও ৪০ জনের ইফতার আয়োজনে রান্নায় সহযোগিতা করেন শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন
একদিকে কলেজে সেমিস্টার পরীক্ষা চলছে অপরদিকে কাজের বুয়াকে ইফতারি তৈরি করতে সহযোগিতা করছেন নিলফামারীর সৈয়দপুর থেকে আসা বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেক্ট্রনিক বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম। নিজের হাতেই চুলায় রান্না করছেন বেগুনি, পেঁয়াজু। কাজের ফাঁকে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের পরীক্ষা শুরু হওয়ায় রমজান মাসে এখানেই থাকতে হচ্ছে। বাজারের ঊর্ধ্বগতির ফলে ইফতারির আয়োজন আমাদের নিজেদেরই করতে হচ্ছে। এর ফলে আমাদের লেখাপড়ায় ক্ষতি হচ্ছে। সময় নষ্ট হচ্ছে। বাজারের সব পণ্যের দাম কম থাকলে বাজার থেকে কিনে আমরা ইফতার করতে পারতাম।
পটুয়াখালীর ফাহাদকেও রমজান মাসে পরীক্ষার কারণে মেসে থাকতে হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তির কথা জানিয়ে ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমরা অনেকেই মধ্যবিত্ত পরিবারের। রমজান মাসে পরীক্ষা চলায় আমাদের এখানে থেকেই রোজা রাখতে হয়। খরচ বাঁচাতে সময় ব্যয় করে নিজেদের ইফতারি নিজেদেরই তৈরি করতে হচ্ছে। বাজারে সব পণ্যের দাম কম থাকলে বাইরে থেকে কিনে এনে আমরা এ সময়টায় লেখাপড়ায় ব্যয় করতে পারতাম।
প্রতিদিন ইফতার তৈরি শেষে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বণ্টন। লাইনে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীরা একটি করে বেগুনি, পেঁয়াজু, খেজুর, এক চামচ ছোলাবুট ও কিছু মুড়ি সংগ্রহ করেন। পরে কেউ একজন আবার সংগ্রহকৃত ইফতার একত্রিত করে এক বাটিতেই মিলেমিশে ইফতার মাখান।
সবাই মিলে ইফতার শেষে আল মামুন বলেন, আমাদের যে পরিমাণ বাজেট তা দিয়ে আমাদের ভালোভাবে ইফতার হয় না। আমাদের সবার পরিবারের অবস্থা এক না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আমরা ফলমূল কিনে ইফতার করতে পারি না।
এত কম টাকায় সেহরি ও ইফতারির আয়োজনের বিষয়ে নিলফামারী থেকে বরগুনায় এসে মেসে থাকা শিক্ষার্থী জিসান বেগ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা চাইলে অনেকেই একশ থেকে দেড়শ টাকায় ইফতারির আয়োজন করতে পারি। তবে আমাদের মেসে সবাই আর্থিকভাবে সচ্ছল না। তাদের কথা বিবেচনা করে সবাই যাতে একত্রে ইফতার করতে পারে এ কারণে ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যেই আমরা আমদের ইফতার ও সেহরির আয়োজন করে থাকি।
আরকে