হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ, ৮ শয্যার ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ১১৬
জয়পুরহাট ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে হঠাৎ করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী বেড়েই চলেছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে ১৮০ জন ভর্তি হয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের এই ১৯ দিনে ৬২৮ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে গত দুই দিনেই ভর্তি হয়েছেন ১৮০ জন। গত ১৮ মার্চ ভর্তি হয়েছেন ১০৩ জন ও ১৯ মার্চ ৭৭ জন। আর আজ বুধবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ২৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। সেই হিসাবে গত ৫৩ ঘণ্টায় ২০৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৮৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন এবং হাসপাতালে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিচ্ছেন ১১৬ জন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগ রোগী জয়পুরহাট পৌরসভা এলাকার।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ডের জন্য ৮টি শয্যা বরাদ্দ থাকলেও সেখানে প্রায় ১০০ জন রোগী ভর্তি আছেন। রোগীদের মধ্যে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই আছেন। তবে শয্যা না পেয়ে বাধ্য হয়ে রোগীরা হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে বিছানা পেতে শুয়ে আছেন।
জয়পুরহাট পৌরসভার সবুজনগর মহল্লার বাসিন্দা আশা রানি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে আমার শ্বাশুড়ির ডায়রিয়া শুরু হয়। দুপুর হতে হতে বেশি হয়। পরে দুপুর ২টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসা নিয়ে এখন মোটামুটি সুস্থ আছে।
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার কামদিয়া এলাকার লায়না বেওয়া বলেন, অসুস্থ এক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে আমি হাসপাতালেই ছিলাম। এখানে থাকার জন্য শহরের হোটেল থেকে এনে খাবার খেয়েছি। হঠাৎ করে মঙ্গলবার দুপুর থেকে ডায়রিয়া শুরু হয়। পরে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। রোগীর সঙ্গে এসে এখন নিজেই রোগী হয়েছি।
জয়পুরহাট পৌরসভার সিও কলোনি মহল্লার বাসিন্দা হুমায়ন রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা পৌরসভার সাপ্লাইয়ের পানি পান করি। পানি থেকে ময়লা বের হচ্ছে। হঠাৎ করেই আমার মেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এখন অনেকটা সুস্থ আছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক ঢাকা পোস্টকে বলেন, হঠাৎ করে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী বেড়ে গেছে। এর মধ্যে জয়পুরহাট পৌরসভা এলাকার রোগীই বেশি। শহরের চার লেনের জন্য ড্রেনের কাজ চলছে। সেখানে পৌরসভার পানির লাইনের কোথাও সমস্যা থাকতে পারে। হাসপাতালে আসা রোগীরা বলছেন পৌরসভার পানিতে ময়লা বের হচ্ছে। আমরা এটি পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় জয়পুরহাটের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. তুলসী চন্দ্র রায় আজ বুধবার জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, রমজান মাস, সবাই বাইরের অনিরাপদ খাবার খাচ্ছে। তাছাড়া শহরের ফোর-লেন রাস্তার কাজ চলছে সেখানে তো চতুর্দিকে ধুলাবালি ছড়িয়ে গেছে। আবার রাস্তার কাজ করতে গিয়ে কোথাও পানির লাইন ফেটে গেছে কি না, পৌরসভার সাপ্লাইয়ের পানি কোথা দূষিত হচ্ছে কি না। হাসপাতালে আসা অনেক রোগী বলেছেন তারা পৌরসভার সাপ্লাইয়ের পানি পান করে। এসব কারণেই ডায়রিয়া হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বেশির ভাগ রোগীই পরিচয় দিচ্ছেন তারা পৌর এলাকার বাসিন্দা। আর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ডায়রিয়ার প্রদুর্ভাব জেলা হাসপাতালের চেয়ে খুবই কম। এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে জয়পুরহাট পৌর এলাকায় নিশ্চয় কোনো সমস্যা হয়েছে।
ডা. তুলসী চন্দ্র রায় বলেন, পৌরসভার যেসব চিকিৎসক আছেন, আমরা তাদেরকে এ বিষয়ে অবগত করে চিঠি দিয়েছি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর চিকিৎসার বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি এবং কোনো সমস্যা নেই।
চিকিৎসা সামগ্রী, স্যালাইন ও ওষুধ সবকিছু পর্যাপ্ত আছে বলেও জানান এই চিকিৎসক।
প্রসঙ্গত, ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার গতকাল ১৯ মার্চ জয়পুরহাট পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান একটি বিশেষ ঘোষণা দেন। ঘোষণায় তিনি জানান, জয়পুরহাট পৌরসভার ফোর লেন রাস্তার সম্প্রসারণ কাজ চলমান থাকায় পৌরসভার পানির লাইনের পাইপ কেটে যাওয়া বা ফেটে যাওয়ায় সাপ্লাই পানি দূষিত হতে পারে। এমতাবস্থায় পানির গ্রাহকগণকে সাময়িকভাবে পৌরসভার সরবরাহকৃত পানি ফুটিয়ে পান করার জন্য অনুরোধ জানানো হলো।
চম্পক কুমার/এমজেইউ