রমজানে মেসের শিক্ষার্থীদের সাদামাটা ইফতার
মেস জীবনে প্রতি পদে পদে সংগ্রাম, ত্যাগ ও স্বপ্ন জড়িয়ে থাকে। তাই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জীবনে এটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তবে সব শিক্ষার্থীর জন্য মেস জীবন সুখকর নয়। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীদের সংগ্রাম আর হতাশা নিয়ে দিন পার করতে হয়। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মেস শিক্ষার্থীদের মাসিক খরচে টান পড়েছে। অনেকে ইফতারি করেন শুধু মুড়ি দিয়ে। খেজুরও অধিকাংশ শিক্ষার্থীর নাগালের বাইরে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী একটি মেসে প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী থাকেন। এর মধ্যে অনেকেই পড়াশোনা শেষে এসব মেসে থেকে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের থেকে আসা। মেসে থাকা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা টিউশনি কিংবা পরিবার থেকে টাকা নিয়ে চলতে হয়। তাদের টিউশনির বেতন না বাড়লেও খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে তারা ইফতারের জন্য মুড়ি আর ছোলা ছাড়া ভালো কিছু ব্যবস্থা করতে পারছেন না।
ঝিনাইদহ শহরে স্বপ্নবিলাস নামে একটি মেসে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থী থাকেন। মুড়ি আর একটু ছোলা মিশিয়ে তারা ইফতার করছেন।
এদিকে মেসের সিট ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, পানি বিল এবং খাবারের খরচে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। ফলে মাস শেষে হিসাব মেলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে অনেকে খাবারের তালিকা ছোট করতে শুরু করেছেন।
দামের কারণে গরুর পর তালিকা থেকে অনেকটা বাদের পথে মুরগিও। রুই-কাতলা মাছের দামও নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় পাঙাস, তেলাপিয়া কিংবা ছোট রুই (নলা) মাছের ওপর শেষ ভরসা করতে হচ্ছে এসব শিক্ষার্থীদের। কিন্তু এসব মাছের দামও বাড়তে থাকায় পিস ছোট করে টিকে থাকার চেষ্টা চলছে শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মামুন বলেন, মেস ভাড়া ও দ্রব্যমূল্যের কয়েকগুণ দাম বেড়েছে। ফলে বাড়ি থেকে যে টাকা পাঠানো হয় তা দিয়ে ঠিকমতো মাস চলে না। এর মধ্যে যদি ভালো ইফতারি ও সেহরি করি তাহলে মাসের শেষের ১০ দিন না খেয়ে থাকতে হবে। মেসজীবন সবার জন্য সুখ বইয়ে নিয়ে আসে না।
মেসে থাকা এসএসসি পরীক্ষার্থী মাসুম বলেন, ভালো পড়াশোনার জন্য মেসে এসেছি কিন্তু এখানে খুব কষ্টে দিন পার করতে হয়। খাওয়া ও টিউশনি, যাতায়াত ভাড়াসহ প্রতিদিন প্রায় ৩০০ টাকা খরচ হয়।
আরেক মেসে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসনিম জাহান মিম বলেন, বাড়ি থেকে যে টাকা দেন আব্বু তা দিয়ে কষ্ট করে চলে যাচ্ছে। ভালো ইফতার ও ভালো খাওয়া এখন অনেকটা বিলাসিতা।
কনজুমার ইয়ুথ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রাকিব রিফাত বলেন, বর্তমান দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি কারণ হিসেবে মধ্যস্বত্বভোগী, আসাধু ব্যবসায়ী, সরকারের কঠোর পদক্ষেপের অভাব এবং মানুষের অসচেতনতাকে দায়ী করা যায়। ক্রমবর্ধমান দাম বৃদ্ধির ফলে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষেরা বিপাকে রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা একদিকে মানহীন খাবার খেয়েও মাসের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। মুদ্রাস্ফীতির এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের ঝিনাইদহের সহকারী পরিচালক নিশাত মেহের বলেন, আমরা পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছি। যাতে কেউ বেশি মূল্য রাখতে না পরে। এরপরও যারা নির্ধারিত মূল্যের বেশি নেবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এজন্য যেসব এলাকায় এমন ধরনের ঘটনা ঘটবে সেসব এলাকার তথ্য আমাদেরকে দিয়ে সহযোগিতা করার আহ্বান করছি।
রাকিব হোসেন/আরকে