এই পদক যেন আমাকে অহংকারী না করে : আব্রাহাম লিংকন
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এবার ১০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। সমাজসেবা/জনসেবা ক্ষেত্রে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪ পাচ্ছেন কুড়িগ্রামের কৃতী সন্তান উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন। স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত হওয়ায় তাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এসএম আব্রাহাম লিংকন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই পদক যেন আমাকে অহংকারী না করে। আমাকে যেন মানুষ মনে করে না পদক পেয়ে আমি অনেক কিছু হয়েছি, আমি কিচ্ছু হয়নি। এই পদক যেন আমাকে বিনয়ী করে। আরও মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি এই পদক পাওয়ার পরে, আমি যখন একুশে পদক পেয়েছিলাম তারও আগে কিন্তু কাজ শুরু করি। আমি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ শুরু করেছি গত ৩০-৩৫ বছর আগে। এ কাজটি হয়তো অফিসিয়ালি ১০-১২ সালের দিকে মানুষের জন্য উন্মুক্ত করেছি। যেদিন উন্মুক্ত করেছি সেদিনে তো এতো কাগজপত্র পাইনি। এটা আমাকে সংগ্রহ করতে হয়েছে। একজনের বাড়িতে স্মারক গ্রহণের জন্য ২০-২৫ বারও গিয়েছি পাইনি। তেল খরচ হয়েছে, যাতায়াতে সময় নষ্ট হয়েছে। রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেওয়ার ফলে কিন্তু মানুষের মাঝে আস্থা তৈরি হয়েছে, না এখন তাকে দেওয়া যাবে। এটি আমার জন্য এই জনপদের ইতিহাসকে সামনে তুলে আনার জন্য একটি সুযোগ হবে। মানুষের কাছে অন্তত আস্থা থাকবে, রাষ্ট্র তার পাশে আছে, এখানে জিনিস দেওয়া যায়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি এটি সুযোগ হিসেবে জনপদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধরে কাজ করার ক্ষেত্রে অনেক কাজে দেবে। মানুষের জন্যই, দেশের জন্যই এটি অনেক কাজে দেবে বলে আমি মনে করি।
এসএম আব্রাহাম লিংকন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ যারা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি শুধু যাদুঘরের জন্য কাজ করিনি, আপনারা জানেন আমি এই জনপদে আজ থেকে ৩২ বছর আগে আইন শিক্ষার জন্য আমি আইন কলেজ করেছি। আজকে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাটের ৭০ ভাগ আইনজীবী কিন্তু কুড়িগ্রাম আইন কলেজের ছাত্র। তারা সমাজে কাজ করছে।
তিনি বলেন, কোনো মানুষই পদকের জন্য কাজ করে না। ভালো কাজ করলেই সেই কাজগুলোর কখনো না কখনো মূল্যায়ন হয়। সেই মূল্যায়নটার নামই হয়তো সম্মাননা। আবার মূল্যায়নটার নামই কখনো কখনো পদক। কেউ হয়তো পেয়ে যায়, কেউ হয়তো পায় না। কিন্তু তার কাজগুলোই অমর হয়ে থাকে।
আগামী ২৫ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা পুরস্কার তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কমিটি ও অর্থনৈতিক) জাহেদা পারভীনের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এটি দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছে।
এসএম আব্রাহাম লিংকন ১৯৬৬ সালের ১৪ নভেম্বর কুড়িগ্রাম সদরের কৃষ্ণপুর বকসীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পেশায় তিনি একজন আইনজীবী ও সমাজসেবক। সমাজসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২২ সালে একুশে পদক প্রদান করে। এবার তিনি সমাজসেবা/জনসেবা ক্যাটাগরিতে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছেন।
জুয়েল রানা/আরএআর