মেসের ব্যয় সামলাতে হিমশিম, ছোলা মুড়ি দিয়েই শিক্ষার্থীদের ইফতার
পবিত্র মাহে রমজানে পৃথিবীর অনেক মুসলিম দেশে খাদ্যপণ্যের দাম কমে। তবে বাংলাদেশে ঘটে তার উল্টো, রমজান এলেই যেন দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা লেগে যায় এ দেশে। আর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত দাম বৃদ্ধি পাওয়ার প্রভাব পড়েছে মেসের শিক্ষার্থীদের ওপর। রোজাদার শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত দামে ফলমূল, ইফতার পণ্য ও প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য কিনতে পারছেন না। অধিকাংশ মেসের শিক্ষার্থীরা ছোলা, মুড়ি দিয়েই ইফতার সাড়ছেন।
রমজানে মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা কীভাবে ইফতার করছেন তা জানতে কুষ্টিয়া জেলার কয়েকটি মেসে খোঁজ নেওয়া হয়। মেসগুলোতে যারা থাকেন সবাই শিক্ষার্থী। কেউ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন আর অনেকেই পড়াশোনা শেষে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শুক্রবার ইফতারের ১০ মিনিট আগে সরেজমিনে কুষ্টিয়া শহরের পেয়ারা তলার একটি ছাত্রাবাসে গিয়ে দেখা যায়, একটি বাসার নিচতলায় চার রুম ভাড়া নিয়ে ১৫ জন ছাত্র মিলে একটা মেস গড়ে তুলেছেন। রোজাদার ছাত্ররা ইফতার করার জন্য বসে আছেন। তাদের সামনে কয়েকটি আলুর চপ, বেগুনি ও ছোট্ট একটা বাটিতে বুন্দিয়া রাখা। মুড়ি দিয়ে সেগুলো একটা বড় গামলায় মেশালেন। পানি দিয়ে স্যালাইনের শরবত বানালেন। মসজিদের মাইকে আজান শুনে সঙ্গে সঙ্গে পানি দিয়ে ইফতার শুরু করলেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত দাম বৃদ্ধি ফলে তাদের ওপর প্রভাব পড়েছে। অতিরিক্ত দামে ফলমূল, ইফতার পণ্য ও প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য কিনতে পারছেন না তারা। ফলে এভাবেই ইফতার করতে হচ্ছে তাদের।
কুষ্টিয়া রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মেহেদী হাসান বাপ্পি ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোজা শুরুর আগে থেকে সবকিছুর দাম বেড়েছে। আমরা ছাত্রাবাসে থাকি। বিভিন্ন জায়গায় থেকে কুষ্টিয়ায় পড়তে এসেছি। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। এজন্য ফলমূল বা চাহিদা অনুযায়ী ইফতার ও অন্যান্য জিনিসপত্র কিনতে পারি না। আজ ছোলা, মুড়ি, দুটো খেজুর, স্যালাইন ও পানি দিয়ে ইফতার করেছি। আমার পরিচিত অনেক ছাত্র ও বন্ধু বিভিন্ন মেসে থাকে। তারাও ইফতার সামগ্রী কিনতে পারে না। এজন্য আমাদের মতো ছোলা মুড়ি দিয়ে ইফতার করে। রমজান মাসে সবকিছুর দাম কমানো ও নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ছোলা, মুড়ি ও স্যালাইন দিয়ে ইফতার করি। সবকিছুর দাম বেশি। এজন্য মন চাইলেও ফলমূল ও ইফতার সামগ্রী কিনতে পারি না। সবকিছুর দাম বেশি। কয়েকবছরের ব্যবধানে মেসের খরচ দ্বিগুণ বেড়েছে।
বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র শরিফ হোসেন বলেন, আমরা যারা মেসে একসঙ্গে থাকি, তারা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ১০ টাকার ছোলা মুড়ি এখন ২০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। রোজার আগে বয়লার মুরগির কেজি ছিল ১৮০ টাকা, এখন তা বেড়ে ২৪০ টাকা। মন চাইলেও আমরা ফলমূল ও অন্যান্য ইফতার সামগ্রী কিনতে পারি না। এসব আমাদের সামর্থ্যের বাইরে চলে গেছে।
কুষ্টিয়া মহিলা কলেজের ছাত্রী আফসানা মিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোজার সময় ফলমূলসহ জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য আমাদের অনেক কষ্ট হয়। ফলমূল ও প্রয়োজনীয় ইফতার সামগ্রী কিনতে পারি না। মেসে আমরা ছোলা, মুড়ি দিয়েই ইফতার করছি। আমাদের মতো অন্যান্য মেয়েদের মেসেও একই অবস্থা।
কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র আল আমিন রাফসান, কুষ্টিয়া মেডিক্যাল অ্যাসিসট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) ছাত্র খানজালা রহমান, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ছাত্র আসিফসহ বিভিন্ন মেসে থাকা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে তিন হাজার টাকায় এক মাসের মেসের খরচ হয়ে যেত। এখন ছয় হাজার টাকাতেও হচ্ছে না। জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারা চাহিদা অনুযায়ী ফলমূল, ইফতার সামগ্রী, মাছ, মাংস কিনতে পারে না। বেশিরভাগ মেসের শিক্ষার্থীরা মুড়ি, ছোলা, চপ দিয়ে ইফতারি করছে। মন চাইলেও অর্থের অভাবে কিনতে পারে না।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক সুচন্দন মণ্ডলের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি।
রাজু আহমেদ/এএএ