ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানবাহনে ধীরগতি, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় ধলেশ্বরী নদীর ওপর নির্মিত জাগীর সেতুর এক লেনের ‘এক্সপানশন জয়েন্টের’ সংযোজন কাজ চলছে। এ কারণ লেনটি দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সেতুর একটি লেন দিয়ে যানবাহনগুলো ধীরগতিতে চলাচল করায় সেতুর উভয় পাশে যানবাহনগুলোকে আটকে থাকতে হচ্ছে। এতে মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের শ্রমিক ও যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
গত তিন দিন ধরে জাগীর সেতুর এক লেন বন্ধ রয়েছে। তিন দিনের ছুটি শেষে আজকে সোমবার (১৮ মার্চ) সকাল থেকেই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ঢাকাগামী ও মানিকগঞ্জগামী যাত্রী এবং যানবাহনের চাপ অন্যান্য দিনের চেয়ে কিছুটা বেশি। যার ফলে আজকে সেতু এলাকায় গত কয়েক দিনের তুলনায় বেশি সময় আটকে থাকছে যানবাহন ও যাত্রীরা।
মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার জাগীর এলাকায় ধলেশ্বরী নদীর ওপর ৪৯৩ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণ করা হয় ১৯৬২ সালে। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় এই সেতুর সংস্কার কাজ করা হয়েছে। সম্প্রতি সেতুর বিভিন্ন অংশের সম্প্রসারণ ও সংকোচন নিশ্চিত করার জন্য সেতুর সংযোগস্থলে এক্সপানশন জয়েন্টে কিছু ফাঁকা রাখা হয়। দীর্ঘদিন সেতুটির ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করায় সেতুর বিভিন্ন অংশের সংযোগস্থলে এক্সপানশন জয়েন্টের স্টিলের পাতগুলো বেঁকে গেছে।
এর ফলে সংযোগস্থলের ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি অংশ পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে গেছে। সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি যাতায়াতের সময় শব্দ হওয়া এবং গাড়িতে বেশ ঝাকুঁনি লাগে। এতে গাড়ির চাকাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে গত বুধবার থেকে এক্সপানশন জয়েন্টের সংযোজন কাজ শুরু করা হয়। সেতুটিতে মোট ১২টি এক্সপানশন জয়েন্ট রয়েছে। এসব এক্সপানশন জয়েন্ট সংস্কার করা হচ্ছে। এসব জয়েন্টের ফাঁকা স্থানে নতুন করে স্টিলের পাত বসানো হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুটির উত্তরপাশের লেনের ১২টি এক্সপানশন জয়েন্টে স্টিলের পাত বসানোর কাজ সম্পন্ন করেছেন শ্রমিকেরা। এখন ঢালাইয়ের কাজও শেষ পর্যায়ে হলেও সেতুর একপাশে যানবাহনগুলোকে দাঁড় করিয়ে রেখে অপর (দক্ষিণ) পাশের লেন দিয়ে যানবাহনগুলোকে চলাচল করতে হচ্ছে। ফলে সেতুর দুই পাশে ঢাকাগামী ও মানিকগঞ্জগামী যাত্রী ও যানবাহনগুলোকে সেতু পারাপারে প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগছে। আর সেতুর ওপয় প্রান্তেই প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় আটকে থাকতে হচ্ছে। এতে কিছুটা ভোগান্তিতে পড়েছেন এই মহাসড়কের যাত্রী ও যানবাহনের শ্রমিকেরা।
এপিক ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই সেতুটির সংস্কার কাজ করছে। নির্মাণকাজের শ্রমিকদের সুপারভাইজার মো. জনি বলেন, সেতুটির উত্তর পাশের ১২টি এক্সপানশন জয়েন্টে স্টিলের পাত বসানো সম্পন্ন হয়েছে। সেতুর এসব সংযোগস্থলগুলোতে ঢালাইয়ের কাজ আজকেই শেষ হবে।
নবীনগরগামী যাত্রীসেবা পরিবহনের চালক লোকমান মিয়া বলেন, রোজার মাস, সামনে ঈদ। এই সময়ে এই মহাসড়কে যাত্রী ও গাড়ির বেশি চাপ থাকে। ২৫ মিনিটের বেশি সময় আটকে থাকার পর ব্রিজ পার হইলাম। গাড়িতে থাকা যাত্রীরা এক মিনিট গাড়ি আটকে থাকলেই আমাগো সঙ্গে রাগারাগি করে।
সেতুর পশ্চিমপ্রান্তে আটকে থাকা ঢাকাগামী সেলফি পরিবহনের বাসের যাত্রী সাইফুল ইসলাম বলেন, তিন দিন পর গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর থেকে ঢাকায় যাচ্ছি। পাটুরিয়া ফেরিঘাট পার হয়ে এই পর্যন্ত আসতে তেমন ভোগান্তি না হলেও এখানে এসে ৩০ মিনিট ধরে বাসেই বসে আছি। এখনো ব্রিজ পারাপার হতে পারি নাই। দ্রুত ব্রিজের কাজ শেষ হলে সকলের জন্য ভালো।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ মানিকগঞ্জের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবদুল কাদের জিলানী বলেন, জাগীর এলাকার সেতুটির উত্তর পাশের ১২টি লেনের এক্সপানশন জয়েন্টে স্টিলের পাত বসানো হয়েছে। আজকে ঢালাইয়ের কাজও শেষ হবে। এই পাঁচ দিনে সেতুটির উত্তর পাশের লেনের কাজ করতে সময় লেগেছে। আর সেতুটির দক্ষিণ পাশের লেনের কাজ করতে আরও আট দিনের মতো লাগবে। সেতু সংস্কার কাজ চলমান থাকা অবস্থায় হাইওয়ে পুলিশকে চিঠি দেওয়া আছে, যাতে যানবাহন ও যাত্রীদের সেতু পারাপার হতে ভোগান্তি কম হয়।
সোহেল হোসেন/আরএআর