মেলেনি সাহায্য, দিশেহারা বাস শ্রমিকরা
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কঠোর লকডাউনের কারণে কর্মহীন থাকায় দিশেহারা চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসচালক, হেলপার ও সুপারভাইজাররা। মানবেতর জীবনযাপন করলেও এখন পর্যন্ত মেলেনি কোনো সাহায্য সহযোগিতা।
সরকার, পরিবহন মালিক, শ্রমিক ইউনিয়ন কেউই পাশে দাঁড়ায়নি এসব শ্রমিকদের পাশে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে নওগাঁ-রাজশাহীগামী বিভিন্ন আন্তঃজেলা ও জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে চলা বাসশ্রমিকদের খবর নেয়নি কেউ।
শনিবার (২৪ এপ্রিল) চাঁপাইনবাবগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে দিয়ে দেখা যায়, বসে-শুয়ে অলস সময় পার করছেন বাসশ্রমিকরা। বাসচালক ও সুপারভাইজাররা জানান, গত বছরের ন্যায় এবার চলা কঠোর লকডাউনেও সাহায্যেরও হাত বাড়ায়নি কেউ। আগামী দিনগুলো কীভাবে পার করব তা ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছি না।
তারা আরও বলেন, কেউ আমাদের খবর নেয় না। জেলার প্রায় ২ হাজার বাসশ্রমিক এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সড়কে পরিবহন চললে পকেটের টাকা আসে, আমাদের ইনকাম হয়। লকডাউনে সড়কে বাসও চলে না, আমাদের রোজগারও হয় না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রহনপুর রুটের এমএন এন্টারপ্রাইজের ড্রাইভার মোস্তাকিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারি নির্দেশে ১১ দিন থেকে বাস চলাচল বন্ধ। সংসার নিয়ে খুব অশান্তির মধ্যে জীবনযাপন করছি। গতবছরও যখন লকডাউন চলছিল, তখন সরকার সহযোগিতা করার কথা জানায়। কিন্তু আমাদের ভাগ্যে কিছুই জোটেনি।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের কাছে অনুরোধ আমাদের বাঁচান। আমাদের জন্য কিছু অনুদান দিয়ে রক্ষা করেন। আমরা না পারি রিকশা-ভ্যান চালাতে। না পারি কারো কাছে হাত পাততে।
২৭ বছর ধরে বাসের সুপারভাইজারের কাজ করেন মো. মিঠুন। ঢাকা পোস্টকে তিনি জানান, কঠোর লকডাউনের মধ্যেও অটোরিকশা করে ৮ জন করে যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। এতে করোনায় প্রভাব পড়বে না? শুধু বাস চালালেই করোনা বাড়বে?
তিনি আরও বলেন, অর্ধেক সিটে যাত্রী নিয়ে চলাচল করার সুযোগটা দিলেও তো আমরা বাঁচতে পারি। কেউ কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করে না।
রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ আন্তঃজেলা এসডি ট্র্যাভেলসের ড্রাইভার মো. বকুল জানান, লকডাউনের সময়ও সরকার, শ্রমিক ইউনিয়ন বা মালিক সমিতি কেউ কোনো সাহায্য করেনি। অনেক চিন্তার মধ্যে দিন পার করেছি। কীভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলব? আমরা বাসচালকরা দিন আনি, দিন খাই। আমাদের জমানো টাকা থাকে না।
জেলা বাসমালিক সমিতির সভাপতি মো. ফিরোজ বলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের জন্য কিছুই করা হয়নি। তবে অনেক বাস মালিক ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজের ড্রাইভার-সুপারভাইজারদের জন্য বেতন ও উপহার হিসেবে খাদ্যসামগ্রী প্রদান করেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক ঢাকা পোস্টকে জানান, আর্থিক সংকটের কারণে বাস শ্রমিকদের জন্য কোনো সাহায্য সহযোগিতা করা হয়নি। তবে জেলা প্রশাসনকে আবেদন করা হয়েছে, বাসশ্রমিকদের জন্য কিছু সাহায্যের ব্যবস্থা করার জন্য।
জাহাঙ্গীর আলম/এমএসআর