সাড়া ফেলেছে সাবেক পুলিশ সদস্যের এক টাকার হোটেল
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে এক টাকার ইফতার সামগ্রীর দোকান খুলেছেন সাবেক পুলিশ সদস্য জুয়েল মিয়া। শুনে অবিশ্বাস্য মনে হলেও উপজেলার ফরিদপুরে গেলে মিলবে স্বল্প মূল্যের এই খাবারের দোকানের। যেখানে এক টাকায় পিঁয়াজু, ডালপুরী, বেগুনী ও খেজুর, ছোলাবুট ও বুন্দিয়াসহ নানা ধরনের ইফতারের আইটেম পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এই ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছে জেলাজুড়ে।
গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে পলাশবাড়ী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম পূর্ব ফরিদপুর। সরেজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা মেলে এই দোকানের। যেখানে টগবগে ফুটন্ত তেলে তৈরি করা হচ্ছে টাটকা পিঁয়াজু, ডালপুরী, বেগুনী। আর এসব তৈরি করছেন জুয়েলের স্ত্রী লিপি বেগম নিজেই। যা বিক্রি হচ্ছে এক টাকায়। শুধু ইফতার সামগ্রীই নয়, অর্ধেক মূল্যে এখানে পাওয়া যায় রুটি, পরোটা, চিকেন সামুচা, চিকেন বিরিয়ানি এবং তন্দুরি চা। এসবের মধ্যে খেজুর ছাড়া সবই নিজ হাতে তৈরি করেন লিপি বেগম।
স্বল্প দাম এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি প্রত্যন্ত গ্রামে হওয়ায় এখানকার মূল ক্রেতা গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষ। স্বল্প মূল্যে এসব ইফতার সামগ্রী কিনতে পেরে খুশি তারা। এছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে এমনকি পাশের জেলা থেকেও শখের বসে খেতে আসেন কেউ কেউ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে এক টাকায় এমন সব মুখরোচক খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন ভোজনবিলাসিরা। স্থানীয়রাই এই হোটেলের নাম দিয়েছেন এক টাকার হোটেল।
দিনাজপুরের ঘোরাঘাট থেকে আসা কলেজপড়ুয়া তিন বন্ধু রাফি, পলাশ ও সঞ্জু বলেন, আমরা ফেসবুকে এই এক টাকার হোটেলের খবর পেয়ে খেতে আসছি। ঘোরাও হলো, কম টাকায় খাওয়াও হলো। খাবারের মান অনেক ভালো এবং সুস্বাদু। আমরা আবার আসবো।
স্থানীয় বাসিন্দা মোবারক হোসেন বলেন, এখানকার যেসব গরিব মানুষ ইফতারের এত আইটেম কিনতো না বা কম কিনতেন, তারা এক টাকায় পেয়ে এখন কিনতে পারছেন। আমরা নিয়মিত এখানে পিঁয়াজু, চপ ইত্যাদি খেয়ে থাকি।
আরও পড়ুন
বনাপুর ইউনিয়নের পূর্ব ফরিদপুর উত্তরপাড়া গ্রামের মতিন মিয়া জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এক টাকার হোটেলে অল্প দামে বিভিন্ন আইটেমের খাবার পাওয়া যায়। গ্রামের মানুষ উপকৃত হচ্ছে। তাছাড়া এখানকার খাবারের মানও বেশ ভালো।
একই গ্রামের শাফিন মিয়া নামে আরেকজন জানান, এক টাকার হোটেল থেকে খাবার সামগ্রী ও ইফতার কিনে থাকে সাধারণত গ্রামের মানুষ। অন্যান্য দোকানে যেখানে ২০-২৫ টাকায় ইফতার পাওয়া যায় না, সেখানে এই হোটেলে এই দামে ভালো ইফতার পাওয়া যায়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই হোটেলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
জুয়েল মিয়ার স্ত্রী লিপি বেগম বলেন, আমার স্বামীর ইচ্ছা পূরণে অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে সব আইটেম আমি নিজেই তৈরি করে থাকি। চেষ্টা করে থাকি টাটকা এবং সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করতে। যাতে মানুষ খেয়ে তৃপ্তি পায়।
দোকানের মালিক সাবেক পুলিশ সদস্য জুয়েল মিয়া বলেন, আমার হোটেলে কোনো কর্মচারী নেই। আমরা স্বামী-স্ত্রীই সব করে থাকি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে সবাই এসব সামগ্রী যাতে কম দামে কিনতে পারে, গরিবরাও যেন এসব খাবার খেতে পেরে এজন্য আমার এই উদ্যোগ।
কী পরিমাণ লাভ হয়- এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি বলেন, লাভ কম হয়, কিন্তু লস হয় না। আমি চাই সেল বেশি হোক। সেল বেশি হলে এক সময় বেশি লাভও হবে।
ব্যক্তিগত কারণে তিন বছর আগে পুলিশ কনস্টেবলের চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে সম্প্রতি এক টাকার খাবারের দোকান শুরু করেছেন জুয়েল মিয়া। এখান থেকে যা আয় হয় তাতেই দুই সন্তানসহ চার সদস্যের সংসার ভালোই চলছে। শুধু রমজান মাস নয়, বছরেই ১২ মাসেই এসব মুখরোচক খাবার পাওয়া যাবে এই এক টাকার হোটেলে।
পাবনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোছা. শাহিনুর বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ইউনিয়নের পূর্ব ফরিদপুর উত্তরপাড়া গ্রামে এক টাকার হোটেলের কথা শুনেছি। যেখানে অল্প দামে খাবার পাওয়া যায়। আরও জেনেছি এক টাকায় বেশ কয়েকটি ইফতার আইটেমও পাওয়া যায়। তবে সরেজমিনে আমার ওই হোটেলে যাওয়া হয়নি। আমি যত দ্রুত সম্ভব ওই হোটেলে যাব।
তিনি বলেন, এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আমার ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ওই উদ্যোক্তাকে যতটা সম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।
আরএআর