সুলতানি স্থাপত্যের ঐতিহ্য বহন করছে ছোট সোনা মসজিদ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নে অবস্থিত ছোট সোনা মসজিদ। মসজিদের প্রধান প্রবেশপথের ওপরে স্থাপিত শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৪৯৩ থেকে ১৫১৯ সালের মধ্যে সুলতান হুসাইন শাহ’র শাসনকালে জনৈক মনসুর ওয়ালী মুহম্মদ বিন আলী নামের একজন ১৪ শতকে এই মসজিদ নির্মাণ করেন। প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড় নগরীর উপকণ্ঠে পিরোজপুর গ্রামে এ স্থাপনাটি নির্মিত হয়েছিল, যা আজকের ছোট সোনা মসজিদ নামে পরিচিত।
প্রধান সড়ক থেকে ৫০-৬০ ফুট দূরেই অবস্থিত সোনা মসজিদ। যার বাঁ দিকে রয়েছে বিশাল আকারের একটি দীঘি। সঙ্গেই রয়েছে পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের দোকান। মসজিদের ফটক পেরিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে দুটি কবর। যার একটিতে শায়িত আছেন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, অপরটিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর নাজমুল হক টুলু। উভয়ই ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শাহাদাতবরণ করেন। মসজিদের বাইরের অংশ লাল টেরাকোটা দিয়ে সাজানো।
নামকরণ
সূর্যের আলোতে দূর থেকে ছোট সোনা মসজিদের রং সোনালি রঙের মনে হয় বলে লোকমুখে তা সোনা মসজিদ নামে পরিচিত। আরেকটি তথ্যমতে জানা যায়, ওয়ালি মোহাম্মদ মূলত দুটি মসজিদ নির্মাণ করেন। তার একটি বর্তমানে ভারতে অবস্থিত, যার আয়তন এই মসজিদ থেকে কিছুটা বেশি হওয়ায় তখনকার মানুষের মুখে মসজিদ দুটি ‘ছোট সোনা মসজিদ’ ও ‘বড় সোনা মসজিদ’ নামে প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠে। তখন থেকেই এই মসজিদের নাম ছোট সোনা মসজিদ।
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, এটি দৈর্ঘ্যে ৮২ ফুট ও প্রস্থে ৫২.৫ ফুট। বাইরে থেকে পাঁচটি গম্বুজ দেখা গেলেও এর মোট ১৫টি গম্বুজ রয়েছে। অভ্যন্তরে স্তম্ভ রয়েছে ৮টি। বড়-ছোট মিলিয়ে মিহরাব আছে ৫টি। মসজিদের দেয়াল ৬ ফুট পুরু এবং এর উপাদানগুলো হচ্ছে-পাথর, ইট, টেরাকোটা ও টাইলস।
আরও জানা যায়, ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে মসজিদের তিনটি গম্বুজ ও পশ্চিম পাশের দেয়ালের কিছু অংশ বিধ্বস্ত হয়। পরে ১৯০০ সালে ব্রিটিশ সরকার গম্বুজ ও দেয়ালটি সংস্কার করে। তবে পশ্চিম পাশের ইটের দেয়ালের বাইরের বেশির ভাগ অংশে পাথর স্থাপন করা হয়নি।
নাটোরের লালপুর থেকে ঘুরতে আসা এক পর্যটক ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে ঘুরাফেরা করলাম। মসজিদের ভেতরে অনেক কিছু দেখলাম। অনেক ভালো লাগলো।
জানা যায়, ছোট সোনা মসজিদে প্রতিদিন দুই শতাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। এ ছাড়া শুক্রবার জুমার নামাজে মুসল্লির সংখ্যা আরও বেশি হয়।
ছোট সোনা মসজিদের ইমাম মো. হিজবুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, যতটুকু জানি এক সময়ের সুলতানি আমলে সোনা মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। সোনাকে পিষে আটার মতো করে গম্বুজগুলোতে লেপন করা হয়েছিল। যার কারণে সোনা মসজিদ নামকরণ করা হয়েছে। এই মসজিদের পিলারগুলো সম্পূর্ণ পাথরের তৈরি। এর চতুর্দিকে বোল্ডার পাথর দ্বারা আচ্ছাদিত, যা রড-সিমেন্ট ছাড়া তৈরি হয়েছে। এই ছোট সোনা মসজিদ দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক ঘুরতে আসেন।
তিনি আরও বলেন, এই মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমের বেতন এখন পর্যন্ত সরকারিকরণ হয়নি। এই বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আপনাদের মাধ্যমে আবেদন করছি। তিনি যেন আমাদের মসজিদের পদগুলোকে সরকারিকরণ করেন। এ ছাড়া পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য কিছু আনসার সদস্য মোতায়ন করা দরকার বলে মনে করছি।
কীভাবে যাবেন
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে ৮০ টাকা ভাড়ায় সিএনজি, অটোরিকশা করে সরাসরি ছোট সোনা মসজিদে যাওয়া যাবে।
এমজেইউ