ডাকে সাড়া না দেওয়া সেই চিকিৎসকের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুসাফির নামে এক শিশু গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে দায়িত্বরত চিকিৎসক শরীফ উর রহমানকে একাধিকবার ডাকতে গিয়েছিলেন শিশুটির স্বজন, নার্সসহ অন্যান্যরা। কিন্তু এরপরেও শরীফ উর রহমান ওই শিশুর চিকিৎসা সেবা করতে আসেননি। হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরেও চিকিৎসা না পেয়ে অসুস্থ্য অবস্থায় শিশু মুসাফিরের মৃত্যু হয়। ডাক্তার শরীফ উর রহমানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক হাবিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত মুসাফির (৩ মাস) শরীয়তপুর পৌরসভার চরপালং গ্রামের রাজিব শেখ ও রুবিনা বেগম দম্পত্তির ছোট ছেলে। গতকাল বুধবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যা পৌনে ৮ টায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে সে প্রাণ হারিয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার শরীফ উর রহমানের নামে একাধিকবার দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ৩ মাস আগে তার বেতনও আটকে রেখেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গতকাল তার দায়িত্বে অবহেলার কারণে এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনা নিয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন হাসপাতালটির সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. হোসনে আরা। সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মিতু আক্তার ও সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আতিকুর রহমান। তদন্ত কমিটি আগামি ৩ কার্যদিবসের মধ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন পেশ করবেন।
বিষয়টি নিয়ে সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক হাবিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেডিকেল অফিসার শরীফ উর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন কিছু নয়। এর আগে দায়িত্ব অবহেলার কারণে আমি তার ২ মাসের বেতন আটকে রেখেছিলাম। পরবর্তীতে তিনি দায়িত্বে অবহেলা করবেন না বলে অঙ্গীকার করলে তার বেতন দেওয়া হয়েছে। গতকাল অসুস্থ ওই শিশুটির চিকিৎসার জন্য দায়িত্বরত নার্স তাকে ডেকেছিল, কিন্তু তিনি ডাকে সাড়া দেননি। এরপর শিশুটি মারা গেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। এরপর তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
প্রসঙ্গত, মুসাফিরকে ঠান্ডা ও পেটে ব্যথা জনিত সমস্যা নিয়ে বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সন্ধ্যার দিকে হটাৎ করেই মুসাফির অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তার স্বজনরা নার্স ডাকতে গেলে নার্সের রুম থেকে আয়া পাঠানো হয়। আয়া এসে মুসাফিরকে অক্সিজেন লাগিয়ে দিয়ে যায়। আয়া কেন অক্সিজেন লাগাবে বিষয়টি শিশুটির মা জানতে চাইলে তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন আয়া। এরপর নার্স এসে শিশুটিকে দেখলে নার্স রোগীর স্বজনদের ডাক্তার ডাকার পরামর্শ দেন। তার পরামর্শ অনুযায়ী রোগীর স্বজনরা দায়িত্বরত চিকিৎসক শরীফ উর রহমানকে একাধিকরা ডাকলেও তিনি আসেননি। এদিকে রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়ে গেলে নার্স প্রথমে ওয়ার্ডবয় ও আয়াকে পাঠান ডাক্তার ডাকতে। এরপরেও ডাক্তার না আসলে নার্স নিজেই যান ডাক্তারকে ডেকে আনতে। কিন্তু ডাক্তার নার্সকে পরামর্শ দেন অক্সিজেন খুলে তার কাছে নিয়ে আসতে। রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়ে গেছে বলে নার্স অক্সিজেন খুলতে অপারগতা প্রকাশ করলেও চিকিৎসক শরীফ উর রহমান শিশু মুসাফিরকে শেষ পর্যন্ত দেখতে যাননি। এরপর শিশু মুসাফির হাসপাতালেই মারা যায়।
সাইফ রুদাদ/এএএ