অটোভ্যান ও নগদ টাকা পেলেন খুন হওয়া নিরাপত্তাকর্মীর বাবা
মো. ফেরদৌস আলী। ১৮ বছর বয়সী এই যুবক স্থানীয় একটি ফ্যাক্টরিতে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি করতেন। গত ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় কারখানাতে ডিউটি করার জন্য এসে আর বাসায় ফেরেনি। এরপর তার পরিবার শাহজাদপুর থানায় একটি নিখোঁজের ডায়েরি করেন।
এরপর শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় উক্ত ঘটনার ক্লু উদঘাটন করেন এবং মো. মামুন হোসেন (৩০) নামের একজনকে পুলিশ হেফাজতে নেন। পরবর্তীতে মামুনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আর কে টেক্সটাইল মিলসের মধ্য থেকে দুই ফুট মাটির নিচে পুঁতে রাখা অবস্থায় ফেরদৌসের মরদেহ উদ্ধার করেন এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে মামুন হোসেন জানায়, মামুন ওইদিন রড চুরি করার জন্য আর.কে টেক্সটাইল মিলসে আসে। রড চুরি করার সময় ফেরদৌস দেখে ফেলায় তার মাথায় লোহার রেঞ্জ দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে এবং মরদেহ মাটির নিচে পুঁতে রাখে।
শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফেরদৌস তার অভাবী বাবার প্রথম সন্তান ছিল। তার বাবা দিনমজুরের কাজ করেন এবং দিন এনে দিন খান। বয়সের ভারে ও অসুস্থতার কারণে ফেরদৌসের বাবা তেমন কাজ করতে পারেন না। ফেরদৌসের মরদেহ উদ্ধারের পর তা বহন এবং কাফনের কাপড় কিনতে পারছিলেন না তার বাবা। পরবর্তীতে সেসময় আমার ডাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন স্থানীয় এক ব্যক্তি এবং শাহজাদপুর থানা পুলিশ।
তিনি আরও বলেন, জানাজা শেষে মরদেহ কবরে নিয়ে যাওয়ার সময় গন্ধের কারণে যখন লোক পাওয়া যাচ্ছিল না তখন আমি নিজেই তার মরদেহ কাঁধে তুলে নিই। এ সময় সঙ্গে ছিল শাহজাদপুর থানা পুলিশের এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে ফেরদৌসের পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়ে। বয়স ও অসুস্থতার কারণে ফেরদৌসের বাবা নুয়ে পড়ায় তার পরিবারকে অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছিল। বিষয়টি জানার পর খুব খারাপ লাগছিল। শান্তি পাচ্ছিলাম না। এরপর আমি এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তার বাবাকে একটি অটোভ্যান এবং রমজান মাস উপলক্ষ্যে কিছু খাবার কিনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। তখন আমরা পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই ব্যক্তির কাছে বিষয়টি খুলে বললে তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি জানালে এক ব্যক্তি রমজান উপলক্ষ্যে খাবার কেনার জন্য তার পরিবারকে নগদ ১০ হাজার টাকা এবং আরও এক ব্যক্তি (পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক) তার বাবার জন্য একটি ব্যাটারিচালিত অটোভ্যানের ব্যবস্থা করে দেন। এরপর গতকাল সন্ধ্যায় নিহত ফেরদৌসের পরিবারকে উক্ত নগদ দশ হাজার টাকা এবং অটোভ্যানটি তুলে দেওয়া হয়।
শুভ কুমার ঘোষ/এমজেইউ