ধর্ষণের মামলা না নেওয়া ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন
নাটোরের বড়াইগ্রামে দশম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ছয়জন মিলে গণধর্ষণ ও ভিডিও ধারণের ঘটনায় মামলা না নেওয়ার অভিযোগে থানার ওসির বিরুদ্ধে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা পুলিশ।
জেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিং শেষে গতকাল রোববার (১০ মার্চ) দুপুরে পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ সুপার জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) শরিফুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বড়াইগ্রাম সার্কেল) শরিফ আল রাজীব, ডিস্ট্রিক্ট ইনটেলিজেন্ট অফিসার (ডিআইও ওয়ান) জালাল উদ্দিন।
ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ জানুয়ারি দশম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে পারভেজ হোসেন ও তার ৫ বন্ধু সাগর, মোহন, প্রসনজিৎ, জিত ও কৃষ্ণ পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গণধর্ষণ করে। পরে ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়াসহ কাউকে ঘটনাটি জানালে হত্যার হুমকি দিয়ে অভিযুক্তরা চলে যায়। পরবর্তী সময়ে স্থানীয়রা মেয়েটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দেয়। পরে গুরুতর অসুস্থ স্কুলছাত্রীকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে বড়াইগ্রাম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল আজম খান মামলা না নিয়ে তাদের পাঠিয়ে দেন জোয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান আলী আকবরের কাছে। ওসির কথামতো সেখানে কয়েক দফায় মিমাংসার চেষ্টাও করা হয়। এরই মধ্যে মিমাংসার আশ্বাস, ওসি ও প্রভাবশালীদের দৌরাত্মে দিশেহারা হয়ে পড়ে নির্যাতিতার পরিবার। এর ভেতর কেটে যায় কয়েক মাস। মামলা না নিয়ে উল্টো মিমাংসায় ওসির অপতৎপরতার কথা উঠে আসে নির্যাতিতার স্বজনদের কথায়। দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও কোনো সুরাহা না পাওয়ায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি আদালতের শরণাপন্ন হন ভুক্তভোগীরা। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআইকে) তদন্ত করতে নির্দেশনা প্রদান করেন।
ভুক্তভোগী স্কুল ছাত্রীর বাবা বলেন, থানায় গিয়ে আমার মেয়ের ওপর নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ জানাতে গেলে ওসি মামলা না নিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে যেতে বলে। চেয়ারম্যানও কোনো সমাধান দিতে না পারলে কোর্টে গিয়ে মামলা করি।
ওই ছাত্রীর দুলাভাই ইউসুফ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে মামলা করতে গেলে ওসি বলেন এ বিষয়ে থানায় কোনো মামলা হবে না। দ্বিতীয় বার আবার গেলে চেয়ারম্যানের কাছে যেতে বলেন।
মামলা না নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বড়াইগ্রাম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল আজম খান বলেন, মামলা না করতে চাইলে কিভাবে মামলা নেব। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্ত কমিটি তদন্ত করে দেখবেন।
এ ব্যাপারে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন বলেন, গত বুধবার আদালতের নির্দেশনার কপি হাতে পেয়েছি। ইতোমধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করব।
পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান, ওসির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে সেটি তদন্ত করার জন্য আমরা কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
গোলাম রাব্বানী/আরকে