ছোটবেলা থেকেই সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন ছিল : শবনম ফারিয়া
অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া বলেছেন, সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্নটা অনেক দিনের। ছোটবেলা থেকেই বলতাম যে আমি সাংবাদিক হতে চাই। ফলে আমি সাংবাদিকতায় মাস্টার্স সম্পন্ন করছি। একটি জাতীয় দৈনিকেও লেখালেখি করছি। সাংবাদিকতা আমার কাছে ভালো লাগে। আমার কাছে সাংবাদিকতা ও অভিনয় দুটো আলাদা জিনিস মনে হয়। দুটো আলাদাভাবে এনজয় করি। আর লেখালেখিটা আমার নিজের। আমি চাইলেই একটা জিনিস ক্রিয়েট করতে পারছি। কিন্তু অভিনয়ে আরেকজনের ডিরেকশনে কাজ করছি। যখন আমি লিখছি, তখন আমি আমরাটাকে প্রোপার প্রকাশ করতে পারছি। লেখালেখিটা আমি এনজয় করি।
বুধবার (৬ মার্চ) দুপুরে খুলনার একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিরাপত্তা বিষয়ক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। ‘সাবধানে অনলাইন-এ’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে শতাধিক অংশগ্রহণকারী নিয়ে ‘অনলাইন সেইফটি সামিট – খুলনা’ শিরোনামে ভিন্নধর্মী এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশে অনলাইন নিরাপত্তা বিষয়ে যুবসমাজের মাঝে সচেতনতা বিস্তারের লক্ষ্যে টিকটক ও জাগো ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
অভিনয়ন জগতে আসার স্মৃতিচারণ তুলে শবনম ফারিয়া বলেন, শুরুর দিকে অভিনয়ে আসার বিষয়ে পরিবার রাজি ছিল না। তবে আমার অভিনয় দেখার পর আমার বাবা বলেছিল আমি যদি ওকে (শবনম ফারিয়া) অভিনয় করতে না দেই তাহলে একটা মেধা নষ্ট হবে। আমি চাই না ট্যালেন্টটা নষ্ট হোক। আমার জন্য আসলে এর থেকে বড় পাওয়া পুরো জীবনে আর নেই। এটিই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। বাবা-মায়েরা সবচেয়ে বড় সমালোচক। তারাই আমাদের খুব ভালো চেনেন এবং বোঝাতে পারেন। আমার বাবা বেঁচে নেই এখন, ২০১৭ সালে মারা গেছেন। কিন্তু উনি বেঁচে থাকতে এরকম একটা বড় কথা আমাকে বলে গেছেন এটা আমার সারাজীবনের জন্য বড় পাওয়া। পুরো জার্নির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্ট এটাই।
তিনি বলেন, আমি বড় বা ছোট পর্দা বুঝি না। আমি অভিনয় করি। আমাকে ভালো চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ যেখানে দেওয়া হবে। সেটা বড় পর্দা হোক, ছোট পর্দা হোক, দেশে বা বিদেশে হোক আমার কাছে অভিনয়, চরিত্রটা এবং আমি কতটুকু অভিনয় করার সুযোগ পাচ্ছি সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এর বাইরে আসলে কোনো কিছুই গুরুত্বপূর্ণ না।
শবনম ফারিয়া বলেন, আমি সাহিত্যের ছাত্রী। নাটক সাহিত্যেরই একটা পার্ট। নাটক আমরা বিনোদনের জন্যই বানাচ্ছি। বিনোদনটা যদি একটু অসুস্থ বিনোদন হয়ে যায়, তখন একটু বিব্রতকর হয়ে যায়। নাটক হচ্ছে ড্রইংরুম এন্টারটেইনমেন্ট। আমরা পুরো পরিবারকে নিয়ে ড্রইংরুমে নাটক দেখি। মাঝে মাঝে কিছু জিনিস একটু কঠিন হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, দর্শক যেটা চায়, নির্মাতারা সেটাই বানায়। আমরা যারা অভিনয় করি খুব বেশি বলার সুযোগ থাকে না। অনেকেরই মূল পেশা অভিনয়। তখন না চাইলেও অভিনয় করতে হয়। আমি অভিনয় কম করেও টিকে থাকতে পারছি। সবার ক্ষেত্রে এটি সম্ভব নয়। দিনশেষে যারা ক্রিয়েটিভ কাজ করে তারা ক্রিয়েটিভিটিই দেখাতে চায়। আমরা আমাদের ট্যালেন্ট দেখাতে চাই। যখন সুযোগ থাকে দেখানোর চেষ্টা করি। দর্শকদেরই দায়িত্ব তারা কোন কাজটি নেবে।
সেমিনারের উদ্বোধনী অতিথি ছিলেন খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল.এ) মো. আতিকুল ইসলাম।
সেমিনারে প্যানেল বক্তা ছিলেন খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম, খুলনা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. শেখ সাদিয়া মনোয়ারা উষা।
প্রকল্পের অনলাইন ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে ‘অনলাইন সেফটি আড্ডা’ কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের #ShabdhaneOnline হ্যাশট্যাগটি ব্যবহার করে ইতিবাচক কনটেন্ট তৈরি করে নিজ নিজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করার আহ্বান জানানো হয়। এটি মূলত ছিল একটি অনলাইন কনটেন্ট তৈরির প্রতিযোগিতা।
এছাড়াও ক্যাম্পেইনের অংশ হিসাবে জাগো ফাউন্ডেশন তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেইজ থেকে বিপুল পরিমাণ সচেতনতামুলক কন্টেন্ট প্রকাশ করে।
সেমিনারে জানানো হয়, খুলনা বিভাগের মোট ১০টি জেলায় কার্যক্রম পরিচালনার মধ্য দিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হয় উক্ত প্রকল্পের। মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম হিসেবে এসব জেলায় ‘অনলাইন সেফটি আড্ডা’ নামক ১টি দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করা হয়, এতে অংশগ্রহণ করেন ১৬-২৫ বছর বয়সী স্থানীয় তরুণ-তরুণীরা। প্রকল্পের খুলনা পর্বের সমাপ্তি অনুষ্ঠান হিসেবে এই বিভাগীয় সেমিনার আয়োজন করা হয়। যেখানে যুব সমাজের পাশাপাশি আরও উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিভাগের নানা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাগণ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, অভিনেত্রী এবং জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিরা।
ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বর্তমানে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে বহুল ব্যবহৃত। এই মাধ্যমগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অধিকাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরাই অসচেতন ও অসতর্ক, যা তাদের নিজের অনলাইন নিরাপত্তার জন্য হুমকি ডেকে আনার পাশাপাশি অন্যান্য ব্যবহারকারীদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন আচরণের কারণে অনেকেই অনিরাপদ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে থাকেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে ওঠার যাত্রায় শামিল হওয়ার জন্যে যুবসমাজের মাঝে ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার এখনই সময়। আর এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আয়োজন করা হয়েছে এই বিভাগীয় সেমিনারটি।
মোহাম্মদ মিলন/এএএ