চায়ের দোকানদার বিজয়দের দখলে বরগুনা পাসপোর্ট অফিস
বরগুনা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে বেড়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। অফিসের সামনেই বিভিন্ন চায়ের দোকানে ‘বিকল্প অফিস’ খুলে বসেছেন দালালরা। পাসপোর্ট করতে এসে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কেউ অফিস থেকে বের হলেই ‘সকল সমস্যার সমাধান’ করছেন এসব দালাল। অনেকে আবার অফিসে যাওয়ার আগেই পড়ছেন দালালদের হাতে।
পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা থেকে শুরু করে নানা কাজে প্রতিদিন শতাধিক মানুষ বরগুনা পাসপোর্ট অফিসে আসেন। এদের অনেকের অভিযোগ, সঠিক নিয়ম মেনে আবেদন করলেও পাসপোর্ট হাতে পেতে পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনা ও ভোগান্তিতে।
আঞ্চলিক এ পাসপোর্ট অফিস এলাকায় একটা কথা বেশ চালু হয়ে গেছে, তা হলো— দালালদের মাধ্যমে কাজ না করলে কখনোই দ্রুত পাসপোর্ট পাওয়া যায় না। এমন কথা জানতে পেরে অনেক সেবাগ্রহীতা বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা সহজ-সরল মানুষ শুরুতেই জিম্মি হন দালালচক্রের হাতে। নির্ধারিত ফির বাইরে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা ঘুস দিয়ে পাসপোর্ট করাতে হয় তাদের।
এমন কিছু অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে ঢাকা পোস্টের বরগুনা প্রতিনিধি পরিচয় গোপন করে পাসপোর্টের আবেদন করতে গিয়ে অবস্থান নেন পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে। এ সময় চায়ের দোকানে বসে থাকা পাসপোর্ট করতে আসা বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে আবেদনের প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলতেই চায়ের দোকানের মালিক বিজয় নামে এক দালালচক্রের সদস্য বলেন, মাধ্যম ছাড়া দ্রুত পাসপোর্ট করতে পারবেন না। আমার লোক আছে, অফিস খরচ দিলে আমি আপনার কাজ করে দিতে পারব। এমনকি আপনার পুলিশ ভেরিফিকেশনও আমরা করে দেব। আপনি শুধু ব্যাংকের নির্ধারিত টাকা এবং কাগজপত্র জমা দেবেন। এরপর একদিন অফিসে এসে ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আইরিশ দিলেই হবে। বাকি সব কাজ আমাদের। আপনি শুধু এসে পাসপোর্ট নিয়ে যাবেন।
আরও পড়ুন
ভোগান্তি ছাড়া দ্রুত সময়ে পাসপোর্ট করতে কেমন খরচ হবে জানতে চাইলে দালালচক্রের সদস্য বিজয় বলেন, আবেদন করতে যেখানে যে খরচ তা আপনার হাতেই পরিশোধ করবেন। শুধু অফিস খরচের জন্য দেড় থেকে দুই হাজার টাকা আমার কাছে জমা দেবেন। আপনার কাজ হয়ে যাবে।
নিয়ম মেনে পাসপোর্ট করতে আবেদন করেছেন বরগুনার পাথরঘাটা থেকে আসা তানিমুল ইসলাম। তবে তার বাবার নামে ভুল হওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়েন তিনি। অফিস থেকে বের হয়ে দালালচক্রের সদস্য বিজয়কে জানান সমস্যার কথা। হাতে থাকা সকল কাগজপত্র দেখে সময় একটু বেশি প্রয়োজন হলেও সমাধান করে দিতে পারবেন বলে জানান বিজয়। তবে এর জন্য তাকে ১১ হাজার টাকা দিতে হবে বলে জানান।
এ বিষয়ে তানিমুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি নিয়ম মেনেই কাজ করতে চাই। দালালের মাধ্যমে কাজ করলে দ্রুত সমাধান হলেও আমি দালাল বিশ্বাস করি না।
বরগুনা সদর উপজেলার সাত নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়ন থেকে পাসপোর্ট করতে আসা আব্দুস সালাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কম্পিউটার দোকান থেকে আবেদন করেছি। তারাই সব কাজ করে দিয়েছে। পাসপোর্ট পেতে আমার কোনো ভোগান্তি হয়নি। সব মিলিয়ে ৭ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছি। একদিন মাত্র এসে ছবি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়েছি।
তবে কোন দোকান থেকে তার পাসপোর্টের কাজ করেছেন তা বলতে রাজি হননি আব্দুস সালাম।
আরও পড়ুন
বরগুনা পৌরসভার কালিবাড়ি এলাকার মোর্শেদ সুজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাসপোর্ট করতে মাধ্যম ধরে আবেদন করলে কোনো ভোগান্তি হয় না। আর নিয়ম অনুযায়ী করতে গেলে পাসপোর্ট পাওয়া গেলেও নানা অজুহাতে হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়। ফলে বাধ্য হয়ে দালাল ধরতে হয়।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মুনতাকীম মো. ইব্রাহিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বরগুনায় আমি নতুন যোগদান করেছি। ইতোমধ্যে জনসাধারণের ভোগান্তি কমাতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। বিশেষ করে অফিসে কর্মরতদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অফিসের বাইরে কেউ যদি কোনো অনিয়ম করে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন
সার্বিক বিষয়ে কথা হয় বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাসপোর্ট অফিসের দালালদের দৌরাত্ম্য রোধে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এরপরও যারা এ কাজে যুক্ত রয়েছে, তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এমজেইউ