‘বউ-শাশুড়ি বইঘর’ গড়তে ২০০ বই নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে নববধূ
প্রযুক্তির প্রভাবে বইপ্রেমী মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমছে। বইয়ের জায়গা দখল করে নিয়েছে ডিজিটাল ডিভাইস। এমনি সেই বইও মানুষ এখন মোবাইল কিংবা ট্যাব ব্যবহার করে পড়ছে। তবে এর ব্যতিক্রম ঘটনাও রয়েছে। তেমনি একজন মেহেরুন নেছা মুমু। যিনি বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে প্রায় ২০০ বই নিয়ে গেছেন। তার ইচ্ছে শ্বশুরবাড়িতে একটি পাঠাগার গড়ার। শাশুড়ির প্রতি ভালোবাসা স্বরূপ সেই পাঠাগারের নাম দিতে চান ‘বউ-শাশুড়ি বইঘর’।
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে এমন ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নববধূ মেহেরুন নেছা মুমু বাবার বাড়ি থেকে বই নিয়ে উপজেলার চর ফলকন গ্রামের শ্বশুরবাড়িতে আসেন। বই ছাড়াও বাহারি পদের দেশীয় পিঠাও নিয়ে আসেন
মুমু চর ফলকন গ্রামের মহিউদ্দিনের মেয়ে। তিনি ইডেন কলেজের ইংরেজি তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। তার বিয়ে হয় একই গ্রামের মাকছুদুর রহমানের ছেলে তরুণ আইনজীবী এমরান হোসেন নিখিলের সঙ্গে। শনিবার মুমুর বউভাতের আয়োজন করা হয়। বউভাত অনুষ্ঠানের একদিন পরেই শ্বশুর বাড়িতে বই নিয়ে আসেন তিনি।
মুমুর পরিবার ও স্বজনরা জানায়, মুমু বইপ্রেমী। বই সংগ্রহ ও পড়া তার প্রিয় শখ। শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাওয়া সব বই তার পড়া শেষ। তবে অল্পকিছু বই মুমু জন্মদিনসহ বিভিন্ন দিবসে উপহার হিসেবে পেয়েছেন। বাকি বইগুলো বিভিন্ন সময় টাকা জমিয়ে কিনেছিলেন তিনি। এরমধ্যে বেশিরভাগ বই হুমায়ুন আহমেদের।
এদিকে নিখিল তার স্ত্রী মুমুর আনা বইয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। এতে অনেকে প্রশংসাসূচক মন্তব্য করেন।
মুমুর মা ছালেহা বেগম জানান, তার মেয়ের প্রিয় শখ বই পড়া। শাড়ি-চুড়ি, কসমেটিকসে তার তেমন আগ্রহ নেই। ছোট বেলা থেকেই টাকা জমিয়ে বই কেনা ছিল তার শখ। বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার সময় তার সংগ্রহে থাকা সকল বই সঙ্গে নিয়ে যান।
মুমুর শাশুড়ি কামরুন নাহার বলেন, আমার মেয়ে নেই, দুই ছেলে। ছোট ছেলে বুয়েটে পড়ে। বাড়িতে আমি একা। বড় ছেলের সুবাদে একটা মেয়ে পেয়েছি। আমার এ মেয়ে আসার সময় অনেক বই নিয়ে এসেছে। এতে আমি খুবই খুশি হয়েছি। এখন থেকে আমিও টাকা জমিয়ে বউমাকে বই উপহার দেব।
নববধূ মেহেরুন নেছা মুমু বলেন, বই কেনা ও পড়া আমার শখ। বই উপহার পেতে খুব ভালো লাগে। বইগুলো বাবার বাড়িতে রেখে আসতে মন চাচ্ছিলো না। এজন্য সঙ্গে করে নিয়ে আসলাম। স্বপ্ন দেখছি শ্বশুর বাড়িতে ‘বউ-শাশুড়ির বইঘর’ নামে একটি পাঠাগার গড়ব। এলাকার সব বউ-শাশুড়িরা এখানে এসে বই পড়বে।
হাসান মাহমুদ শাকিল/এএএ