নিলাম জটিলতায় নিঃশেষ হচ্ছে কোটি কোটি টাকার গাড়ি-নৌযান-যন্ত্রাংশ
বরগুনায় বছরের পর বছর পড়ে আছে বিভিন্ন দপ্তরের কোটি কোটি টাকা মূল্যের পুরনো গাড়ি, নৌযানসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশ। নিলাম জটিলতায় পড়ে থেকে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। এদিকে সরকারি সম্পদ এভাবে নষ্ট হওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ।
সরেজমিনে বরগুনার সদর রোড সংলগ্ন জেলা প্রশাসকের নৌযান ঘাট ঘুরে দেখা যায়, বহু বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে কোটি কোটি টাকার সমমূল্যের স্পিড বোট। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে নিলাম না হওয়ায় ঘাটে পড়ে থাকা এসব নৌযান এখন ধ্বংসের পথে। একই অবস্থা দেখা যায় বরগুনা পৌরসভায়। যথা সময়ে নিলাম না হওয়ায় পড়ে পড়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি।
জেলার বিভিন্ন দপ্তরেও রয়েছে এমন চিত্র। যথাসময়ে ফেলে রাখা এসব গাড়ি, নৌযানসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশের নিলাম না হওয়ায় রাষ্ট্রের অর্থে ক্রয় করা কোটি কোটি টাকা সমমূল্যের সম্পদ ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। এতে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ।
বরগুনার সচেতন নাগরিক তারিক বিন আনসারী সুমন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিভিন্ন দপ্তরের গাড়ি ও নৌযান যেগুলো সামান্য ত্রুটির কারণে অকেজো হয়ে পড়ে আছে সেগুলো মেরামতের মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। অথবা সরকারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিলামে বিক্রি করা যেতে পারে। তবে নিলাম প্রক্রিয়ায় যদি দীর্ঘসূত্রিতা হয় তাহলে যত দিন বাড়ে ততই এর বিক্রয় মূল্য কমে যাবে। এ কারণে রাষ্ট্রকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে এসব গাড়ি ও নৌযানগুলোকে ব্যবহার উপযোগী করতে হবে অথবা বিক্রি করে দিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থ জমা করতে হবে।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক একেএম নাজমুল আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের অ্যাম্বুলেন্স ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নিলাম করতে একটি কমিটি করা আছে। স্থানীয়ভাবে যেগুলো নিলাম করা যায় তা আমরা প্রতিবছরই করি। এছাড়া বড় যন্ত্রাংশ নিলাম করতে সরকার থেকে আলাদা কমিটি করা আছে। এগুলো নিলামের জন্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তিনি ওই কমিটির সভাপতি থাকেন সেখানে আবেদন করতে হয়। তবে এটি বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করতে কালক্ষেপন হয়।
বরগুনা পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পৌরসভার নিলাম প্রক্রিয়ায় আমরা দেখেছি অকেজো এসব গাড়ি নিলাম করতে প্রথমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে লিখতে হয়। বিআরটিএ থেকে আমাদের অনুমতির প্রয়োজন হয়। পরবর্তী সময়ে চূড়ান্ত অনুমতি পেলে আমরা নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করি। তবে অফিসিয়াল নিয়ম অনুযায়ী এ প্রক্রিয়া সহজ না হওয়ায় এসব গাড়ি ফেলে রাখা হয়। আমি সচেতন নাগরিক হিসেবে মনে করি এ দীর্ঘসূত্রিতার কারণে সরকার প্রকৃত মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অকেজো বা পরিত্যক্ত ঘোষণা করার জন্য জেলা পর্যায়ে কমিটি আছে। কোন দপ্তরে যদি এ ধরনের কিছু আমাদের নজরে আসে সেক্ষেত্রে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করি। বরগুনাতে এরকম কিছু থাকলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে কাজ করব। যাতে সরকারের ওই সম্পদগুলো নষ্ট না হয়ে যায়।
এ বিষয়ে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিভিন্ন দপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী একেক নিয়মে এসব পুরনো গাড়ি ও যন্ত্রাংশ নিলাম দেওয়ার পদ্ধতি আছে। তবে প্রয়োজন হলে সংসদে বিষয়টি উপস্থাপন করব।
আরকে