সিরাজগঞ্জে ট্রিপল মার্ডার মামলায় যুবকের মৃত্যুদণ্ড
সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে আলোচিত ট্রিপল মার্ডার (এক নারী ও দুই শিশু) মামলায় আইয়ুব আলী (৩০) সাগর নামে এক যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে।
রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফজলে খোদা মো. নাজির আসামির উপস্থিতিতে এই রায় দেন। আইয়ুব আলী সাগর উল্লাপাড়া উপজেলার নন্দিগাঁতী গ্রামের মৃত মকসেদ মোল্লার ছেলে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আব্দুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই মামলার আসামি আইয়ুব আলী সাগর জেল হাজতে আছেন। আজ রায় ঘোষণার সময় তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। এরপর তাকে আবার জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলা ও রায়ের সংক্ষিপ্ত নির্দেশ সূত্রে জানা যায়, হত্যার শিকার রওশনারা খাতুন (৩০) তার দুই শিশু পুত্র জিহাদ হোসেন (১০) ও মাহিনকে (৩) নিয়ে বেলকুচি থানাধীন মরুপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। তার স্বামী সুলতান আলী তার খোঁজ খবর নিতো না। তাই রওশনারা তাঁত ফ্যাক্টরিতে সুতার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তার সৎ ভাগিনা আসামি আইয়ুব আলী ঋণগ্রস্ত থাকায় ঘটনার দুই দিন পূর্বে রওশনারার বাড়িতে এসে তাদের ব্যবহৃত ট্রাঙ্ক ও জিনিসপত্র দেখে ধারণা করেন তাতে অনেক টাকা-পয়সা আছে।
সাগর সেই টাকা-পয়সা চুরির পরিকল্পনা করে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের ২৮ তারিখ রাতে রওশনারার বাড়িতে বেড়াতে যান এবং রাতে খাওয়া-দাওয়া করে ঘরে শুয়ে পড়েন। তিনি পরিকল্পনা অনুযায়ী গভীর রাতে উঠে ট্রাঙ্কের তালা খুলে টাকা বের করার চেষ্টা করলে শব্দে রওশনারার ঘুম ভেঙে যায়। তখন আসামি আইয়ুব আলী মশলা বাটার শিল দিয়ে রওশনারার মাথায় আঘাত করলে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপর আসামি সাগর রওশনারাকে গলা টিপে হত্যা করেন। এ সময় রওশনারার ৩ বছর বয়সী ছেলে মাহিন জেগে উঠে কান্নাকাটি শুরু করলে আসামি তাকেও গলা টিপে হত্যা করে। এরপর রওশনারার অপর ছেলে জিহাদের ঘুম ভেঙে গেলে আসামি সাগর তাকেও গলা টিপে হত্যা করে ঘরের দরজা বাইরে থেকে শিকল আটকে চলে যান।
ওই বাড়িতে আর কোনো লোকজন না থাকায় বিষয়টি কেউ জানতেও পারে না। রওশনারা পরপর দুই দিন তাঁত ফ্যাক্টরিতে কাজে না যাওয়ায় তাঁত ফ্যাক্টরির মালিক কুদ্দুস রওশনারা কেন কাজে আসলো না এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে থাকেন। রওশনারার বোন লিলি খাতুনের কাছে জানতে চায়। লিলি খাতুন রওশনারার বাড়িতে এসে ঘরের শিকল খুলে ভেতরে ঢুকে তিনজনের মরদেহ ঘরের মেঝেতে অর্ধগলিত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।
এরপর ওই দিনই রওশনারার ভাই মো. নুরুজ্জামাল বাদী হয়ে অক্টোবরের ১ তারিখে বেলকুচি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর আসামি মো. আইয়ুব আলী সাগর গ্রেপ্তার হলে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণের জন্য মোট ১৩ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেন। সাক্ষ্য শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জেলা ও দায়রা জজ আজ আসামী মো. আইয়ুব আলী সাগরের উপস্থিতিতে আজ এই রায় ঘোষণা করেন এবং আসামিকে কারাগারে প্রেরণ করেন। আসামি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
শুভ কুমার ঘোষ/আরকে