পঞ্চগড়ে টিউলিপ গার্ডেন দেখতে পর্যটকদের ভিড়
ছুটির দিনে টিউলিপ দেখতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে দেশের উত্তরের পর্যটন জেলা পঞ্চগড়ে। শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টিউলিপ গ্রাম দর্জিপাড়ায় অসংখ্য পর্যটকের সমাগম ঘটে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা এসব পর্যটকদের চোখে-মুখে দেখা গেছে উচ্ছ্বাস।
বিকেলে তেঁতুলিয়া উপজেলার সীমান্তঘেষা দর্জিপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য দর্শনার্থীদের সমাগমে ভরে উঠেছে টিউলিপ গ্রামটি। মাত্র ৮০ শতক জমিতে গড়ে উঠা বাগানে আগমন ঘটেছে হাজার হাজার পর্যটকের। এসব পর্যটক ৫০ টাকার টিকিট কেটে দেখেছেন টিউলিপের নজরকাড়া রূপ-সৌন্দর্য। কেউ এসেছেন ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে, কেউ আবার পরিবার নিয়ে। সবার মুখেই যেন টিউলিপের হাসি দেখা গেছে।
বাগানে প্রবেশ করেই তারা পরিবারের সঙ্গে ছবি তুলে কাটিয়েছেন ঘণ্টা পর ঘণ্টা। কেউ ফেসবুকে লাইভে গিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে টিউলিপের বাহারি রূপের কথা তুলে ধরেন। ভিনদেশি এ টিউলিপকে ঘিরে পর্যটনে যেমন যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা, তেমনি ভিনদেশি এ ফুল চাষে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে নতুন অর্থনীতির।
জানা যায়, নেদারল্যান্ড, কানাডা, কাশ্মীর, তুরস্কের মতো বিশ্বের শীত প্রধান দেশে চাষ হয় উচ্চমূল্যের এমন ফুল। পৃথিবীতে দেড় শতাধিকের বেশি প্রজাতি রয়েছে টিউলিপের।
প্রান্তিক পর্যায়ের ১৬ জন নারী নিয়ে ১৯ প্রজাতির নজরকাড়া টিউলিপ চাষ করছেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভলভমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)। এবার নিয়ে তৃতীয়বারের মতো উচ্চমূল্যের ফুল চাষ করছেন তারা। এ ফুলের চাষের মাধ্যমে একটি অজপাড়াকে গড়ে তুলেছেন একখণ্ড নেদারল্যান্ডকে। কেউ বলছেন টিউলিপের কানাডা আবার কেউ বলছেন টিউলিপের দ্বীপ হয়ে উঠেছে উত্তরের এই অঞ্চলটি। এ ফুল চাষে পর্যটনে ভূমিকার পাশাপাশি প্রান্তিক নারী চাষিদের সংসারে ঘুরছে অর্থনীতির নতুন চাকা।
টিউলিপ দেখতে আসা বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী জানান, আমরা টিউলিপ চাষের বিষয়টি বিভিন্ন মিডিয়ায় জেনেছি। ফুলটি ভিনদেশি। তেঁতুলিয়ার সীমান্তবর্তী দর্জিপাড়া গ্রামে এ ফুলের আবাদের কথা জেনে ছুটে এসেছি পরিবার নিয়ে। খুব মুগ্ধ হয়েছি। টিকিটের দামটা বেশি মনে হচ্ছে। কম করলে ভালো হতো। তবে ভালো লেগেছে।
আরও কয়েকজন পর্যটক জানান, টিউলিপের সৌন্দর্যে মোহিত হয়েছি। আসলে এর সৌন্দর্যের অনুভূতি প্রকাশ করার মতো ভাষা পাচ্ছি না। অসাধারণ ও সুশোভিত ফুল টিউলিপ। সত্যিই খুব মুগ্ধ হয়েছি। আমাদের মতো প্রত্যেক দর্শনার্থীদের মুগ্ধতায় ভরিয়ে দেবে ভিনদেশি এই নজরকাড়া টিউলিপ।
বেশ কয়েকজন সরকারের কয়েকটি দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জানান, প্রান্তিক নারীদের ইউএসডিওর এ ইকো ট্যুরিজমের উদ্যোগ আমাদের পর্যটকদের মুগ্ধ করছে। সারাবছরই যদি এখানে ফুল চাষ করা যায় তাহলে ভালো হবে।
সুমি আক্তার, মোর্শেদাসহ নারী কৃষাণীরা জানান, তৃতীয়বারের মতো আমরা শীতপ্রধান দেশের উচ্চমূল্যের ফুল আবাদ করছি। ইউএসডিওর উদ্যোগে নেদারল্যান্ডের রাজকীয় টিউলিপ চাষে প্রথমবার থেকেই বেশ সাড়া পেয়েছি। এ ফুল এভাবে পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে কল্পনাও করিনি। এ বছর আমরা বৈশ্বিক সমস্যার কারণে ফুলের কম আবাদ করতে পেরেছি। তারও পরেও প্রতিদিন, বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটছে। তারা টিউলিপের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য ও হাসিতে মুগ্ধ হচ্ছেন। আবাদ করে সার্থক হয়েছি বলে আনন্দ লাগছে।
ইএসডিওর নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান জানান, বাংলাদেশের খামার পর্যায়ে আমরা তৃতীয়বারের মতো টিউলিপ চাষ করেছি। ইকো ট্যুরিজম গড়ে তোলার লক্ষ্যে তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়া গ্রামে টিউলিপ চাষ করা হচ্ছে। এবার ফুল দেরিতে লাগানো হলেও ফুলগুলো কিন্তু অনেক দিন থাকবে। আশা করছি আগামী দুই মাস এ টিউলিপের রাজসিক সৌন্দর্য ও সৌরভ ছড়াবে সারা দেশে। আমরা আগামী মৌসুমে সারা বছরই ইকো ট্যুরিজমের মাধ্যমে উচ্চমূল্যের ফুল, ফল চাষ করবো। যাতে সারা বছরই পর্যটকের সমাগম ঘটে এখানে। এ টিউলিপ চাষে ব্যাপক পর্যটকের আগমনে আমাদের বিস্মিত করে।
এসকে দোয়েল/পিএইচ