মেয়েকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করে দুশ্চিন্তায় বাবা-মা
মাহবুবা মেহেনাজ। তার মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছাটা দশম শ্রেণি থেকেই। কলেজে ওঠার পর ইচ্ছাটা আরও প্রবল হয়। কলেজে পড়ার সময় থেকেই একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি মেডিকেলে ভর্তির কিছু প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। তখন থেকেই সাদা অ্যাপ্রোনের সঙ্গে স্টেথোস্কোপ পরা নিজেকে কল্পনা করতেন।
মেহেনাজ এ বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে জাতীয় মেধায় ১০৩৪তম স্থান লাভ করেছেন। তিনি তার পছন্দের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু অর্থের অভাবে সব কিছু যেন থমকে গেছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার চিকিৎসক হওয়া।
মাহবুবা মেহেনাজ চাটখিল উপজেলার কড়িহাটি ছালেমিয়া ফাজিল মাদ্রাসার গণিতের সহকারী শিক্ষক কামরুল হাসানের চার মেয়ের মধ্যে বড়। মেহেনাজের মা মারজাহান বেগম একজন গৃহিণী। মেহেনাজ কড়িহাটি ছালেমিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ২০২১ সালে জিপিএ ফাইভ পেয়ে দাখিল পাস করেন। পরে স্থানীয় চাটখিল মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২৩ সালে জিপিএ ফাইভসহ উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন।
মাহবুবা মেহেনাজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাবা মাদ্রাসাশিক্ষক, মা গৃহিণী। ফলে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজেকে লড়ে যেতে হয়েছে। সারাদিন কলেজ করে এসে আবার টিউশনি করানোর পর খাওয়ার সময় থাকত না। মা তখন নিজ হাতে ভাতের প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে খাইয়ে দিতেন। আমার জীবনের কঠিন সময়গুলোতে আমার মা আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আমায় এগিয়ে দিয়েছেন। আমি যখনই হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতাম, আমার মা আমায় আবার উঠে দাঁড় করিয়েছেন। তবে মেডিকেল পরীক্ষার ফলাফলের পর মায়ের মুখের হাসিটা দেখে অতীতের সব কষ্টগুলা ভুলে গেছি। বাবাও শেষ দিকে অনেক সাপোর্ট দিয়েছিলেন। মাদ্রাসা থেকে কলেজে আসার পর কলেজের স্যারেরা অনেক বেশি সাহস দিয়েছেন। স্যারদের কথা শুনলে নিজের ভেতর একটা আলাদা সাহস পেতাম।
মাহবুবা মেহেনাজের বাবা কামরুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাদ্রাসাশিক্ষক হিসেবে যা বেতন পেতাম তা দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হতো। আমার মেয়ে টিউশনি করে নিজের খরচ চালাতো। আমার স্ত্রী ঘরের কাজের পাশাপাশি সেলাই মেশিনের কিছু কাজ করতো। সেই আয় আমাদের পারিবারিক কাজে লাগতো। মেয়ের স্বপ্ন মেডিকেলে পড়ার। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেছি। তবে সামনে অনেক খরচ। নতুন জায়গায় টিউশনি পেতে সময় লাগবে। তার মেডিকেলে পড়াশোনা চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
মাহবুবা মেহেনাজের মা মারজাহান বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার মেয়ে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে মহান আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া। তার মধ্যে স্বপ্ন জয়ের তীব্র ইচ্ছা ছিল। আমরা আর্থিকভাবে সকল চাহিদা পূরণ করতে না পারলেও মানসিকভাবে তার পাশে ছিলাম। আমাদের মতো সংগ্রামী পরিবার থেকে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও অর্থের অভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কষ্টের। অর্থাভাবে আজ স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে যাচ্ছে।
চাটখিল মহিলা ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যাক্ষ ফারুক সিদ্দিকী ফরহাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০২৩ সালের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাহবুবা মেহেনাজ অন্যতম। তার মধ্যে পড়ার আগ্রহ এবং নতুন কিছু জানার আগ্রহ বেশি। নতুন কিছু শেখার আগ্রহ থেকে তার ইচ্ছা ছিল মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। একজন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী হয়েও সে নিজেকে প্রমাণ করেছে। আমরা তার পাশে আছি। আমাদের জায়গা থেকে আমরা চেষ্টা করবো পাশে দাঁড়ানোর। যদি বিত্তবান কেউ এগিয়ে আসতো তাহলে তার চলার পথ সহজ হতো।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আকিব ওসমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অদম্য মেধাবীদের পক্ষে সব সময় উপজেলা প্রশাসন আছে। আমি নিজের পক্ষ থেকে কিছু সম্ভব হলে করব। পাশাপাশি আমাদের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলব।
হাসিব আল আমিন/আরএআর