‘ভালোবাসার’ এক গোলাপ ১০০ টাকা!
ঋতুচক্রের ঘুর্ণিপাকে বছর ঘুরে আবার এসেছে সেই সময়, যখন প্রকৃতি নিজেই যেন হয়ে ওঠে ভালোবাসায় আকুল। গাছে গাছে ফুল ফুটেছে, বাতাসে বইছে বসন্তের আগমনী গান। কাল ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, একই সঙ্গে ফাগুনের আগুন দিনের শুরু।
বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসে প্রিয় মানুষকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবেন তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে মোটামুটি সব বয়সের মানুষেরাই। ভালোবাসার সেই ফুলে এবার লেগেছে মূল্যস্ফীতির বাতাস! ফুলের রাজা গোলাপের দাম ঠেকেছে ১০০ টাকায়।
রাজবাড়ীতে তিন-চার দিনের ব্যবধানে গোলাপ ফুলের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। ১৫ থেকে ২০ টাকার গোলাপ ফুল এখন মান ভেদে ৫০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চার দিনের ব্যবধানে এত দাম বেড়ে যাওয়ায় অবাক হয়েছেন ফুল কিনতে আসা ‘ভালোবাসার’ ফেরিওয়ালারা।
ফুল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস ও সরস্বতী পূজা একই দিনে হওয়ায় এবার চাহিদা বেড়েছে গোলাপ ফুলের। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে দাম।
বিথী ফুল ঘরের মালিক মো. মনি বলেন, ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসব উপলক্ষ্যে গোলাপের চাহিদা বেশি থাকে। ক্রেতারা তাদের ভালোবাসার মানুষের জন্য গোলাপটাই বেশি নেন।
স্থানীয়ভাবে রাজবাড়ীতে কোনো ফুল চাষ না হওয়ায় যশোর, কালিগঞ্জসহ কয়েকটি স্থান থেকে ফুল এনেছেন ব্যবসায়ীরা। ফুলের দাম ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবার খুচরা পর্যায়ে ফুলের দাম বেড়েছে।
ভালোবাসা দিবসের আগের দিন মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজবাড়ী শহরের বড়পুল ও পান্না চত্বর এলাকার রাজবাড়ী ফুল সেন্টার, নুপুর ফুল সেন্টার, রাজবাড়ী ফুলঘর, বিথী ফুলঘরসহ বেশ কয়েকটি ফুলের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি ফুলের দোকানেই রয়েছে ক্রেতাদের ভিড়। বিক্রেতারাও বিভিন্ন ধরনের গোলাপ ফুল মজুত করেছেন। সব দোকানে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত প্রতিটি গোলাপ ফুল বিক্রি হচ্ছে।
এসব দোকানে তিন ধরনের গোলাপ বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে একটি দেশি, বাকি দুটি চায়না। চায়না হলুদ গোলাপ চার দিন আগে বিক্রি হয়েছে ১৫-২০ টাকা, এখন তা ১০০ টাকা। চায়না সাদা গোলাপ বিক্রি হয়েছে ২০ টাকা, এখন তা ৬০ থেকে ১০০ টাকা। দেশি গোলাপ আগে ছিল ১০ থেকে ১৫ টাকা, এখন ৫০-৭০ টাকা। এছাড়া হাইব্রিড জাতের গোলাপ ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, ভুট্টা কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসি ও গাঁদাসহ নানা জাতের ফুল রয়েছে দোকানগুলোতে। সেগুলোর দামও বেড়েছে। তবে চাহিদা তুলনামূলক কম হওয়ায় সেগুলোর দামের বিষয়ে কারও অভিযোগ নেই।
গোলাপ ফুল কিনতে আসা সুজন বিষ্ণু বলেন, কিছুদিন আগে যে গোলাপ ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা দরে কিনেছি সেই গোলাপ আজ ১০০ টাকা দাম চাচ্ছেন বিক্রেতারা। এছাড়া ছোট সাইজেরগুলো ৫০ থেকে ৭০ টাকা দাম চাচ্ছে। শুধু একদিনের জন্য গোলাপ ফুলের দাম বেড়ে যাওয়াটা অযৌক্তিক।
আরেক ক্রেতা শারমিন ও সুজনা ইসলাম বলেন, বন্ধুর জন্য ও পরিবারের বাবা-মায়ের জন্য ফুল কিনতে এসেছি। একটু বড় সাইজের গোলাপ ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ও ছোট সাইজেরগুলো ৫০ থেকে ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ভেবেছিলাম অনেকগুলো কিনব, কিন্তু দাম বেশি থাকায় ২টা নিয়েছি। এছাড়া আজ ক্রাউনের দামও অনেক বেশি। কয়েকদিন আগে ১০০ টাকায় প্লাস্টিকের ফুলের ক্রাউন পাওয়া যেত। এখন ২০০ টাকার নিচে ক্রাউন পাওয়া যাচ্ছে না।
দোকানে তিন ধরনের গোলাপ বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে একটি দেশি, বাকি দুটি চায়না। চায়না হলুদ গোলাপ চার দিন আগে বিক্রি হয়েছে ১৫-২০ টাকা, এখন তা ১০০ টাকা। চায়না সাদা গোলাপ বিক্রি হয়েছে ২০ টাকা, এখন তা ৬০ থেকে ১০০ টাকা। দেশি গোলাপ আগে ছিল ১০ থেকে ১৫ টাকা, এখন ৫০-৭০ টাকা। এছাড়া হাইব্রিড জাতের গোলাপ ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, ভুট্টা কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসি ও গাঁদাসহ নানা জাতের ফুল রয়েছে দোকানগুলোতে। সেগুলোর দামও বেড়েছে।
ভালোবাসার মানুষের জন্য রাজবাড়ী ফুল সেন্টারে ফুল কিনতে এসেছেন শরীফুল। তিনি একটি ক্রাউন ও গোলাপ নিয়েছেন। তিনি বলেন, আগামীকাল বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুন। তাই ভালোবাসার মানুষের জন্য ফুল নিয়েছে। কিন্তু ফুলের দাম অত্যাধিক বেশি। একটি হলুদ রঙের গোলাপ নিলাম ৯০ টাকা দিয়ে ও মাথায় পরার ক্রাউন নিয়েছি ২০০ টাকা দিয়ে। সবকিছুরই দাম বেশি। তারপরও ভালোবাসা দিবসের দিনে ভালোবাসার মানুষকে ফুল না দিলে চলে না।
পান্না চত্বর এলাকার রাজবাড়ী ফুল সেন্টারের মালিক কালাম মন্ডল বলেন, একই দিনে ভালোবাসা দিবস, সরস্বতী পূজা হওয়ায় ফুলের দাম কিছুটা বেশি। ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসব উপলক্ষ্যে লাখ টাকার ফুল মজুত করেছি। রাজবাড়ীতে ফুল চাষ না হওয়ায় বাইরে থেকে আনতে হয়। যে কারণে পরিবহন খরচও বেশি হয়। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবার বাজারদর বেশি। যে কারণে একটু চড়া দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
বিথী ফুল ঘরের মালিক মো. মনি বলেন, সারা বছর তেমন বেচাবিক্রি না হলেও ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসব উপলক্ষ্যে গোলাপের চাহিদা বেশি থাকে। ক্রেতারা তাদের ভালোবাসার মানুষের জন্য গোলাপটাই বেশি নেন। এ কারণে সারা বাংলাদেশেই গোলাপের চাহিদা বেশি থাকে। তাই দামও তুলনামূলক বেশি থাকে।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/আরএআর