ঠাকুরগাঁওয়ে ঘন কুয়াশায় নষ্ট হচ্ছে বীজতলা, বিপাকে কৃষক
মাঘের শেষ হতে চলেছে তবুও ধু ধু করছে ফসলের মাঠ। অথচ এমন সময় কচি ধানে ভরে থাকার কথা কৃষকের ক্ষেত। কিন্তু এবার ঘন কুয়াশায় বীজতলা নষ্ট হয়ে দিশেহারা ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা।
তীব্র কুয়াশায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ জেলার বোরো ধানের বীজতলা। সময়মতো ধান রোপণ না করতে পারায় বৈশাখের বৈরী আবহাওয়ায় নষ্ট হতে পারে ধান। এছাড়া দেরিতে ফসল কাটলে বাজারে ভালো দাম না পাওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়।
এদিকে যদিও বোরো মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ১৩ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও টানা শৈত্যপ্রবাহে ঘন কুয়াশা আর রোদ না থাকায় রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে বীজতলা। কোথাও হলুদ বর্ণ, কোথাও শুকিয়ে লাল হয়ে গেছে ধানের চারা। বাধ্য হয়ে আবারও নতুন করে বীজতলা তৈরি করছেন অনেকে। এতে খরচ বাড়ছে কৃষকের।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মিলনপুর গ্রামের কৃষক দানেশ বলেন, বীজতলায় ৫০ কেজি ধান লাগানো হয়েছে। তবে ২০ কেজির মতো ধানের চারা কুয়াশায় নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আবার ধান ফেলতে হবে অথবা বীজ কিনতে হবে আর কী।
একই এলাকার মানিক বলেন, বীজ ধানের দাম তো বেশি। দুবার করে বিছন (বীজতলা) ফেললে খরচও বাড়বে। কিন্তু কারও কাছ থেকে যে কিনে নেব তাও সম্ভব না। সবারই বীজ নষ্ট হয়েছে। চারা নষ্ট হয়ে জমিতে সময়মতো রোপণ করতে না পারায় ফসল দেরিতে ফলবে। কালবৈশাখী ঝড়ের আগে ঘরে তুলতে না পারলে গত বছরের মতো আবারও মাঠেই সব ধান নষ্ট হবে।
আগের বছরে এমন ক্ষতির শিকার হন আশরাফুল। তিনি বলেন, আগের বারও বৃষ্টিতে পানি জমে ৪ বিঘা জমির ধান কাটতে খরচ বেশি লেগেছিল। এবারও সময়মতো ধান লাগাতে পারিনি। বীজতলায় ওষুধ দিলাম, তবে কোনো লাভ হয়নি। এছাড়া আগেভাগে বাজারে তুলতে না পারলে ভালো দাম পাওয়া যায় না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, কোল্ড ইনজুরির কারণে বীজতলা কিছুটা নষ্ট হয়েছে। এরপরও যে পরিমাণ চারা আছে তাতে বোরো মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রায় কোনো প্রভাব পড়বে না। রোদ ওঠায় এখন আর বীজতলা নষ্ট হবে না। এছাড়া হাইব্রিডসহ বিলম্বিত জাতের ধান লাগানোর পরামর্শ দেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর কবির জানান, বর্তমানে বোরো ধানের আবাদ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬২ হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় দুই লাখ ৮০ হাজার ৬৩২ মেট্রিক টন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় মোট পাঁচ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে, যা গত বছরে ছিল ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল দুই লাখ ৬৭ হাজার ৯৪০ মেট্রিক টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে এরই মধ্যে কৃষকদের বিভিন্ন তথ্য প্রদানসহ সহযোগিতা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত শীতের কারণে বেশ কিছু এলাকায় সামান্য কোল্ড ইনজুরিতে বোরো বীজতলার ক্ষতির খবর পাওয়া গেলেও সেটি বড় সমস্যা নয়।
ক্ষেত কৃষকদের প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দেওয়ার প্রশংসা করে তিনি জানান, বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমনের মতো বোরো ধানেরও বাম্পার ফলন হবে এবং লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন।
আরিফ হাসান/আরকে