সুবর্ণচরে মা-মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, এক আসামির আদালতে স্বীকারোক্তি
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মা-মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার আসামি মেহেরাজ উদ্দিন (৪৮) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া ইসলাম ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে সন্ধ্যায় তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
কারাগারে প্রেরণকৃত মেহেরাজ উদ্দিন সুবর্ণচর উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নের চর কাজী মোখলেছ গ্রামের নুরুল আমিনের ছেলে।
চরজব্বর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, আসামি মেহেরাজ দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়। পরে মামলার প্রধান আসামি আবুল খায়ের ওরফে মুন্সি মেম্বর ও মেহরাজ উদ্দিনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে নির্যাতিত শিশু আদালতে ২২ ধারায় ঘটনার বিবরণ দিয়ে জবানবন্দি প্রদান করে।
তিনি আরও বলেন, মামলার প্রধান আসামি আবুল খায়ের ওরফে মুন্সি মেম্বরকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে শুনানি শেষে আদেশের দিন ধার্য করেন বিচারক। পরে বিচারকের নির্দেশে দুই আসামিকে জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘জবানবন্দিতে আসামি মেহরাজ জানিয়েছেন, এ মামলার অপর দুই আসামি আবুল খায়ের মুন্সি ও মো. হারুনের প্রস্তাবে রাজি হয়ে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন রাতে তিনি ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামীর অনুপস্থিতে চুরি করতে বসতঘরে সিঁধ কেটে ঢোকেন। এরপর তিনি ঘরের দরজা খুলে দিলে মুন্সি ও হারুন ভেতরে ঢোকে। এক পর্যায়ে মুন্সি ও হারুন দুজন মিলে পালাক্রমে ওই নারীকে ধর্ষণ করে। এ সময় মেহরাজ পাশের কক্ষে থাকা ওই নারীর ১২ বছরের শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করেন। পরে তারা স্বর্ণালংকার ও টাকা নিয়ে তিনজন ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।’
প্রসঙ্গত, সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ২টার দিকে চরওয়াপদা ইউনিয়নে চরকাজী মোখলেছ গ্রামের একটি বাড়িতে সংঘবদ্ধভাবে গৃহবধূকে ও তার মেয়েকে ধর্ষণ করে। এ সময় ঘর থেকে দুটি নাকফুল, কানের দুল এবং নগদ ১৭ হাজার ২২৫ টাকা লুট করে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগীর দিনমজুর স্বামী কাজের জন্য ওই রাতে বাইরে থাকায় তিনি তার তিন সন্তানদের নিয়ে বাড়িতে একা ছিলেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই ধর্ষণের পরিকল্পনা সাজান আসামিরা।
সুবর্ণচর উপজেলাটি গণধর্ষণের জন্য দেশব্যাপী বারবার আলোচনায় আসছে। এর আগে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের দিন নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় এক গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস ওই দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় ১৬ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই সঙ্গে তাদের অর্থদণ্ডও করা হয়।
হাসিব আল আমিন/আরকে