সুবর্ণচরে মা-মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ঘরের সিঁধ কেটে চুরি করতে ঢুকে মা ও মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য আবুল খায়ের মুন্সিকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে সদর উপজেলার কাদির হানিফ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন (প্রশাসন ও অর্থ) ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গ্রেপ্তারের পর তাকে সদর থেকে চরজব্বার থানায় আনা হয়েছে। অপর দুই আসামিকে গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।
এর আগে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী (৩০) বাদী হয়ে গ্রেপ্তারকৃত সাবেক ইউপি সদস্য আবুল খায়ের মুন্সিকে প্রধান আসামি, আরও একজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পরপর বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে আবুল খায়ের মুন্সিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার বাদীর অভিযোগ, রাতে হঠাৎ তার বসতঘরে আলো জ্বলে উঠলে তার ঘুম ভেঙে যায়। এ সময় তার মুখ চেপে ধরে ওড়না দিয়ে মুখ, হাত-পা বেঁধে ফেলে মুন্সি মেম্বার ও তার এক সহযোগী। পরে তারা তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় অপর একজন পাশের কক্ষে গিয়ে তার বড় মেয়েকে ধর্ষণ করে। ঘটনার পর তারা বেরিয়ে যাওয়ার সময় স্বর্ণ ও নগদ টাকা নিয়ে যায়।
এদিকে সংগঠনবিরোধী কাজে জড়িত হওয়ায় সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আবুল খায়ের মুন্সি মেম্বারের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হানিফ চৌধুরী। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ব্যক্তিগত কাজে দেশের বাইরে রয়েছেন। সংগঠনের অন্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা হয়েছে। যেহেতু মুন্সি মেম্বার সংগঠনবিরোধী কাজ করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে সেহেতু আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম থেকে তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সংগঠন থেকে তা কার্যকর করা হবে।
তবে আবুল খায়ের মুন্সির ভাগনে মো. দুলাল উদ্দিন কিরণ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার মামার বয়স প্রায় ৭০ বছরের উপরে। তিনি অনেক অসুস্থ। তার অপারেশন হয়েছে। তার মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়। এখন আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না সত্য ঘটনা কী। তবে সত্য গোপন থাকে না, একদিন প্রকাশ হবেই।
প্রসঙ্গত, সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ২টার দিকে চরওয়াপদা ইউনিয়নে চরকাজী মোখলেছ গ্রামের একটি নতুন বাড়িতে চোর দল সংঘবদ্ধভাবে ওই গৃহবধূ (৩০) ও তার মেয়েকে (১২) ধর্ষণ করে। এ সময় ঘর থেকে দুটি নাকফুল, কানের দুল এবং নগদ ১৭ হাজার ২২৫ টাকা লুট করে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে হাতিয়া থেকে এসে চরকাজী মোখলেছ গ্রামে নতুন বাড়ি করেন একজন দিনমজুর। ওই বাড়িতে তিনি স্ত্রী ও তিন মেয়েসহ বসবাস করতেন। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে গেলে ২-৩ দিন বাড়ির বাইরে থাকতেন তিনি। গত দুই দিন আগে কাজের সন্ধানে তিনি বাড়ির বাইরে যান। এ সময় বাড়িতে ওই গৃহবধূ তিন মেয়েকে নিয়ে ছিলেন। গতকাল রাত ২টার দিকে ঘরের সিঁধ কেটে ভেতরে প্রবেশ করে এক চোর। পরে সে ঘরের দরজা খুলে দিলে আরও দুইজন ভেতরে ঢোকে। এরপর দুইজন ওই গৃহবধূকে এবং একজন তার মেয়েকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে ওই গৃহবধূ ও মেয়ের হাত-পা, মুখ বেঁধে ঘরে থাকা স্বর্ণ ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। পরে ওই গৃহবধূর শিশু সন্তানদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে তাদের বাঁধন খুলে দেন। বিষয়টি চরজব্বার থানায় অবগত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
নির্যাতনের শিকার ওই নারীর স্বামী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি দিনমজুর। কাজের জন্য একেক দিন একেক এলাকায় থাকি। গতকাল আমি বাড়িতে ছিলাম না। গভীর রাতে তিনজনের সংঘবদ্ধ দল সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে আমার স্ত্রী ও বড় মেয়েকে ধর্ষণ করে। ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় স্ত্রী ও মেয়ের নাকফুল-কানের দুলসহ নগদ ১৭ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। আমি তাদের শাস্তি চাই।
চরজব্বার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, খবর পেয়ে রাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পোঁছায়। মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত পুলিশ ওই স্থানে ছিল। সকালে ভুক্তভোগীদের থানায় আনা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা ও পরীক্ষার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অপরাধীদের ছাড় দেওয়া হবে না। এ ঘটনায় আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে।
উল্লেখ্য, সুবর্ণচর উপজেলাটি ধর্ষণের জন্য দেশব্যাপী বারবার আলোচনায় আসছে। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের দিন নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় এক গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস ওই ধর্ষণ মামলায় ১৬ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে তাদের অর্থদণ্ডও করা হয়।
হাসিব আল আমিন/এমজেইউ