দালালদের দখলে জয়পুরহাট বিআরটিএ
সুষ্ঠু সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনা, পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা এবং সড়ক নিরাপত্তা বিধানকল্পে গঠিত হয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। মোটরযান নিবন্ধন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মোটরযানের ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন ও রুট পারমিট দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব সেবা দিতে গিয়ে জয়পুরহাট বিআরটিএ অফিস দালালদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে বসেছে।
এতে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেবাপ্রার্থীরা। দালালদের সিন্ডিকেটে জিম্মি হয়ে পড়েছেন তারা। এই সুযোগে সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ওই দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালালরা।
জয়পুরহাট বিআরটিএ অফিসে দালালদের কার্যক্রম নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছেন ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদক। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিআরটিএ জয়পুরহাট সার্কেল অফিসের ভেতরের বিভিন্ন কক্ষে ৫ থেকে ৬ জন বাইরের ব্যক্তি প্রতিনিয়ত বসেন। তাদের জন্য আলাদা আলাদা কক্ষ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাইরে থেকে প্রায় ৩০ জনের মতো দালাল এই অফিসে কাজ করেন। এর মধ্যে ৫ থেকে ৭ জন দালালের অফিস রয়েছে। আর অন্যরা সোর্স মাধ্যমে গ্রাহক খোঁজেন। দালালদের আবার শ্রেণিও রয়েছে। প্রথম শ্রেণির দালালদের মধ্যে ঠিকাদার, কাজি, শোরুমের সাবেক ম্যানেজার, ব্যবসায়ীসহ কয়েকজন রয়েছেন।
আর দ্বিতীয় শ্রেণির দালালরা বাইরে থেকে কাজ এনে অফিসে সেরে চলে যান। এছাড়া তৃতীয় শ্রেণির দালালরা অফিস এলাকাতেই সেবাপ্রার্থীদের খোঁজ করেন। ফাইল ঠিক করার জন্য দালালদের রীতিমতো রেট করে দিয়েছে বিআরটিএ অফিস। প্রতিটি মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশনের জন্য ৮০০ টাকা ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ২০০ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আর পাস করার পর ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা নেওয়া হয়। দালালদের কাছ থেকে এই টাকা নিয়ে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভাগ করে নেন।
বিআরটিএ অফিস সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন শেষে শুধু কারের জন্য ৫১৮ টাকা ও কার-মোটরসাইকেলের জন্য ৭৪৮ টাকা পরিশোধ করতে হবে। দক্ষতা যাচাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীকে স্মার্ট কার্ডের জন্য ১০ বছর মেয়াদের অপেশাদার লাইসেন্সের জন্য ৪ হাজার ৪৯৭ টাকা ও ৫ বছরের পেশাদার লাইসেন্সের জন্য ২ হাজার ৭৭২ টাকা এবং ডাক বিভাগের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্সের পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত ৬০ টাকা প্রদান করতে হবে। মোটরসাইকেল নিবন্ধনে ০ সিসি থেকে ৫০ সিসির জন্য ৯ হাজার ৯৪১ টাকা, আর কিস্তিতে নিবন্ধন করলে এই টাকার সঙ্গে আরও ৪ হাজার ৬০০ টাকা যোগ করতে হবে। ৫১ সিসি থেকে ১২৫ সিসির জন্য ১০ হাজার ৪৪১ টাকা ও কিস্তিতে নিবন্ধন করলে আরও ৯ হাজার ২০০ টাকা যোগ করতে হবে। আবার ১২৬ সিসি থেকে ১৬৫ সিসির মোটরসাইকেলের জন্য কিস্তি ছাড়া ১১ হাজার ৭৬৪ টাকা দিতে হবে। আর কিস্তিতে নিলে এর সঙ্গে আরও ৯ হাজার ২০০ টাকা যোগ করতে হবে।
দালালদের কাছ থেকে বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিটি মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশনের জন্য ৮০০ টাকা ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ২০০ টাকা নেন। আর পাস করার পর নেন ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা।
অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নে মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে হলে ৪ হাজার ২১২ টাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিন পরে প্রতি বছর ৫১৮ টাকা জরিমানাসহ জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিআরটিএ অফিসে আবেদন করতে হয়। এছাড়া পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সধারীদেরকে পুনরায় একটি ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিনের মধ্যে হলে ২ হাজার ৪৮৭ টাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিন পরে প্রতি বছর ৫১৮টাকা জরিমানসহ জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিআরটিএ অফিসে আবেদন করতে হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিআরটিএর জয়পুরহাট সার্কেল অফিসে ২২৩টি মোটরসাইকেল নিবন্ধনের আবেদন পড়েছে। গড়ে দৈনিক ৭ দশমিক ৪৩টি আবেদন পড়েছে। আর ডাইভিং লাইসেন্সের আবেদন পড়েছে ৪৪০টি। গড়ে দৈনিক আবেদন পড়েছে ১৪ দশমিক ৬৭টি। আর ওই মাসে লাইসেন্স পেয়েছেন ২১৭ জন। এর মধ্যে ৬৬টি পেশাদার ও ১৬১টি অপেশাদার।
বিআরটিএ জয়পুরহাট সার্কেল, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ও ভূমি অফিস একই এলাকায় পাশাপাশি হওয়ায় দালালরা ওসব দপ্তরেরও কাজ করেন। সেজন্য দালাল ধরতে ওই এলাকায় গত ২০২১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর অভিযান পরিচালনা করেছিল র্যাব-৫। সেসময় ১৪ জনকে আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তিনজনকে জরিমানাসহ কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। অন্য ১১ জনকে জরিমানা আদায় করে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপরও এই দপ্তরগুলোতে উৎপাত কমেনি দালালদের।
আরও পড়ুন
দালাল ছাড়া যেন কাজই হয় না বিআরটিএতে। স্বাভাবিক নিয়মে ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন করলে মাসের পর মাস ঘুরতে হয়। কয়েক বছরেও মেলে না ড্রাইভিং লাইসেন্স। ফলে বিভিন্ন মাধ্যম (দালাল) ধরতে হয় লাইসেন্স প্রত্যাশীদের। গুনতে হয় অতিরিক্ত মোটা অঙ্কের টাকা।
ড্রাইভিং লাইসেন্স ২০১৯ সালের শেষের দিকে নবায়ন করতে দিয়েছিলেন সদরের চকমোহন গ্রামের বাসচালক হান্নান মণ্ডল। আর ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছেন গত এক সপ্তাহ আগে।
হান্নান মণ্ডল বলেন, আমি ঢাকায় থাকতাম। সেখান থেকে এসে সারাদিন ওই অফিসের লোকদের পিছে পিছে ঘুরতাম। কেউ সাড়া দেয় না। আবার নতুন করে তারিখ দেয়, আবার ওই তারিখে আসি। কাগজ না থাকায় রাস্তায় ধরতো। বিআরটিএ থেকে বলে সব কাগজ ঠিক করে আনো। সেসব করে নিয়ে গেলে বলে একটি স্লিপ দেয়। কিন্তু কোনো লাইসেন্স দেয় না। অনেকদিন গাড়ি চালিয়ে রাগে চাকরি ছেড়ে দিয়ে এসে চার থেকে পাঁচ মাস ঘুরে ঘুরে এই কয়েকদিন আগে লাইসেন্স পাইছি।
তিনি বলেন, আমি কোনো মাধ্যম ধরে যাইনি। ফি, ডোপ টেস্ট, আই টেস্ট করতে খরচ হইছে। তাছাড়া ওই অফিসের কি যেন ফর্মুলা পার করতে আবার ৩ হাজার ৬০০ টাকা দিতে হয়েছে। তারপরে এই লাইসেন্স পাইছি। এটা যদি আমি দালাল ধরে করতে যেতাম তাহলে হয়তো এতো সময় লাগতো না, আর হয়রানিও হতে হতো না। তবে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাগতো।
এখনো ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে পাননি। তাই পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেন কালাই উপজেলার এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, আমি ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের আবেদন করেছি। সেটি নেওয়ার জন্য এসেছিলাম, কিন্তু পাইনি। জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি বলেন, এখানে দালাল ছাড়া কোনো কাজ হয় না। এই অফিসের ২৩ নম্বর রুমে ওই দালাল বসেন। আপনি বেশি টাকাসহ তাকে কাজ দেন। খুব সুন্দর করে কাজ করে দেবে। নবায়নে ৪ হাজার ৩০০ টাকার মতো ফি পড়েছিল। আর ওরায় (দালাল) কিছু টাকা নিয়েছিল। এই সব মিলে সাড়ে ৫ হাজারের মতো পড়েছিল।
তার অভিযোগ, দালাল ছাড়া কোনো কাজ হয় না। দালাল ছাড়া করলে বিভিন্ন ভুল ধরে। এটা হয়নি, ওটা হয়নি। আমি ফরম পূরণ করে নিয়ে আসছি। তখন বলে মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়ে আসেন। পরে টাকা নেওয়ার পর ওসব কিছু লাগেনি। এখন এখানে বলে কি হবে? বলে কোনো লাভ নেই। বিড়ম্বনা ছাড়া কিছুই নেই। খালি হয়রানি, প্রতিবাদ করলে আর দেবে না। আমরা অসহায়।
ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে বিআরটিএতে এসেছিলেন আমদই এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিক। ঝামেলা ছাড়াই ফিঙ্গার দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি শো-রুমের মাধ্যমে মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন করতে দিয়েছি। ১৫০ সিসি পালসার গাড়ি। ১৬ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এর মধ্যে আমার কিছু কাগজের জন্য ২ হাজার আর ১৪ হাজার গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের জন্য।
দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য ভিসা দুই মাস আগে পেয়েছেন সদরের হিচমী এলাকার আজিজুর রহমান। তিনি ড্রাইভিং লাইসেন্সের কারণে যেতে পারছেন না। স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স না পেয়ে অভিযোগ জানাতে বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শকের কক্ষে ৪ ফেব্রুয়ারি এসেছিলেন তিনি। অভিযোগ জানানোর পর মোটরযান পরিদর্শক অভিযোগটি কর্তৃপক্ষের গ্রুপে পাঠিয়ে দেন।
সেসময় আজিজুর রহমান বলেন, যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে দিয়েছি। একই সাথে লাইসেন্স করতে দিয়ে অনেকেই পেয়েছে। কিন্তু আমার কি সমস্যা হয়েছে জানি না। তিনি (মোটরযান পরিদর্শক) আমার অভিযোগ শোনার পর ঢাকা অফিসের ডিরেক্টরের (অপারেশন) কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
হৃদয় নামে এক যুবক বলেন, পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য কাজীর কাছে কাগজপত্র দিয়ে ১২ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। লার্নার বের করে নেওয়ার দিন ২ হাজার টাকা, পরীক্ষার দিন ৩ হাজার টাকা ও ফিঙ্গার দেওয়ার দিন সব টাকা পরিশোধ করি।
পরিচয় গোপন রেখে এক দালালের অফিসে যান এই প্রতিবেদক। অফিসটির নাম কাজী ফটোস্ট্যাট। অফিসে প্রবেশের আগেই ওই অফিসের সাইনবোর্ডে দেওয়া একটি নম্বরে কল কররে অফিসের একজন লোক এসে সাথে নিয়ে যান। ফটোস্ট্যাট লেখা অফিস হলেও ভেতরে কোনো ফটোস্ট্যাট মেশিন নেই। অফিসের টেবিলে বিআরটিএর অনেকগুলো ফাইল। একজন নারী সেগুলোর কাজ করছেন। কাজীও সেখানে বসে ছিলেন। তার নাম মোসলেম উদ্দীন।
সেখানে গ্রাহক সেজে জানতে চাওয়া হলে তারা জানান, ১১০সিসি গাড়ির জন্য ১১ হাজার ৭৬৪ টাকা ও অফিস খরচ ২ হাজার ৫০০ টাকা দিলেই হবে। আর সিসি বেশি হলে আরও টাকা বাড়বে। আর অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য সাড়ে ১০ হাজার টাকা। পেশাদার হলে ৫০০ টাকা কম করা যাবে। অষ্টম শ্রেণি পাসের সার্টিফিকেট না হলেও ড্রাইভিং লাইসেন্স করা যাবে। দুই থেকে তিন কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করার অপশনও আছে দালালের ওই অফিসে।
মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন, ডাইভিং লাইসেন্স, হেলমেট না থাকাসহ অন্যান্য কারণে জয়পুরহাটে গত বছরের ১২ মাসে এক হাজার ৩২২টি মামলা হয়েছে। এই সময়ে প্রসিকিউশনের মাধ্যমে ৬৫ লাখ ৭৯ হাজার ৫৫০ টাকা জরিমানা আদায় হয়েছে।
দালালদের আরও কয়েকটি অফিস ঘুরে ও বিআরটিএতে দালালদের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, এটাই বর্তমানে তাদের পেশা। বেশি টাকা না নিলে চলে না। কারণ বিআরটিএ অফিসের লোকজন টাকা ছাড়া কাজ করে না। তারা রেজিস্ট্রেশনের জন্য কাজ করতে ৮০০ টাকা ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ২০০ টাকা রেট করে দিয়েছেন। আর পাস করার পর এক হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা দিতে হয়। এই টাকা তাদের দিতেই হবে। আর দালালদের ছাড়া কেউ গেলে তাদের আরও বেশি টাকা গুনতে হয়। ওই অফিসের স্টাফদের সাথেই কয়েকজন বাইরের লোক বসেন। তারাই সব রেট করেন।
একটি বেসরকারি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক নুরুল আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা গাড়ির লাইসেন্স আগেই পেয়ে যাই। কিন্তু ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে অনেক দেরি হচ্ছে। যেহেতু শহরেই বসবাস করি। তাই চিন্তা করি দালালের কাছে যাব কেন? দালালের কাছে না যাওয়ার ফলে হয়রানিটা হয়ে যায়। এটা ব্যালেন্স করার জন্য অভদ্র হতে পারি না। কাজ করতে গিয়ে এক ধরনের সিনক্রেট হয়ে যেতে পারে। আপনি বা আমি গেলে কাজ হয়তো তাড়াতাড়ি হয়ে যেতে পারে। কিন্তু সাধারণ নাগরিক গেলে ওটা সহজে হওয়া কঠিন। সেক্ষেত্রে তারা দালালদের মারফতে যায়। তাছাড়া এখনকার মানুষজনও চিন্তা করে শহরে যেতে হয়তো কিছু টাকা খরচ হলো। তার চেয়ে বরং ৫০০ টাকা দিয়ে দেই। আমরা এই আপস করতে করতে শেষ।
এসব প্রসঙ্গে জানতে প্রথমে মোটরযান পরিদর্শক রাম কৃষ্ণ পোদ্দারের কক্ষে গিয়ে জানা যায় বিআরটিএ জয়পুরহাট সার্কেলের অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন নওগাঁর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) মোহাম্মদ হারুন উর রশিদ। প্রতি মঙ্গলবার এই অফিসে বসার কথা থাকলেও কাজ না থাকলে তিনি আসেন না।
জানতে চাইলে রাম কৃষ্ণ পোদ্দার বলেন, দালাল বলে কিছু নেই। আমার চোখে তো দালাল পড়ে না। যারা আসেন তারা স্বজনদের কারও না কারও কাজ নিয়ে আসেন। কাজই নাই, তাহলে দালাল থাকবে কোথা থেকে? আমি দালালদের চিনিও না। আর অফিসে বাইরে লোক যারা আছে তারা বিভিন্ন শোরুমের প্রতিনিধি হিসেবে আছি বলে জানি। আপনি এডি (সহকারী পরিচালক) স্যারের সঙ্গে কথা বললে রেজাল্ট আরও ভালো পাবেন।
তিনি বলেন, কেউ সমস্যায় পড়লে আমাদের কাছে তো আসে না। সমাধান নিজে করতে না পারলেও পথ দেখিয়ে দিছি। বিআরটিএ মানে সমস্যা, কেউ ভালো বলে? প্রশ্ন রাখেন এই কর্মকর্তা।
দালালদের বিষয়ে ঊর্ধ্বতনদের জানানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ডিসি স্যারকে জানান। মোবাইল কোর্ট করবেন, কি করবেন না। সেটা স্যার সিদ্ধান্ত নেবেন। আর এডি স্যারকে জানান, তিনি ডিসি স্যারের সাথে কথা বলবেন, কী বলবেন না বলবেন সেটা উনার ব্যাপার।
আরও পড়ুন
এ বিষয়ে কথা বলতে বিআরটিএ জয়পুরহাট সার্কেলের অতিরিক্ত দায়িত্ব থাকা সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) মোহাম্মদ হারুন উর রশিদের সরকারি ও ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি তার।
এদিকে মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, হেলমেট না থাকার কারণে প্রতিনিয়ত মামলা হচ্ছে। মামলায় জরিমানাও গুনছেন মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হেলমেট না থাকা ব্যক্তিরা।
জয়পুরহাট ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) জামিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়। গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স যাচাই করা হয়। যাচাইয়ে এসব না পাওয়া গেলে মামলা দেওয়া হয়। এ জেলায় গত বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এক হাজার ৩২২টি মামলা হয়েছে। এই সময়ে প্রসিকিউশনের মাধ্যমে ৬৫ লাখ ৭৯ হাজার ৫৫০ টাকা জরিমানা আদায় হয়েছে।
জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, চেকপোস্টে পুলিশ সব সময় ভালো আচরণ করেন। অনেকেই জরিমানা দেবে না বলে রাগান্বিত হন। মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীরা নিজেদের ভালোর জন্যও হেলমেট পরেন না। সঠিক নির্দেশনা মেনে সড়কে চলাচল করা উচিত। তাছাড়া গাড়ি চলাচলে কোনো মামলা হলে সেগুলো কমে নেওয়ার জন্য অনেকেই অফিসে আসেন। কমেও দেওয়া হয়। আর বিআরটিএ অফিসে দালালদের বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিআরটিএ অফিসের অনিয়ম নিয়ে জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সালেহীন তানভীর গাজী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিআরটিএ আমার অফিস না। বিআরটিএর এই অঞ্চলের ডিরেক্টর যে আছে তার সঙ্গে কথা বলেন। আর ভুক্তভোগী কে আছে? তাকে আমার কাছে পাঠান। যারা দালালদের উৎপাতের শিকার তাদেরকে পাঠান। সুস্পষ্টভাবে ভুক্তভোগীদের নিয়ে আসলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরএআর