‘খেজুরের রস আমার মেয়েকে শেষ করে দিল’
খেজুরের রস খেয়ে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিন বছরের এক শিশুর মৃত্যুর কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও তার বাবা-মায়ের কান্না এখনও থামছে না। ছোট্ট শিশুর চঞ্চলতার স্মৃতি স্মরণ করে বাবা মায়ের কান্না আর আহাজারি ভারি করে তুলেছে চারপাশের পরিবেশ।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঘড়িসার ইউনিয়নে নিহত আকলিমার (ছদ্মনাম) বাড়িতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, খেজুরের রস খাওয়ার পরে গত ২৮ জানুয়ারি আকলিমা প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হয়। চিকিৎসার জন্য আকলিমাকে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকেরা আকলিমার শরীরে নিপা ভাইরাসের লক্ষ্মণ দেখে পরীক্ষা করাতে বলেন। পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করলেও রিপোর্ট বের হওয়ার আগেই গত বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শিশু আকলিমা আক্তার। এরপর থেকেই মেয়েকে হারানোর শোকে আকলিমার মা বাবাসহ স্বজনদের কান্না যেন থামছেই না।
নিহত শিশু আকলিমার মা ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেয়ে আমাকে ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারত না। আমি যেখানে যেতাম, আমার সঙ্গে সঙ্গে যেত। ঘরে বাইরে যেখানেই যাই, আমার শুধু মেয়ের কথা মনে পড়ে। সব জায়গায় ওর স্মৃতি জড়িয়ে আছে। কেমনে থাকে, আমার মা আমারে ছাড়া!
আকলিমার বাবা ঢাকা পোস্টকে বলেন, যদি আমি আমার মেয়ে খেজুরের রস না খেত, তাহলে সে বেঁচে থাকত। মা আমারে ছেড়ে চলে গেছে। কেউ যেন খেজুরের রস না খায়। খেজুরের রস আমার মেয়েকে শেষ করে দিল।
নিপা ভাইরাসের ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন আবুল হাদী মোহাম্মদ শাহ পরাণ ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাঁচা খেজুর রস বা বাঁদুরে খাওয়া কোনো ফলমূল খেলেও নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। নিপা ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে জ্বর, মাথাব্যথা, গলাব্যথা, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শতকরা ৭০ ভাগ রোগী মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ভাইরাস ছোঁয়াচে রোগ, তাই সবাইকে সতর্ক হতে হবে। যে বাচ্চাটা মারা গেছে, সেই বাচ্চাটার ভাই যে স্কুলে পড়াশোনা করত সেখানে আমরা গিয়েছিলাম। ওই শিশুর মৃত্যুর খবরে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। নিপা ভাইরাস থেকে সবাইকে সচেতন করতে লিফলেট বিতরণসহ মাইকিং করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
সাইফ রুদাদ/এএএ