কোম্পানির ওষুধ না লেখায় ডাক্তারকে মারধর, আ.লীগ নেতা হাজতে
নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ না লেখায় এক নারী চিকিৎসকের ওপর হামলার অভিযোগে জুলহাস মাদবর (৫৫) নামের এক উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাসহ ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) শরীয়তপুরের ডামুড্যা বাজার থেকে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃত জুলহাস মাদবর ডামুড্যা উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও তার ভাগ্নে শহিদুল ইসলাম মৃধা ল্যাবএইড ফার্মাসিউটিক্যালস ওষুধ কোম্পানির মেডিকেল প্রোমোশন অফিসার।
ভুক্তভোগী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন নারী চিকিৎসক নুসরাত তারিন তন্বীর সঙ্গে কিছুদিন আগে ল্যাবএইড ফার্মাসিউটিক্যালস ওষুধ কোম্পানির মেডিকেল প্রোমোশন অফিসার শহিদুল ইসলাম মৃধার পছন্দের ওষুধ লেখা নিয়ে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটে। বিষয়টি শহিদুল ইসলাম মৃধা তার মামা উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান সম্পাদক জুলহাস মাদবরকে জানান। এরপর গত বুধবার রাতে চিকিৎসক নুসরাত তারিন তন্বীর বাড়ির কাছে তার পথরোধ করে তার ওপর হামলা চালান জুলহাস মাদবর, তার ছেলে ডামুড্যা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি লিখন মাদবর ও শহিদুল ইসলাম মৃধা। এসময় নুসরাত তারিন তন্বীর চিৎকারে বাসা থেকে তার মা মাসুমা খাতুন ও চিকিৎসক স্বামী মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া এগিয়ে এলে তাদেরকেও মারধর করা হয়। পরে স্থানীয়রা আহত অবস্থায় নুসরাত তারিন তন্নি ও মাসুমা খাতুনকে উদ্ধার করে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে নুসরাত তারিন তন্বীর স্বামী মঞ্জুরুল ডামুড্যা থানায় ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে। ওই দিন দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জুলহাস মাদবর ও শহিদুল ইসলাম মৃধাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
নারী চিকিৎসক নুসরাত তারিন তন্বী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ল্যাবএইড ফার্মাসিউটিক্যালস ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম বার বার তার কোম্পানির ওষুধ লিখতে আমাকে চাপ দিয়ে আসছিল। আমি অস্বীকৃতি জানালে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে গতকাল রাতে তিনিসহ স্থানীয় জুলহাস মাদবর, তার ছেলে লিখন মাদবর ও বেশ কয়েকজন লোক আমার ওপর হামলা চালায়। তারা ধাতব পদার্থ দিয়ে আমার মুখে আঘাত করলে আমি জখম হই। পরে আমার চিৎকার শুনে আমার মা ও স্বামী আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তাদেরও মারধর করা হয়। বর্তমানে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমরা সরকারি চাকরির নিয়ম অনুযায়ী গ্রামে সেবা দিতে আসছি কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হামলা আমাদের সেবাদানে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।
নারী চিকিৎসক নুসরাত তারিন তন্বীর স্বামী মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওরা চেয়েছিল ওদের কিছু মানহীন ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখতে। কিন্তু একজন চিকিৎসক হিসেবে একটি কোম্পানির ওষুধ ঢালাওভাবে লেখার সুযোগ নেই তাই আমার স্ত্রী তাদের কথায় রাজি হয়নি। ওরা স্থানীয় ও প্রভাবশালী হওয়ার কারণে কাল রাতে আমার স্ত্রী ও আমাদের ওপর হামলা চালায়। চিকিৎসকেরা চিকিৎসা সেবা দিতে গ্রামেগঞ্জে কাজ করে, এভাবে আমাদের ওপর হামলা হলে কেউ আর চিকিৎসাসেবা দিতে গ্রামে আসবে না। আমরা এই ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
আহত মাসুমা খাতুন বলেন, আমি আমার মেয়ের চিৎকার শুনে দৌড়ে এগিয়ে যাই। পরে গিয়ে দেখি আমার মেয়েকে মাটিতে ফেলে মারধর করা হচ্ছে। আমি বাঁচাতে গেলে আমাকেও মারধর করা হয়। একজন নারী চিকিৎসক এখানে নিরাপদ না। আমরা কীভাবে থাকব। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতা জুলহাস মাদবরের মামাতো ভাই এনামুল হক ইমরান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ভাই কারও ওপরে হামলা করেনি। জুলহাস ভাইয়ের সঙ্গে চিকিৎসক ও তার মায়ের ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে পড়ে গিয়ে উনি আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শেখ মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, ল্যাবএইড ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি শহীদ ও স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসক তন্বীর ওপরে হামলা চালিয়েছে। এতে তিনি ও তার মা আহত হয়েছেন। তন্বীর মুখমণ্ডলে জখমের আঘাত রয়েছে। বর্তমানে উনি তার মাসহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
শরীয়তপুর পুলিশের সুপার মাহবুবুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটি কোম্পানির ওষুধ না লেখা নিয়ে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক নারী চিকিৎসক, তার স্বামী ও মায়ের উপরে হামলার ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করি অভিযোগ পাওয়ার পরে বিষয়টি মামলা হিসেবে রুজু করে ঘটনায় অভিযুক্ত দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে, তদন্ত শেষ করে অতি দ্রুত আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
সাইফ রুদাদ/আরকে