বাড়ি ফিরে স্ত্রী ও দুই সন্তানের নিথর দেহ দেখতে পান মান্নান
চাচাতো বিয়েতে দাওয়াত ছিল। তাই সকালের নাস্তা করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ডুমুরিয়া সদরে যান আব্দুল মান্নান সরদার। এরপর চাচাতো ভাইয়ের বিয়ের গিফট কিনে দুপুরে বাড়িতে ফেরেন। গিফট নিয়ে বাড়িতে ফিরে ঘরের মধ্যে পেয়েছেন স্ত্রী ও দুই সন্তানের মরদেহ।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) এমনই হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কোমলপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের বাড়িতে।
সদর থেকে বাড়ি ফিরে আব্দুল মান্নান সরদার তার স্ত্রী ডলি বেগম (৩৮), চার বছরের মেয়ে ফাতেমা খাতুন ও সাত মাসের ছেলে ওমর আলী সরদারের নিথর দেহ ঘরে পড়ে থাকতে দেখেন। এমনটাই জানিয়েছেন আব্দুল মান্নান।
তিনি জানান, তিনি লেক্সাস প্রকাশনীতে বিক্রয় কর্মী হিসেবে চাকরি করেন। সকালে নাস্তা করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ডুমুরিয়া সদরে যান। এরপর চাচাতো ভাইয়ের বিয়ের গিফট কিনে দুপুরে বাড়িতে ফেরেন। তখন ঘরের দরজা ভেতর থেকে আটকানো দেখে স্ত্রীর নাম ধরে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ না দেওয়ায় তার সন্দেহ হয়।
একপর্যায়ে কাঁচি দিয়ে ঘরের খিল বাইরে থেকে খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন। ঘরে ঢুকে দুই সন্তানের মরদেহ বিছানার ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। এছাড়া, ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় কাপড় পেঁচানো তার স্ত্রীর মরদেহ ঝুলতে দেখেন। এ সময় তিনি চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। তারা শিশু দুটিকে দ্রুত ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি দাবি করেন, তার স্ত্রীর সঙ্গে গত তিন মাসেও কোনো দিন মনোমালিন্য বা কলহ হয়নি। তবে তার স্ত্রী কিছুটা রাগী ও জেদি ছিল।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দুই শিশু সন্তানকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার পর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন মা ডলি বেগম। পারিবারিক কলহের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।
মান্নানের মা সাহিদা বেগম বলেন, ডলির সঙ্গে আমার কিংবা আমার ছেলের কোনো কলহ ছিল না। কিন্তু সে কী কারণে এমন করল বুঝে উঠতে পারছি না। আমরা হতবাক হয়ে গেছি।
স্থানীয় গুটুদিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইজ্জত আলী বলেন, ডলি বেগমের স্বামী আব্দুল মান্নানের সঙ্গে সবার ভালো সম্পর্ক। তার স্ত্রী একটু জেদি প্রকৃতির হলেও প্রতিবেশী হিসেবে তাকে কখনো তার স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া অথবা রাগারাগি করতে দেখিনি। তবে, কী কারণে এ রকম ঘটনা ঘটল বুঝতে পারছি না। এ ঘটনায় ডলির পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে, তার পরিবারের কোনো অভিযোগ নেই।
মৃত ডলি বেগম ডুমুরিয়া উপজেলার আরাজি ডুমুরিয়া গ্রামের নূর ইসলাম গোলদারের মেয়ে।
নূর ইসলাম গোলদার বলেন, ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ আমার মেয়েকে বিয়ে দেই। আমার জামাই ভালো মানুষ। মেয়ে এবং জামাইয়ের মধ্যে কোনো কলহের কথা কখনো শুনিনি। কিন্তু কী কারণে আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে তা বুঝতে পারছি না। মামলা করবেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দেখি কী করা যায়।
ডুমুরিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত সাহা জানান, মৃত ডলি বেগমের স্বামী আব্দুল মান্নান সরদার বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। রোববার (২৮ জানুয়ারি) ময়নাতদন্ত শেষে তিনজনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
খুলনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বি সার্কেল) মো. আসিফ ইকবাল জানান, কোমলপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান সরদারের স্ত্রী ডলি বেগম তার চার বছরের মেয়ে ফাতেমা খাতুন ও সাত মাসের ছেলে ওমর আলী সরদারকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। এরপর নিজে ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় কাপড় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন।
পুলিশ সুপার মো. সাঈদুর রহমান জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন, বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ ও ভুক্তভোগীর পবিারেরর সদস্য এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। পারিবারিক কলহের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন। ডলি বেগমের বাবার পরিবার কোনো অভিযোগ দেয়নি।
মোহাম্মদ মিলন/কেএ