ডিসির উদ্যোগে সেই নবজাতকের ঠাঁই হলো শিশু পরিবারে
রংপুরে হাসপাতালের বিল দিতে ব্যর্থ হওয়ার অজুহাতে ৪০ হাজার টাকায় নবজাতক বিক্রির ঘটনা ঘটে। এরপর পুলিশের সহায়তায় ওই নবজাতককে উদ্ধার করার পাশাপাশি গ্রেপ্তার করা হয় হাসপাতাল পরিচালকসহ তিনজনকে। ইতোমধ্যে ঘটনার জন্ম দেওয়া আলোচিত হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালটি সিলগালা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু নবজাতক সন্তানকে মা লাবনী আক্তার ফিরে পেলেও স্বামী পলাতক থাকায় তিনি অভিভাবক ও আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন। অসহায় এই নবজাতকসহ প্রসূতি লাবনী আক্তারের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়িয়েছে রংপুরের জেলা প্রশাসন।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর মাধ্যমে লাবনী আক্তার ও নবজাতকের অবশেষে ঠাঁই হয়েছে সরকারি শিশু পরিবার বালিকায়। বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় নগরীর বিনোদপুরে অবস্থিত সরকারি শিশু পরিবার বালিকায় সমাজসেবার অধিদপ্তর রংপুরের মাধ্যমে তাকে স্থানান্তর করা হয়। স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই থাকবেন বলে জানিয়েছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মতিন।
তিনি আরও জানান, গত কয়েকদিন থেকে গণমাধ্যমে নবজাতক বিক্রির ঘটনায় অসহায় লাবনী আক্তারের খবর প্রকাশিত হলে বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে আসে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরকে জানালে আমরা তাৎক্ষণিক বিষয়টি আমলে নেই। এরপর অসহায় ওই নারীর পাশে দাঁড়াই। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে অসহায় নারী ও নবজাতককে আমরা সরকারি শিশু পরিবার বালিকায় থাকার ব্যবস্থা করি। যতদিন পর্যন্ত বিষয়টি নিষ্পত্তি না হয়, ততদিন পর্যন্ত সমাজসেবা থেকে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
এদিকে, রংপুর সরকারি শিশু পরিবার বালিকার তত্ত্বাবধায়ক আলতাব হোসেন সরকার জানান, আমাদের এখানে সকালে নবজাতককে নিয়ে ওই নারী এসেছেন। আমরা আমাদের সাধ্যমতো সরকারি সহযোগিতা প্রদান করছি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, অসহায় লাবনী আক্তার ও নবজাতকের বিষয়টি জানার পর আমরা দ্রুত সমাজসেবা অধিদপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আহ্বান করেছি। সেই মোতাবেক জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে নবজাতক ও ওই নারীকে সরকারি শিশু পরিবারে রাখা হয়েছে। যতদিন ওই ঘটনার আইনগত নিষ্পত্তি হয়নি, ততদিন সেখানেই থাকতে পারবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ জানুয়ারি রংপুর নগরীর বুড়ারঘাট এলাকার ওয়াসিম আকরামের স্ত্রী লাবনী প্রসব ব্যথা নিয়ে হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই রাতে সিজারের মাধ্যমে তিনি একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। এর তিন দিন পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ লাবনী ও তার স্বামী ওয়াসিমকে বিল পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকে।
এক পর্যায়ে ওয়াসিম ও লাবনী দম্পতির অসচ্ছলতাকে পুঁজি করে হাসপাতালের পরিচালক এমএস রহমান রনি তার পূর্বপরিচিত জেরিনা আক্তার বিথী ও তার স্বামী রুবেল হোসেন রতনের কাছে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে নবজাতককে বিক্রি করে দেন। এতে সহযোগিতা করে লাবনীর স্বামী ওয়াসিম আকরাম। এ ঘটনায় লাবনী আক্তার কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ রোববার (২১ জানুয়ারি) নগরীর পীরজাবাদ এলাকা থেকে নবজাতককে উদ্ধারসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। ঘটনার পর থেকে লাবনীর স্বামী ওয়াসিম গা ঢাকা দিয়েছেন।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস