মাছ চাষে বাজিমাত, মাসে আয় ৪ লাখ টাকা
মাছ চাষে এখন আর পুকুরের প্রয়োজন হয় না। অনেকেই এখন বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছেন। বায়োফ্লক মূলত মাছ চাষের একটি নতুন পদ্ধতি, যার মাধ্যমে অল্প জায়গায় অনেক বেশি মাছ চাষ করা যায়।
যদিও বায়োফ্লক সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান না থাকায় অনেক চাষি এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে গিয়ে ঝুঁকিতে পড়ছেন। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার মাছ চাষি জিহাদ আহমেদ রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে সফল হয়েছেন তিনি। ৩০ লাখ লিটার পানিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করে এখন স্বাবলম্বী জিহাদ।
সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ গ্রামে নিজ বাড়ির পাশেই পরিত্যক্ত কয়েকটি পোলট্রি খামারের শেডে জিহাদ গড়ে তুলেছেন বায়োফ্লক ফিশ ফার্মিং। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে প্রতি মাসে ব্যয় মিটিয়ে জিহাদের আয় ৪ লাখ টাকা। মাছ চাষের পাশাপাশি বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের ওপর প্রশিক্ষণ দেন জিহাদ।
তরুণ মাছ চাষি জিহাদের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদকের। জিহাদ জানিয়েছেন, বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের আগে তিনি পোলট্রি খামার করেছিলেন। তবে পোলট্রি খামারে কয়েক কোটি টাকা লোকসান হলেও বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে বাজিমাত করেছেন।
জিহাদ জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তার বড় ভাই জসিম আহমেদ ব্যবসায়ী আর ছোটভাই রিফাত আহমেদ কানাডাপ্রবাসী। ২০১৬ সালে বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে প্রথম একটি পোলট্রি খামার করেন তিনি। এরপর ২০১৮ সাল পর্যন্ত তার খামারের সংখ্যা দাঁড়ায় ছয়টিতে। সবকটি খামারে মোট ৪২ হাজার মুরগি ছিল। কিন্তু বার্ড ফ্লু ও রানীক্ষেত রোগে সবগুলো মুরগি মারা যায়। এতে কয়েক কোটি টাকা লোকসান হয়। পরবর্তীতে কানাডাপ্রবাসী ছোটভাই রিফাত পরামর্শ দেন বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য। কিন্তু বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না জিহাদের।
জিহাদ বলেন, পোলট্রি খামার করে লোকসান করার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব কাউকে পাশে পাইনি। আমার ভাই আমাকে ইন্দোনেশিয়া থেকে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নিতে বলেন। আমি তার কথামতো ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে ইন্দোনেশিয়ায় গিয়ে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিই। এরপর ফিরে এসে আমার পরিত্যক্ত পোলট্রি খামারে বায়োফ্লক প্রকল্পের কাজ শুরু করি। প্রথম দিকে দেশের বিভিন্ন স্থানের হ্যাচারি থেকে পাবদা, গুলশা, শিং ও মাগুর মাছের পোনা এনে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে চাষ শুরু করি। এখন ৩০ লাখ লিটার পানিতে মাছ চাষ করছি আমি।
জিহাদ আরও জানান, গত দুই মাস ধরে কক্সবাজারে থেকে লোনা পানির বাগদা চিংড়ির রেণু পোনা এনে নার্সিং করে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মিঠা পানিতে চাষ শুরু করেছেন। ৫০ লাখ বাগদা চিংড়ির রেণু পোনা এনেছেন। এগুলো চাষ করতে খরচ হবে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। বিক্রি হবে প্রায় দুই কোটি টাকা। ভালো মুনাফা হওয়ায় ৫০ লাখ লিটারের নতুন আরেকটি বায়োফ্লক প্রকল্পের কাজ শুরু করেছেন জিহাদ।
জিহাদ বায়োফ্লক ফিশ ফার্মিংয়ের ব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী বলেন, আমরা বগুড়া এবং যশোরের হ্যাচারি থেকে থেকে পোনা নিয়ে আসি। পোনাগুলো বায়োফ্লকে দেওয়ার আগে ট্যাংকে অল্প পানিতে ছেড়ে খাবার এবং ট্রিটমেন্ট দিতে হয়। দুই-তিনদিন পরপর পানি পরিবর্তন করে জীবিত পোনাগুলো থেকে মৃত পোনাগুলোকে আলাদা করে ফেলে দিই। মৃত পোনাগুলো না ফেলে দিলে অন্য জীবিত পোনাগুলো আক্রান্ত হবে।
পোনাগুলোকে সুস্থ-সবল রাখার জন্য বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করতে হয়। এরপর পোনাগুলো বায়োফ্লকে ছাড়া হয়। কই মাছ চার মাস এবং শিং, পাবদা ও গুলশা মাছ পাঁচ মাস পর বিক্রির উপযোগী হয়। এখানকার পোনা এবং মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা হয়- ঢাকা পোস্টকে বলেন ইউসুফ আলী।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহীদের উদ্দেশে জিহাদ আহমেদ বলেন, বায়োফ্লকের কিছু বিষয় আছে যেগুলো খুবই সংবেদনশীল। এগুলো সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখতে হবে। অক্সিজেনের লেভেল ঠিক না রাখলে মাছ বড় হবে কম। সেজন্য যারা বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে চান, তাদের বায়োফ্লক সম্পর্কে আগে ভালো করে বুঝতে হবে। কারণ না বুঝে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে গেলে লোকসানে পড়তে হবে।
এ ব্যাপারে সরাইল উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মায়মুনা জাহান বলেন, আমি একটি প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকায় অবস্থান করছি। তবে কয়েক মাস আগে জিহাদের বায়োফ্লক প্রকল্প দেখে এসেছি। তিনি এই প্রকল্প শুরু করার আগে আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। প্রকল্পটি তিনি বাস্তবায়ন করেছেন। আমরা শুনেছি, তিনি বায়োফ্লক সম্পর্কে বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
এএম