পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা বাড়লেও কমেনি দুর্ভোগ
তাপমাত্রা ওঠানামা করলেও উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে অব্যাহত রয়েছে শীতের দাপট। রাতভর কুয়াশা আর হিমেল শিশির ঝরে সেটা থাকছে বেলা পর্যন্ত। এ অঞ্চলে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে তীব্র শীতের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষ ও জীবজন্তু। জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষেরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।
শনিবার (২০ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ভোর ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভোর থেকেই ঘন কুয়াশায় ঢাকা পুরো জেলা। কুয়াশার সঙ্গে ঝরছে হিমশীতল শিশির। শহর ও গ্রামের সড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। টানা শীতের কারণে চরম বিপাকে সময় পার করছে শিশু ও বৃদ্ধরা। শীতের কারণে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগ।
কুয়াশার কারণে সময়মতো কাজে যেতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। শীত ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে কমেছে আয়। অভাব-অনটনে দিন কাটছে অনেক পরিবারের।
পাথর শ্রমিক আরিস, জুয়েল ও আবু তাহের জানান, টানা শীতে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছেন তারা। জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই দিনভর নদীতে বরফগলা পানিতে পাথর তুলতে হচ্ছে তার। জীবিকার অন্য কোনো পথ না থাকায় ঠান্ডা পানিতে কাজ করে পরিবারের খাবারের জোগান দিচ্ছেন।
বাংলাবান্ধায় পাথর শ্রমিকের কাজ করেন ফিরোজা ও কদবানু। তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, নদীতে পাথর উঠছে কম। তাই তাদের কাজও কম। সকালে প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে কাজে যেতে দেরি হলে অনেক সময় মহাজন কাজে নিতে চান না। কাজ না করলে তাদের পরিবার চলে না। তাই এই ঠান্ডার মধ্যে বেরিয়েছেন কাজের জন্য।
ভ্যানচালক হামিদুল, তরিকুল, আলী হাসান জানান, কয়েকদিন ধরে ঘন কুয়াশার কারণে ভ্যান নিয়ে বের হলেও কামাই হচ্ছে না। ঠান্ডার কারণে ভ্যানে চড়তে চায় না কেউ। কামাই রোজগার কমে যাওয়ায় অভাবের ভেতর দিন কাটাচ্ছি।
জেলার প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ জানান,গতকালের চেয়ে তাপমাত্রা বেড়ে ১০ ডিগ্রির ওপরে রেকর্ড হয়েছে। শনিবার সকাল ৯টায় ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টার সময় সূর্যের মুখ দেখা গিয়েছিল। তবে সূর্যের সামান্য তাপেও ঠান্ডা কমেনি।
জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, শীত প্রবণ জেলা হিসেবে প্রতি বছর পঞ্চগড়ে সরকারি-বেসরকারিভাবে পর্যাপ্ত কম্বল বিতরণ করা হয়। এবারও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।
এসকে দোয়েল/আরকে