‘মাইয়্যাডার সর্বনাশ হয়ে গেছে, আল্লায় আমারে কঠিন পরীক্ষাত ফালছে’
‘আল্লায় আমারে কঠিন পরীক্ষাত ফালছে। মিথ্যা মামলার বাড়ি ছাড়া। ভুল কইরা ট্রেনে ওইট্যা মাইয়াডার (মেয়ে) সর্বনাশ হইছে। ঘরে বিয়ার যোগ্য এক মাইয়্যা রইছে। দুই পোলা বড় অইছে। মানুষের সামনে ক্যামনে মুখ দেহাইয়াম। মাইনস্যের কথার কি জবাব দিবাম। হের লাইগ্যা (কারণে) মাইয়্যাডারে লইয়্যা বাড়িত যাইতাম না।’ লালমনিরহাট থেকে মেয়েকে সঙ্গে করে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে ফেরার পথে শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) রাতে মোবাইল ফোনে কথাগুলো বলেন লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে ধর্ষণের শিকার কিশোরীর বাবা।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে নিজ বাড়ি ময়মনসিংহে যাওয়ার জন্য রেলস্টেশন যায় ওই কিশোরী (১৪)। ভুলবশত সে ‘লালমনি এক্সপ্রেস’ ট্রেনে উঠে পড়ে। ওই রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে ট্রেনের অ্যাটেনডেন্ট আক্কাস গাজী তার টিকিট দেখতে আসেন। টিকিট না থাকায় আক্কাস গাজী তাকে একটি আসনে বসিয়ে দেন। এরপর আনুমানিক সকাল সাড়ে আটটার দিকে অ্যাটেনডেন্ট আসন থেকে তাকে কেবিনে নিয়ে দরজা বন্ধ করে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। পরে টহলরত রেলওয়ে পুলিশের একটি দল কেবিন থেকে কিশোরীতে উদ্ধার ও আক্কাস গাজী (৩২) কে গ্রেপ্তার করে। কিশোরীকে উদ্ধার করে লালমনিরহাটের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আক্কাস গাজী বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ এলাকার মৃত বজলু গাজীর ছেলে। এ ঘটনায় লালমনিরহাট রেলওয়ে পুলিশের এএসআই রুহুল আমিন বাদি হয়ে মামলা করার পর আক্কাসকে কারাগারে পাঠানো হয়। আক্কাসের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার বিভাগীয় মামলাও করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর আগে গত বুধবার আক্কাস গাজীকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
ধর্ষণের শিকার কিশোরীর বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের একটি গ্রামে। গত দুই বছর ধরে বাবা-মায়ের সঙ্গে গাজীপুরের জয়দেবপুরে বসবাস করছিল ওই কিশোরী। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে ছোট সে। কিশোরীর বাবা জয়দেবপুরে শ্রমিকের কাজ করেন। মা একটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মেসে রান্নার কাজ করেন। কিশোরীর বাবা একটি হত্যা মামলায় ৮ মাস জেল জীবন শেষে অভাবের কারণে সন্তানদের নিয়ে গাজীপুরে যান। বড় মেয়েকে দিয়েছেন জুতা কারখানায় শ্রমিকের কাজে।
শুক্রবার বিকেলে ট্রেনে করে গাজীপুর ফিরছিলেন কিশোরীর বাবা। মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার সকালে আমি বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে আসি। আমি চলে আসার পর তার (কিশোরীর) মা তরকারি কেটে দিতে বলেছিল। কিন্তু সে (কিশোরী) সে কাজ করেনি। মা বকতে পারে এই ভয়ে সে (কিশোরী) ঈশ্বরগঞ্জ যাওয়ার জন্য ট্রেন ধরতে যায়। কিন্তু ভুল ট্রেনে উঠে পড়ে।
কিশোরীর বাবা বলেন, ঋণ মিটাতে পারবো, দৈনিক কামাই করে একটু ভালো চলতে পারবো এ আশায় গাজীপুর আইছিলাম। কিন্তু আমার মাইয়্যাডার সর্বনাশ হয়ে গেছে। সে খুব বিমর্ষ হয়ে গেছে। কান্নাকাটি করে শুধু। আমি চাই আমার মেয়ের সঙ্গে যা হয়েছে তার কঠোর বিচার হোক।
তিনি বলেন, শুধু মেয়ের জীবন নষ্ট হয় নাই, আমাদের সবাইরে আল্লায় পরীক্ষার মধ্যে ফেলছে। মানুষের নানা প্রশ্নের মধ্যে পড়তে অইবো (হবে)। অনেকে মোবাইলে অনেক কথা জিগাইতাছে। তাই চিন্তা করছি বাড়িত আর যাইতাম না। মাইনস্যের (মানুষের) প্রশ্নের উত্তরও দিতাম না।
উবায়দুল হক/এমএসএ