রংপুরে লক্ষাধিক শীতার্তের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ
রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন এবং রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ১ থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত লক্ষাধিক ছিন্নমূল অসহায় মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। লন্ডন প্রবাসী ব্যারিস্টার মঞ্জুম আলীর উদ্যোগে গত এক সপ্তাহ ধরে এই শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা শুরু হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে গংগাচড়া সদর ইউনিয়নের ফায়ার সার্ভিস স্টেশন এলাকায় এক হাজার মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
বিতরণকালে ব্যারিস্টার মঞ্জুম আলীর ছোট ভাই ও লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, এ বছর আমাদের উত্তরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ার কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের কথা চিন্তা করে ছিন্নমূল, হতদরিদ্র, দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এক লাখ মানুষের হাতে শীত নিবারণে কম্বল পৌঁছে দিতে পেরেছি। যতদিন শীত আছে ততদিন আমার বড় ভাইয়ের এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে।
এদিকে শুক্রবার সকালে রংপুরে দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা ১১ দিন ধরে তীব্র শীতে স্থবির হয়ে পড়া জনজীবনে স্বস্তি ফিরেছে দুই দিন ধরে আকাশের বুকে উদিত সূর্যের হাসিতে। এতে রাস্তাঘাট ও হাটবাজারে মানুষের আনাগোনা বেড়েছে।
দিনে তাপমাত্রা ৯ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করলেও সন্ধ্যার পর শীতের চোট কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে কষ্ট হচ্ছে প্রান্তিক পর্যায়ের অসহায়, দুস্থ ও দরিদ্র মানুষদের। এসব মানুষদের মাঝে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।
নগরীর পার্কের মোড় এলাকার বাসিন্দা গোবিন্দ হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এত শীত আর ঠান্ডা সবার জন্য কষ্টকর। একটু অসাবধান হলেই অসুখ-বিসুখ ধরছে। বুড়ো মানুষগুলোর অবস্থা আরও খারাপ। আজ রোদ উঠেছে কিন্তু ঠান্ডা বাতাসও আছে।
এদিকে শীতে অগ্নিদগ্ধ রোগী ছাড়াও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতের প্রকোপে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত রোগীদের ভর্তির চাপ বাড়ছে। গত কয়েক দিনের তুলনায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ুন
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতজনিত রোগীও বাড়তে শুরু করেছে। বেশির ভাগ শিশু ও বয়স্করা শীতে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। শীতজনিত রোগ থেকে বাঁচতে ঠান্ডা না লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। একই সঙ্গে বাইরে বের হলে মাস্ক অথবা কোনো কিছু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখারও পরামর্শ দেন।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ শুক্রবার রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। রংপুর বিভাগের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১০ দশমিক ১, লালমনিরহাটে ১০ দশমিক ৩, নীলফামারীর ডিমলায় ১০ দশমিক ৫, সৈয়দপুরে ১১ দশমিক ২, গাইবান্ধায় ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ