৫ বছরেও সংস্কার হয়নি সংযোগ সড়ক, দুর্ভোগে সাত গ্রামের মানুষ
ফরিদপুরের সালথায় একটি সেতুর দুইপাশের সংযোগ সড়ক গত পাঁচ বছরেও পুনর্নির্মাণ হয়নি। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটির সংযোগ সড়কটি বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। সংযোগ সড়ক ঠিক করে সেতুটি চলাচল উপযোগী করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি গত ৫ বছরে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার গট্টি ও আটঘর ইউনিয়নের সীমান্ত দিয়ে বয়ে গেছে মালঞ্চ নদী। নদীর উত্তর পাড়ে আটঘর ইউনিয়নের খোয়াড়, গোয়ালপাড়া, সেনহাটি ও ভাবুকদিয়া গ্রাম। আর দক্ষিণ পাড়ে রয়েছে সিংহপ্রতাপ, নারাণদিয়া ও মেম্বার গট্টি গ্রাম। এই সাতটি গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষের যাতায়তের প্রধান অবলম্বন এই সেতুটি। গ্রামগুলোর বেশিরভাগ জনগোষ্ঠী কৃষক। এ অঞ্চলে ধানের পাশাপাশি পাট ও পেঁয়াজ উৎপাদন হয় অধিক হারে। পাট ও পেঁয়াজ বিক্রি করতে কানাইপুর, সালথা, বালিয়া, সাড়ুকদিয়া, গুরদিয়া বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যেতে প্রধানত এই সেতুটি ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল না করায় কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য মাথায় করে সেতু পার হয়ে রিকশা, ভ্যান কিংবা নসিমনে তুলতে হয়। এর মধ্যে বৃষ্টি হলে কৃষকদের দুর্ভোগের আর সীমা থাকে না।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর দুইপাশে সংযোগ সড়ক না করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। পায়ে চলার পথের মত চিকন করে মাটি দিয়ে রাখা হয়েছে। যে কারণে রিক্সা, ভ্যান, নসিমনসহ কোনো প্রকার যানবাহন ওই সেতুটি দিয়ে পারাপার হতে পারে না। বৃষ্টি হলে মাটি সরে যায় ফলে পথ হয়ে পরে কর্দমাক্ত। তখন এই সেতুটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
সালথা উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে প্রায় ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৭ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩.৭ মিটার (১২ ফুট) প্রস্থ বিশিষ্ট এ সেতুটি নির্মাণ করা হয়।
দুই ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের বাসিন্দাদের চলাচলের জন্য ১৩ বছর আগে মালঞ্চ নদীর ওপর এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সেতুর দুই পাশের মাটি কেটে নির্মাণ করা হয় কাঁচা রাস্তা। পরে ওই রাস্তার ওপর ইট বিছিয়ে দিয়ে যানবাহন চলাচলে উপযোগী করে দেওয়া হয়। ফলে এসব গ্রামের কৃষকরা তাদের কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে অনেক সুবিধা হতো। কিন্তু এলাকাবাসীর এ সুবিধা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। গত অন্তত ৫ বছর ধরে এই সুবিধা নেই। এর মধ্যে আর সংযোগ সড়ক সংস্কার নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
গট্টি গ্রামের বাসিন্দা কাজী আশরাফুল ইসলাম বলেন, পাঁচ বছর আগে নদীর পানির চাপে সেতুটির দুই পাশের সংযোগ সড়ক ভেঙে যায়। এরপর থেকে ব্রিজের ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো লাভ হয়নি। ফলে সেতুটি এলাকাবাসীর উপকারে আসছে না।
স্থানীয় কৃষক সোহেল মাতুব্বর বলেন, সারাজীবন আমরা পাট-ধান ও পেঁয়াজ মাথায় করে বাজারে নিয়ে বিক্রি করেছি। মালঞ্চ নদীর ওপর সেতু হওয়ায় আমরা অনেক খুশি হয়েছিলাম। সেতুটি নির্মিত হওয়ার পর কয়েক বছর মাথায় করে নিয়ে বাজারে ফসল বিক্রি করতে হয়নি। ভ্যান, নসিমন ও গাড়িতে করে কৃষিপণ্য বাজারজাত করেছি আরামে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ব্রিজের দু’পাশের সড়ক ভেঙে পড়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তাই বর্তমানে সেই আগের মতো ফসল মাথায় করে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে আমাদের। আর বৃষ্টি হলে তো নিজেদের হাঁটতেই কষ্ট হয় আর মাথায় কৃষিপণ্য নেওয়া তো দূরের কথা।
স্থানীয় কৃষক ইলিয়াস হোসেন বলেন, সংযোগ সড়ক ধসে যাওয়ার পর গত পাঁচ বছর ধরে তা মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যে কারণে সেতুটি আমাদের কোনো কাজে আসছে না। সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়ক দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বলেও আমরা কোনো সুফল পাইনি।
এলাকাবাসীর চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তির কথা তুলে ধরে আটঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শহীদুল হাসান খান বলেন, এ সেতুটির দুই পাশের সংযোগ সড়ক ঠিক করার জন্য উপজেলা আইনশৃঙ্খলা ও উন্নয়ন সমন্বয় সভায় একাধিকবার কথা হয়েছে। জানানো হয়েছে উপজেলা প্রকৌশলীকেও। এ ব্যাপারে দ্রুত কাজ করার কথা বলে বার বার আমাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কোনো লাভ হয়নি।
সালথা উপজেলা প্রকৌশলী আবু জাফর মিয়া বলেন, আমি সরেজমিনে সমস্যাটি দেখে এসেছি। সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়ক সংস্কার করা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। স্থায়ী কাজের জন্য এ কাজটি একটি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সংস্কার করার জন্য। যানবাহন চলাচলের সুবিধার জন্য সংযোগ সড়ক নির্মাণের একটি বাজেট চেয়ে পাঠানো হয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পেলে দ্রুত কাজে হাত দেওয়া সম্ভব হবে।
জহির হোসেন/আরকে