মাঘের শীতে কাবু চিড়িয়াখানার পশুপাখি
এ ছাড়া শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে বেশ কিছু খাঁচায় চট (বস্তা), ভেতরে খড়ের ও বালুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে শীত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাচ্ছে পশুপাখিরা। পাশাপাশি ছোট বক্স তৈরি করে দেওয়া হয়েছে খাঁচার ভেতরে। শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা করতে বনের পশুদের মতো দৌড়ঝাঁপ করে শীত তাড়ানোর উপায় নেই চিড়িয়াখানার প্রাণীদের।
রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি খাঁচার ভেতরে পশু-পাখিরা গুটিসুটি মেরে বসে আছে। শীত থেকে বাঁচতে অধিকাংশ পাখি তাদের পাখার ভিতরে মুখ লুকিয়ে রেখেছে। খাঁচার ভেতরে দেখা গেছে শীতে কাতর সিংহ ও বাঘকে। তীব্র ঠাণ্ডার কারণে শুয়ে-বসে সময় কাটাচ্ছে ওরা। তবে সন্ধ্যার পর থেকে রাত যত গভীর হতে থাকে শীতের চোটে খাঁচার ভেতর থেকে সিংহ ও বাঘের গর্জন ততবেশি হয়ে থাকে বলে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এদিকে বানর ও হনুমানসহ অন্যান্য প্রাণীরা খাঁচার কোনায় চুপিসারে বসে আছে। একই অবস্থা হরিণ, ঘোড়া, গাধার। এদের খাঁচার একপাশে টিনের তৈরি সেডে খড় বিছানো হয়েছে, সেখানে কিছু ঘোড়া থাকলেও বাকি ঘোড়াগুলোকে মাটিতেই শুয়ে থাকতে দেখা গেছে। লাফালাফি না করে চঞ্চল হনুমানগুলোও মাথা লুকিয়ে উষ্ণতা খোঁজার চেষ্টা করছে। উটপাখির মতো দেখতে বড় ক্যাসোয়ারি শীতে নিথর হয়ে বসে আছে। ময়ূর পেখম তোলা বন্ধ রেখে মাথা লুকিয়ে রেখেছে পালকে ভিতর। হরিণগুলো দলবদ্ধ হয়ে থাকলেও শীতের কারণে এদের শরীরে দুরন্তপনা নেই। চিড়িয়াখানার বেশিরভাগ প্রাণীই যেন শীতে কাতর।
সেখানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা বলছেন, তীব্র শীতের কারণে মানুষের মতো প্রাণীকূলও ভালো নেই। বিনোদনের অংশ হিসেবে চিড়িয়াখানার পশুপাখি দেখতে এসে অনেকেই জবুথবু অবস্থায় থাকা পশুপাখি দেখে নিজেরাও কষ্ট পাচ্ছেন। অন্যদিকে কর্তৃপক্ষের দাবি, শীতের কারণে দর্শনার্থীর সংখ্যা একেবারে কম। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতি হচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
চিড়িয়াখানায় বেড়াতে আসা সুমন মিয়া নামে এক দর্শনার্থী বলেন, শীতের কারণে শুধু মানুষ নয় পশুপাখিরাও কষ্টে রয়েছে। এটা এখানে এসে খুব বেশি উপলব্ধি করছি। তীব্র ঠাণ্ডায় আমাদের হাত-পা কোঁকড়া হয়ে আসছে। মানুষের মতো প্রাণিকুলের অবস্থাও নাজুক। চিড়িয়াখানার বেশিরভাগ প্রাণীর মধ্যে শীতের কারণে দুরন্তপনা নেই। শীতে নিদারুণ কষ্টে থাকা এসব প্রাণী দেখে খুব বেশি আনন্দ পাওয়া যায় না।
শীতে চিড়িয়াখানার প্রাণীদের জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা.আম্বর আলী তালুকদার বলেন, শীতে এসব পশুপাখির চিকিৎসা সেবা, অসুস্থ হলে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। যে সব প্রাণী একেবারে শীত সহ্য করতে পারে না, তাদের প্রতিটি খাঁচার চারদিকে চট দিয়ে ঘিরে রাখা হচ্ছে। ঘরগুলো পরিষ্কার রাখা হচ্ছে সবসময়। এ ছাড়া বিভিন্ন খাঁচার ভেতর খড় দেওয়া হয়েছে যেন প্রাণীরা সেখানে বসে শরীর গরম করতে পারে। সেইসঙ্গে পশু-পাখিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন খাওয়ানো হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এখনো পর্যন্ত শীতের কারণে চিড়িয়াখানার একটা পশুও অসুস্থ হয়নি। পশুপাখিদের শরীর গরম রাখার জন্য খাবারের মান বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি নানা ধরনের ভিটামিন খাওয়ানো হচ্ছে তাদের। পাশাপাশি চিড়িয়াখানা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য আমরা আলাদাভাবে নানা ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি।
রংপুর চিড়িয়াখানা জ্যু অফিসার ডা. শাহাদত হোসেন বলেন, প্রতিদিনই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাসহ সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যাতে কোনো প্রাণী অসুস্থ না হয়। ঘরগুলো পরিষ্কার রাখা হচ্ছে। প্রতিদিন পানি বদলে পরিষ্কার পানি দেওয়া হয়।
এদিকে রংপুরের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, রংপুরে সোমবার সকালে সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ বিভাগের নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে ১০ দশমিক ২, ডিমলায় ১১ দশমিক শূন্য, দিনাজপুরে ৯ দশমিক ৫, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১০ দশমিক ২, এবং কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১২ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দেশে দুটি সরকারি চিড়িয়াখানার মধ্যে রংপুরে একটি। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে রংপুর নগরীর হনুমানতলা এলাকায় ১৯৮৯ সালে রংপুর চিড়িয়াখানাটি গড়ে ওঠে। এটি দর্শনার্থীদের জন্য ১৯৯২ সালে খুলে দেওয়া হয়। প্রায় ২২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত চিড়িয়াখানায় থাকা পশুপাখির মধ্যে সিংহ, বাঘ, জলহস্তী, হরিণ, অজগর সাপ, ইমু পাখি, উটপাখি, বানর, কেশওয়ারি, গাধা, ঘোড়া, ভালুক উল্লেখযোগ্য।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএএ