রেলের শহর পেল রেলমন্ত্রী, উচ্ছ্বসিত এলাকাবাসী
নতুন সরকারের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজবাড়ী-২(পাংশা-বালিয়াকান্দি-কালুখালী) আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম। স্বাধীনতার পর রেলের শহর রাজবাড়ী জেলা থেকে এই প্রথম কোনো মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রীর দেওয়া হলো। জিল্লুল হাকিম রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত জেলার সর্বস্তরের মানুষ।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপন থেকে জিল্লুল হাকিমের রেলমন্ত্রী হওয়ার তথ্য জানা গেছে।
এর আগে একই দিন বঙ্গভবনে সন্ধ্যা ৭টার দিকে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রীকে শপথবাক্য পাঠ করানো হয়। শপথের পর তাদের দায়িত্ব বণ্টন করেন প্রধানমন্ত্রী।
জিল্লুল হাকিম রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ায় তার নিজ এলাকা পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালীর মানুষের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। প্রত্যেক উপজেলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের আয়োজনে আনন্দ মিছিল, আতশবাজি ফোটানো ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে।
পাংশা উপজেলার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের চাওয়া পাওয়া ছিল রাজবাড়ী জেলা থেকে কেউ মন্ত্রী হোক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের চাওয়া পাওয়া পূরণ করেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.জিল্লুল হাকিম রেলমন্ত্রী হয়েছেন। আমরা পাংশার বাসিন্দারা অনেক অনন্দিত এই খবরে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নায়েব আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের নেতা রেলমন্ত্রী হওয়ায় আমরা আনন্দ মিছিল করেছি। সকলের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করেছি। আমরা অনেক আনন্দিত যে রাজবাড়ী জেলা থেকে আমাদের নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিমকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা বালিয়াকান্দি উপজেলার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।
রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম শফিকুল মোরশেদ আরুজ বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম রাজবাড়ী-২ আসন থেকে পাঁচ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি এই অঞ্চলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের আস্থার ঠিকানা। রাজবাড়ী রেলের শহর। এই রেলের শহরে আমরা একজন রেলমন্ত্রী পেয়ে অনেক আনন্দিত। আমরা আশা করি জিল্লুল হাকিমের হাত ধরে রাজবাড়ী তথা সারাদেশের রেলের ব্যাপক উন্নয়ন হবে।
জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম ১৯৫৪ সালের ২ জানুয়ারি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার আনন্দবাজার গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মো. আবুল হোসেন নিজেও ছিলেন একজন সমাজসেবক এবং শিক্ষানুরাগী। জিল্লুল হাকিমের পৈতৃক বাড়ি পাংশা উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে। জিল্লুল হাকিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর (এমএ) পাস করেছেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জিল্লুল হাকিম মুক্তিযুদ্ধকালীন গোয়ালন্দ মহকুমার কমান্ডার ছিলেন। তিনি সংসদ সদস্যের পাশাপাশি একজন সফল ব্যবসায়ী। তার স্ত্রী সাঈদা হাকিম ও দুই ছেলে মিতুল হাকিম ও রাতুল হাকিমও সফল ব্যবসায়ী।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম ছয় বার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পাঁচ বার সংসদ সদস্য হয়েছেন। ১৯৯৬ সালে প্রথম নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরের বার অর্থাৎ ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নাসিরুল হক সাবুর কাছে হেরে যান তিনি। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির নাসিরুল হক সাবুকে পরাজিত করে ফের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জিল্লুল হাকিম। ২০১৪ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিল্লুল হাকিম ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৮৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/আরএআর