চুরি করতে দেখে ফেলায় প্রহরীকে হত্যা, অতঃপর...
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের গাড়াদহ ইউনিয়নের মশিপুর এলাকার আর.কে টেক্সটাইলের নিরাপত্তা প্রহরী ফেরদৌসকে হত্যার ঘটনায় মো. মামুন হোসেন (৩০) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামুন পুলিশের কাছে এই হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সকালে শাহজাদপুর থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) মো. কামরুজ্জামান।
গ্রেপ্তারকৃত মো. মামুন হোসেন উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের ঘোড়শাল গ্রামের মো. আনোয়ার হোসেনের ছেলে ও উক্ত টেক্সটাইলের চাকরিচ্যুত শ্রমিক। অপরদিকে নিহত নিরাপত্তাপ্রহরী মো. ফেরদৌস (১৮) শাহজাদপুর উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের মশিপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মো. আক্কাস আলীর ছেলে ও আর.কে টেক্সটাইলের নিরাপত্তাপ্রহরী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, ফেরদৌসের হত্যাকারী মামুন একজন কাপড়ের প্রিন্ট ডিজাইনার। তিনি ২০২০ সালে উক্ত আর.কে টেক্সটাইল মিলে কাপড়ের প্রিন্ট ডিজাইনার হিসেবে যোগদান করেন। একই জায়গায় চাকরি করার সুবাদে নিহত ফেরদৌসের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু উক্ত মিল থেকে মাঝেমধ্যেই মামুন লোহার রড চুরি করতেন। প্রায় ৪-৫ মাস আগে রড চুরির সময় মামুনকে ফেরদৌস হাতেনাতে ধরে ফেলেন। এতে মামুনের চাকরি চলে যায় এবং ফেরদৌসের ওপর ক্ষিপ্ত হন। এরপর মামুন ঢাকাতে গিয়ে একটি কন্সট্রাকশন কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৪ জানুয়ারি সকালে মামুন ঢাকা থেকে শাহজাদপুরে এসে ফেরদৌসের সঙ্গে দেখা করে আগের ঘটনার জন্য মাফ চান এবং ফেরদৌসের সঙ্গে রাতে মিলের মধ্যে থাকতে চান। ফেরদৌস সরল বিশ্বাসে তাকে থাকতে দেন। এভাবে দুই দিন পর ৬ জানুয়ারি রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে মামুন আবারও চুরির উদ্দেশ্যে মিলের মধ্যে লোহার রড খুলতে থাকেন। এ সময় ফেরদৌসের ঘুম ভেঙে যায় এবং তিনি মামুনকে চুরি করতে নিষেধ করেন। তখন মামুন লোহা খোলার রেঞ্জ দিয়ে ফেরদৌসের মাথার বাম পাশে আঘাত করেন। আঘাতে তার মাথা থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তিনি মারা গেলে পাশেই থাকা কোদাল দিয়ে গর্ত করে ফেরদৌসের মরদেহ বালুর মধ্যে পুঁতে রেখে মিলের প্রধান ফটকে তালা মেরে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
তিনি আরও বলেন, শাহজাদপুর থানা পুলিশের একটি চৌকস দল তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় গত ১০ জানুয়ারি সকালে ঢাকার আদাবর থানাধীন সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামুন হোসেনকে গ্রেপ্তার করে এবং তার কাছ থেকে নিহত ফেরদৌসের মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্যমতে আর.কে. টেক্সটাইল মিলসের ভেতরে মাটির নিচে পুঁতে রাখা অবস্থায় নিহত ফেরদৌসের মরদেহ উদ্ধারসহ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কম্বল ও লোহার সোলাই রেঞ্জ এবং গর্ত করার কাজে ব্যবহৃত কোদাল উদ্ধারপূর্বক জব্দ করে থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত আসামি মো. মামুন হোসেন নিরাপত্তাপ্রহরী ফেরদৌসকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে বলেও জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান।
প্রসঙ্গত, ফেরদৌস গত শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি। তাকে অনেক জায়গায় ও আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে সোমবার (৮ জানুয়ারি) শাহজাদপুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন নিহতের বাবা। এরপর গতকাল বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকালে নিখোঁজের পাঁচ দিন পর নির্মাণাধীন আর.কে টেক্সটাইলের বালুর নিচে পুঁতে রাখা অবস্থায় ফেরদৌসের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
শুভ কুমার ঘোষ/এমজেইউ