স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের মারধর, বাড়িঘর ভাঙচুর-লুটপাটের অভিযোগ
ফরিদপুর-২ আসনের (নগরকান্দা ও সালথা) বিভিন্ন এলাকায় বিজয়ী নৌকা প্রতীকের শাহদাবের সমর্থকদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ জামাল মিয়ার কর্মী-সমর্থকদের মারধর, বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে নগরকান্দা উপজেলার ডাঙ্গী ইউনিয়নের ডাঙ্গী, ভবুকদিয়া গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে স্বতন্ত্র সমর্থকদের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে সালথার বল্লভদী ইউনিয়নের কাজীর বল্লভদী গ্রামেও ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
নগরকান্দায় সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ১৫ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়ে নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য হাসান মিয়ার নেতৃত্বে নৌকার সমর্থক ডাঙ্গী ইউনিয়নের যদুরদিয়া গ্রামের মিজান, নান্নু মাতুব্বরসহ শতাধিক লোক গাড়িতে করে উল্লাস করে যাওয়ার পথে ডাঙ্গী বাজারে পৌঁছালে তা বাধা দেন ডাঙ্গী ইউনিয়নের ডাঙ্গীনগরকান্দা গ্রামের কামাল মাতুব্বরের নেতৃত্বে স্বতন্ত্র প্রার্থী জামালের সমর্থকেরা। পরে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর ডাঙ্গী ইউনিয়নের ডাঙ্গী বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী জামালের সমর্থকদের পাঁচটি দোকান ও চারটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে নৌকার সমর্থকরা। এছাড়া একই ইউনিয়নের ভবুকদিয়া গ্রামে জামালের দুই সমর্থকের দুইটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে পোড়ানো হয়।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ জামালের সমর্থক ও ডাঙ্গী বাজারের ব্যবসায়ী সবুজ মোল্যা বলেন, আমি জামালের দল করায় আমার দোকান লুট করা হয়েছে। দোকান থেকে কম্পিউটার ও আনুষাঙ্গিক যন্ত্রাংশ নিয়ে গেছে নৌকার সমর্থক হাসান মেম্বার ও তার দলবল। তাছাড়া নগদ ৫০ হাজারের উপরে টাকাসহ লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে গেছে তারা।
তবে এসব অভিযোগ নাকচ করে নৌকার সমর্থক ইউপি সদস্য হাসান মিয়া বলেন, আমি গতকালকের নির্বাচনে নৌকার এজেন্ট ছিলাম বলে জামালের দল আমার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে এইসব অভিযোগ আনছে। আর লুটপাটের অভিযোগ তুলে তারা মামলা করার জন্য এসব কথা বলে বেড়াচ্ছে। মূলত জামাল বাহিনীর দ্বারাই আমরা দীর্ঘদিন ধরে এখানে নির্যাতিত। এদিকে সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সালথার বল্লবদি ইউনিয়নের কাজীর বল্লভদী গ্রামে স্বতন্ত্র প্রার্থী জামালের সমর্থক ওমর কাজী, মোস্তফা শেখ, মামুন ও আলমগীরের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায় নৌকার সমর্থক রাজু মোল্লার নেতৃত্বে একটি দল। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, আমি নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর নৌকার প্রার্থীর সমর্থকেরা গ্রামে গ্রামে আমার লোকজনদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। নির্বাচনে আমার এজেন্ট যারা ছিল ঘরে গিয়ে তাদেরকে হুমকি ধামকি দিচ্ছে।
এসব বিষয়ে কথা বলতে ফরিদপুর-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও সদ্য বিজয়ী নৌকার প্রার্থী শাহাদাব আকবরের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি সেটি রিসিভ করেননি।
ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) আসাদুজ্জামান শাকিল বলেন, এসব ঘটনা শোনার পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। নগরকান্দার সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ১৫টি রাবার বুলেট ছুড়েছে এবং সালথার ঘটনাও পুলিশ গিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেছে। এসব এলাকার পরিস্থিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এসব ঘটনায় কোন পক্ষেই থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি।
প্রসঙ্গত, ফরিদপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী শাহাদাব আকবর চৌধুরী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জামাল হোসেনকে ১ হাজার ৯৬২ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন।
জহির হোসেন/আরকে