‘সাজানো ফলাফল’ আখ্যা দিয়ে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে জেলা আ. লীগ

ফরিদপুর-৩ আসনের নির্বাচনের ফলাফলে জয়ী হয়েছেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ। এই ফলাফলকে ‘সাজানো’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে জেলা আওয়ামী লীগ ও নৌকা প্রতীকের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। সোমবার (৮ জানুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে শহরের আলীপুর মহল্লা এলাকায় অবিস্থত আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নির্বাচন পরবর্তি দলের এক বর্ধিত সভায় এ কথা জানান।
ওই সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক বলেন, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শামীম হকের পক্ষ থেকে এ ফল আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। এটি সাজানো ফলাফল, প্রশাসনের সহায়তায় ষড়যন্ত্রে করে আমাদের হারানো হয়েছে। এ ফলাফল নীল নক্সারই বহিঃপ্রকাশ। আমরা প্রশাসনের কাছে স্বতন্ত্র প্রার্থী আজাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর তালিকা দিয়েছি। কিন্তু আমাদের কোনো তালিকা আমলে নেওয়া হয়নি। ওনাদের (প্রশাসন) কোনো কাজ দেখিনি। আমরা দেখা করতে চাইলে ওনারা আমাদের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করতে চয়নি।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিনাকারণে কেন্দ্রে গিয়ে নৌকার কর্মীদের গালিগালাজ করেছে, তাদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে, এমন কি নারীর গায়ে হাত দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। রণকাইল, রামখন্ডে আমাদের এজেন্টদের বের করে ভোট নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের কর্মকাণ্ডে এ জাতীয় নির্বাচন কলঙ্কিত হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলছি, আমরা আর মার খেতে রাজী নই। আঘাত আসলে পাল্টা আঘাত আসবে। আমরা লিস্ট করছি এ নির্বাচনে কার কি ভুমিকা ছিল। আমরা লিস্ট জমা দেব। এ লিস্ট অনুযায়ী কাজ না হলে আমরা আন্দোলন শুরু করব। প্রয়োজনে হরতাল ডাকব, হরতোল ডেকে এ প্রশাসনের প্রতি ফরিদপুরবাসীর অনাস্থা জানাব। এ স্বতন্ত্র এমপি আওয়ামী লীগের এমপি না। এ এমপির প্রতি জননেত্রীর কি ধারণা তা আপনারা গত ২ জানুয়ারি জননেত্রীর বক্তব্য থেকে জানতে পেরেছেন। ওনার দ্বারা ফরিদপুরের কোনো উন্নতি হবে না, উনি জননেত্রীর আশীর্বাদও পাবেন না।
ইশতিয়াক আরও বলেন, উনি (আজাদ) মিথ্যা কথা বলে ভোট নিয়েছেন। সন্ত্রাসের কথা বলেছেন। উনি তার প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়ন করেন তা আমরা দেখব। উনি সস্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলে ভোট নিয়েছেন, কাল রাতেই ওনার সন্ত্রাসী বাহিনী সন্ত্রাসী কাজ শুরু করে দিয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক বলেন, আপনি (আজাদ) মিথ্যা কথা বলে ভোট নিয়েছেন। আমাদের অন্যায়ভাবে হারানো হয়েছে। কেন আমরা পরাজিত হয়েছি তা জননেত্রীকে জানিয়েছি। আমাদের আর ‘কুল’ থাকার সুযোগ নেই। ঠান্ডা থাকতে থাকতে আমরা এমন একটা পর্যায়ে চলে এসেছি এখন আমাদের সেলফ ডিফেন্স নিতে হবে। আপনি (আজাদ) ফরিদপুরকে অশান্ত করে ফেলেছেন। আর সহ্য করব না। আপনার সন্ত্রাসী বাহিনীদের একটু থামান।
প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে শামীম হক বলেন, আপনারা কি সর্বসর্বা নাকি এ দেশের। এক সঙ্গে কাজ করি এটা আমাদের দুর্বলতা নাকি। যখন আমাদের গালাগালি করা শুরু হলো তখন আমরা প্রশাসনকে বলেছিলাম এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে। আপনারা ব্যবস্থা নেননি। সেখান থেকেই আপনাদের ষড়যন্ত্র শুরু হয়।
এ কে আজাদের অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে শামীম হক বলেন, আপনরা ব্যক্তি শামীমকে হারাননি, আপনারা শেখ হাসিনাকে হারিয়েছেন, নৌকাকে হারিয়েছেন। বিবেক যদি থেকে থাকে তাহলে প্রশ্ন করে দেখেন আপনার কি করেছেন। আগামী দিনে নতুন করে রাজনীতি শুরু হবে। বঙ্গবন্ধুর সৈনিক এক সহজে হার মানে না। বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনা ছাড়া আর কারো সাথে আমরা আপোষ করবো না।
জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের বক্তব্যের ব্যাপারে জেলা রিটানিং কর্মকর্তা ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সব কেন্দ্র থেকে পাওয়া ফলের ভিত্তিতে নির্বাচনী ফল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন চলাকালীন কেউ আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ দেয়নি। এমনকি নির্বাচনের পরও কেউ অভিযোগ করেনি। আমরা কেন্দ্রে থেকে যে ফলাফল পেয়েছি সেটাই ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে কারচুপি বা পক্ষপাতিত্ব ছিল না। অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে সবাই ভোট প্রদান করেছে।
জহির হোসেন/আরকে