রংপুরে ভোট দেবেন স্পিকার, বাণিজ্যমন্ত্রীসহ ৫ এমপি
রংপুরের ছয় সংসদীয় আসনে ৩৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও হেভিওয়েটের তালিকায় রয়েছে হাতেগোনা কয়েকজন। যাদের মধ্যে সংসদের স্পিকার, বাণিজ্যমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় উপনেতা ও চিফ হুইপসহ সাতজন রয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকার ভোটার হওয়ায় রংপুর-৩ আসনে প্রার্থী হয়েও ভোট দিতে পারবেন না জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তবে বাকিরা ভোট প্রদান করবেন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায়।
নির্বাচন সূত্রে জানা যায়, রংপুরের ৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪ জন সংসদ সদস্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে রংপুর-৩ আসনের রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ ও রংপুর-৫ আসনের এইচ এন আশিকুর রহমান নির্বাচন করছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর-১ (গংগাচড়া ও আংশিক সিটি) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব (বর্তমানে বহিষ্কৃত) ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা তার নির্বাচনীয় এলাকার গংগাচড়া ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের গার্লস স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেবেন। তিনি ভোটের শুরুতেই ভোট দেবেন বলে জানা গেছে। মসিউর রহমান রাঙ্গা এবারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীকে নির্বাচনে লড়ছেন।
এই আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক না থাকলেও ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ ‘লাঙ্গল’ এবং আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবলু কেটলি প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো.আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি ভোট দেবেন বদরগঞ্জ হাইস্কুল কেন্দ্রে। ডিউক চৌধুরীও সকালে ভোট দেওয়ার কথা রয়েছে।
এ আসনে ত্রিমুখী লড়াই হবে। এখানে জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য আনিছুল ইসলাম মণ্ডল ‘লাঙ্গল’ এবং আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বনাথ সরকার বিটু ‘ট্রাক’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন।
রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ভোট দেবেন পীরগাছার জেএন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। তিনি নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। টিপু মুনশি কখন ভোট দেবেন সেটা এখনও নিশ্চিত না। তবে সকালেই ভোট দেবেন বলে জানা গেছে।
এ আসনে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তফা সেলিম বেঙ্গলের ‘লাঙ্গল’ প্রতীকের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনের বর্তমান সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান। তিনি ৫ বারের সংসদ সদস্য। এইচ এন আশিকুর রহমান এবারে ছেলে রাশেক রহমানের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন না। তবে তার ছেলে রাশেক রহমান নৌকা প্রতীকে লড়ছেন। তিনি ছেলে রাশেক রহমানসহ মিঠাপুকুরের ইমাদপুর ইউনিয়নের ফরিদপুর সেন্টারে ভোট প্রদান করবেন।
এই আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস মিলছে প্রচার-প্রচারণা থেকে। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার ‘ট্রাক’ এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী আনিছুর রহমান ‘লাঙ্গল’ প্রতীকে লড়াই করছেন।
রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবারেও নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। তিনি ভোট দেবেন লালদিঘি উচ্চ বিদ্যালয় ও মকিমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। তিনি সকাল আটটায় ভোট দেবেন।
এই আসনে নৌকা প্রতীকে শিরীন শারমিন চৌধুরী সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে একই দলের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলামের ‘ট্রাক’ এবং জাতীয় পার্টির নুর আলম মিয়া যাদুর ‘লাঙ্গল’ প্রতীকের মধ্যে।
এদিকে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি মো. আব্দুল বাতেন বলেন, রংপুরের সংসদীয় ছয়টি আসনের ৮৫৮টি কেন্দ্রের মধ্যে জেলা পুলিশের অধীনে ৬৫৯টি এবং মেট্রোপলিটন পুলিশের অধীনে ১৯৯টি কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে রংপুর জেলার ৬৫৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩১৯টি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রে পুলিশ-আনসারের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি বিশেষ নজরদারি রাখা হবে। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত টহল টিম থাকবে। একই সঙ্গে বাড়ানো হবে স্ট্রাইকিং ফোর্স ও ভ্রাম্যমাণ টিমের সংখ্যাও।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরপিএমপি) কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান জানান, মহানগর এলাকার মোট ১৯৯টি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আরপিএমপির ১ হাজার ১১৪ জন, পিটিসি রংপুরের ৭৮ জন, এপিবিএন’র ১৫০ জন এবং শিল্প পুলিশের ১২২ জনসহ মোট ১ হাজার ৪৬৪ জন পুলিশ কর্মকর্তা-ফোর্স এবং আনসার-ভিডিপির ২ হাজার ৩৮৮ জন সদস্য মহানগর এলাকার দায়িত্ব পালন করবে।
অন্যদিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর-১ আসনে ৯ জন, রংপুর-২ আসনে ৩ জন, রংপুর-৩ আসনে ৬ জন, রংপুর-৪ আসনে ৩ জন, রংপুর-৫ আসনে ৮ জন এবং রংপুর-৬ আসনে ৭ জনসহ মোট ৩৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
জেলায় মোট ভোটার ২৪ লাখ ৩২ হাজার ৫০৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার রয়েছে ১২ লাখ ২০ হাজার ৩৯৪ জন। পুরুষ ১২ লাখ ১২ হাজার ৮৭ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ২৪ জন ভোটার রয়েছে। জেলার মোট ৮৫৮টি ভোটকেন্দ্রের ৫ হাজার ১৭৬টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন।
রংপুর জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। জেলার ৮৫৮ কেন্দ্রই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনে কোনো বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর ঘটনায় ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, সাধারণ কেন্দ্র বা গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা নির্বাচন কমিশন থেকে গাইডলাইন দেওয়া আছে। আমরা সেই গাইডলাইন ফলো করবো। তা ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে যা প্রয়োজন আমরা সবই করবো, সেই প্রস্তুতি আমাদের আছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএএ