ভোটের মাঠে এগিয়ে নৌকা, পিছু ছুটছে ট্রাক-লাঙ্গল
নৌকার প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনে দুইবারের নির্বাচিত এমপি আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রাখছেন। প্রচারণার শুরু থেকেই তিনি এগিয়ে রয়েছেন। তাতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের পর। এখন উজ্জীবিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে নৌকার সমর্থন বাড়াচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষও।
এই আসনে সর্বস্তরের জনগণের সমর্থন পেয়ে নৌকার মাঝি রাতদিন বিরামহীনভাবে ছুটছেন একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। প্রতিদিন সাধারণ জনগণ বেষ্টিত হয়ে গণসংযোগ, নির্বাচনী সভা, আলোচনা সভা, মতবিনিময় করে যাচ্ছেন আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক। তার সকল নির্বাচনী সভায়, নারী, পুরুষ, যুবক, কিশোরসহ সর্বস্তরের মানুষরা অংশ নিচ্ছেন। এ ছাড়া প্রতিটি ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তিনি ভোট প্রার্থনা করছেন। ভোটাররাও তাকে সমর্থনসহ সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
তবে আওয়ামী লীগের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বনাথ সরকার বিটুও (ট্রাক) আছেন ভোটারদের আলোচনায়। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য আনিছুল ইসলাম মণ্ডলের কর্মী সমর্থকদের দাবি ভোটে লাঙ্গল-নৌক-ট্রাকের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে।
এদিকে নৌকা প্রতীকের পক্ষে থাকা স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানায়, গত ১০ বছরে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করায় প্রতিদিনের নির্বাচনী গণসংযোগে হাজার হাজার জনগণ স্বেচ্ছায় উপস্থিত হয়ে আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুরের বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ এখন আলোকিত। অন্য যে কোনো আসনের চেয়ে উন্নয়নে আলোচিত। গত দশ বছরে এমপি ডিউকের হাত ধরে দুটি কলেজ ও দুইটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারীকরণ করা হয়েছে। বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ উপজেলার মানুষের অল্প টাকা খরচে চিকিৎসাসেবা দিতে এই দুই উপজেলার দুই হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে বেড সংখ্যাও। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ যাতে কম খরচে অ্যাম্বুলেন্স সেবা পান সেজন্য আধুনিক দুইটি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছে।
এলাকাবাসীর দাবি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তারাগঞ্জের জনসভায় নিজেই ডিউককে ছেলে হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তার জন্য ভোট চেয়েছেন। এলাকার উন্নয়ন হলে তার হাত ধরেই হবে। রংপুর-২ এর উন্নয়ন করতে হলে ডিউকের বিকল্প নেই। এই জন্য আমরা তাকে ভোট দেব। আমাদের উন্নয়ন দরকার।
জানা গেছে, দুই উপজেলার শতভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যাতে ভালো পরিবেশে পাঠদান করতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলে দুই উপজেলায় ২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও ভুক্তির আওতায় এনেছেন এমপি ডিউক চৌধুরী। এতে করে প্রায় আড়াই লাখ পরিবারের উপার্জনের সক্ষমতা হয়েছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। উপজেলা শহর থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত পাড়া মহল্লায় এখন পাকা সড়ক। খড়া-বন্যা মৌসুমে যেসব এলাকায় মানুষ চলাচল করতে পারতো না, সেসব এলাকাসহ সাড়ে তিন শ কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণ করা হয়েছে। তারাগঞ্জে পল্লি উন্নয়ন একাডেমি করা হয়েছে। দুটি মডেল মসজিদ করা হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের জন্য তাদের মন্দির সংস্কারের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতাসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সব কাজ করা হয়েছে। যাতে প্রান্তিক পর্যায়ের খেটে খাওয়া মানুষ নিশ্চিন্তভাবে দিনাতিপাত করতে পারে। ভূমিহীনদের জন্য সরকারিভাবে ঘর বরাদ্দ এবং তা তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগামী ৭ জানুয়ারি বিশাল ভোটের ব্যবধানে তিনি আবার বিজয়ী হবেন। স্থানীয় ভোটাররা আরও বলেন, আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক রংপুর-২ আসনের এমপি হিসেবে জনগণের সেবা করেছেন। তিনি সবসময় একজন সেবক হিসেবে সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন। কোনো অন্যায় অসঙ্গতির সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। এমন তথ্য জানান স্থানীয়রা।
গোপীনাথপুর এলাকার রবিউল মিয়া নামে স্থানীয় এক ভোটার বলেন, এই আসনে এমপি একজনই তিনি হলেন ডিউক এমপি । তার আমলে কোনো দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ছিল না। তাই আবার এলাকাবাসী ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে।
তারাগঞ্জের আসাদুজ্জামান আসাদ নামে আরেক তরুণ ভোটার বলেন, গত কয়েক বছরে ব্যাপক উন্নয়নের ফলে বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলার চিত্র পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। তাই উন্নয়নের ধারাবাহিকতার স্বার্থে আমরা আবারও নৌকায় ভোট দিব।
হাবিবুর রহমান নামে এক শিক্ষক জানান, আগে যখন আমার প্রতিষ্ঠান এমপিও হয়নি তখনকার কষ্টের কথা মনে করলে চোখে পানি আসে। পরিবারের লোকজন ভীষণ কষ্টে ছিল। যখন ডিউক স্যার আমাদের প্রতিষ্ঠান এমপিও করে দিলেন তখন সেই কষ্ট আর থাকলো না। তিনি ছাড়া আমাদের ২৫ জনের পরিবার অনিশ্চিত ছিল। আমরা এবারও শিক্ষক সমাজ ডিউক স্যারের জন্য ভোট করতেছি। স্যার এবারও বহু ভোটে জিতবে।
মধুপুর এলাকার ইদ্রিস আলী বলেন, এবার ভোটের মাঠে নৌকা, লাঙ্গল ও ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী লড়াই করছে। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেহেতু ডিউকের জন্য ভোট চেয়েছেন। তাই আমরা এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে ডিউকেই ভোট দিব আবারও।
তারাগঞ্জের হাড়িয়ারকুটি ইউনিয়নের ভোটার শিপুল ইসলাম বলেন, কায় কি কয় কউক হামার এলাকায় সব্বাই নৌকায় ভোট দিবে। নৌকা ছাড়া উন্নয়ন হবে না।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডিউক চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে মঙ্গা কবলিত এই এলাকার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। এলাকার মানুষের সুখে দুঃখে সবসময় পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। এবারো তারা নৌকার জয় নিশ্চিত করবেন বলে প্রত্যাশা করি। প্রধানমন্ত্রী এসে আমার পক্ষে ভোট চেয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি, আমি এই এলাকার যে উন্নয়ন করেছি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসে আমার জন্য ভোট চেয়েছেন সুতরাং বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জের মানুষ আমাকে ভোট দিবে।
অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী কৃষিবিদ বিশ্বনাথ সরকার বিটু বলেন, নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির গ্রহণযোগ্যতা জরুরি। মানুষ ভোট দিতে পারলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। আমি মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়ে খোলস পালটানো এমপি হবো না।
১৯৯১ সাল থেকে টানা ৪বার আসনটিতে একচেটিয়া দাপট ছিল জাতীয় পার্টির। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ায় বেদখল হয়ে যায় আসনটি। সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গলের প্রার্থী আনিছুল ইসলাম মন্ডল বলছেন, স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে নিরাপত্তা ও নিরাপদে ভোটাররা কেন্দ্রে আসতে পারে তাহলে হারানো আসন আবারও ফিরে আসবে।
এই আসনেও ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের (নৌকা প্রতীক) সঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আনিছুল ইসলাম মন্ডল (লাঙ্গল প্রতীক) ও আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বনাথ সরকার বিটুর (ট্রাক প্রতীক) মধ্যে লড়াই দেখার অপেক্ষায় ভোটাররা।
৩ লাখ ৫৬ হাজার ৫৯২ জন ভোটারের এই আসনটিতে এবার প্রতিদ্বন্দ্বী তিনজন। আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগ থেকে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ আসন থেকে জাতীয় পার্টির আনিছুল ইসলাম মণ্ডল ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। প্রবাস ফেরত এই ব্যবসায়ী প্রথমবার নির্বাচিত হলেও ২০১৮ সালের নির্বাচনে পরাজিত হন। সেইবার তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন।
এএএ