‘নৌকার প্রার্থী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে, সহযোগিতা নেই প্রশাসনের’
ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী একে আজাদ তার প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী শামীম হকের বিরুদ্ধে তার কর্মীদের মারধর, নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর, কর্মীদের হুমকি, পোস্টার ছিড়ে ফেলাসহ নানা অভিযোগ করেছেন। পাশাপাশি প্রশাসনের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগও করেন তিনি।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে একে আজাদের ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলী মহল্লার বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে একে আজাদ একটি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। তিনি বলেন, গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে নৌকার প্রার্থী শামীম হকের লোক ফরিদপুর জুড়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণার শুরুর পর থেকে গত ৯ দিনে আমার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপর ১৯টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় এখন পর্যন্ত ৫টি মামলা ও ১৩টি জিডি দায়ের করা হয়। হুমকি ও হামলার ভয়ভীতি এখনো অব্যাহত রয়েছে। মামলা জিডি ছাড়াও প্রশাসনের কাছে আমাদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, গত কয়েকদিন যাবৎ ঈগল মার্কার কর্মী-সমর্থক এবং নির্বাচনী ক্যাম্প অফিসে ভাঙচুর-হামলা এবং মারপিট করা হচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সমর্থকদের সন্ত্রাসী হামলা, ভাঙচুর এবং মারপিটে ইতোমধ্যে ঈগল মার্কার প্রায় ২০ জন কর্মী, সমর্থক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সবশেষ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মাহমুদপুর ক্যাম্পে হামলা এবং ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় সন্ত্রাসীরা ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রহমান ঝনকসহ ৫ জনকে কুপিয়ে আহত করে। আব্দুর রহমান ঝনকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আব্দুর রহমান ঝনক বর্তমানে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। একই দিন রাতে পশ্চিম গংগাবরদি সরকারে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্কুল সেন্টারে আগুন দিয়েছে এবং টেপাখোলা ক্যাম্প ভাঙচুর করছে ওই সন্ত্রাসীরা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সন্ত্রাসীরা গত কয়েকদিনে নির্বাচনী মাঠে ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করেছে। পোস্টার ছিড়ে ভয়ভীতি এবং হুমকি দেখিয়ে তারা ঈগল প্রতিকের কর্মী সমর্থকদের মাঠ ছাড়া করতে চায়। তারা চায় শূন্য মাঠে গোল দিতে।
একে আজাদ আরও বলেন, আমার বিপুল জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শামিম হকের সন্ত্রাসীরা একের পর এক হামলা-ভাঙচুর, মারপিটের ঘটনা ঘটাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিন সন্ত্রাসীদের হামলা, ভাঙচুর এবং মারপিটে ঈগল প্রতীকের কর্মী, সমর্থকরা আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। কিন্তু প্রশাসন এসব ঘটনায় নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে। আমরা অভিযোগ করার পর যথাযথ পদক্ষেপ নিতে দেখছি না। এমনও হয়েছে একটা এজাহার থানায় দুই দিন পরে থাকার পর সরকারের উচ্চমহলের হস্তক্ষেপে সেটিকে মামলা হিসেবে নিচ্ছে। তবে সেখানেও আসামি ধরার ক্ষেত্রে দায়সারা ভাব খুবই সংকটজনক পরিস্থিতির বার্তা দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে একে আজাদ ফরিদপুরে সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে শামীম হকের অনুসারী কয়েক ব্যাক্তিকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে এদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। এই ব্যাক্তিদের নামে রিটার্নিং কর্মকর্তা কামরুল আহসান তালুকদারের কাছেও অভিযোগ দিয়েছেন একে আজাদ।
তারা হলেন, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি গোলাম মো. নাছির, আলীয়াবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন সম্রাট, অস্ত্র ব্যবসায়ী মোবারক খলিফা, হেলমেট বাহিনীর প্রধান তরিকুল ইসলাম নাসিম,অস্ত্রবাজ ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ফাইন, জহরুক ইসলাম জনি, হাত কাটা আক্তার, অস্ত্র ব্যবসায়ী মো. শাহীন মোল্লা, এজাজ খান, শওকত হোসেন ওরফে সাকো, শোয়ানুর রহমান সোহাগ, রাকিবুর রহমান রকিব, গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম মজনু ও আনোয়ার হোসেন আবু ফকির।
লিখিত বক্তব্যে একে আজাদ বলেন, আজকের পর ঈগল প্রতীকের কোনো কর্মী সমর্থকের ওপর হামলা, মামলা এবং ক্যাম্প ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলে রাজপথে বিক্ষোভ কর্মসূচি, মিছিল-মিটিংসহ বৃহত্তর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হব।
ফরিদপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তা কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী একে আজাদের অভিযোগ পেয়েছি। তার অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ রয়েছে তাদের আমরা ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা শুরু করে দিয়েছি। সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন,আমরা কোনো একক প্রার্থীকে সহযোগিতা করছি না। আইনের মধ্যে থেকে সব প্রার্থীকে সমান সুযোগ দেওয়াই আমাদের কাজ। আমরা সেটাই করছি।
জহির হোসেন/আরকে