আমু ভাই আমাকে বিএনপিতে পাঠান, দোষ আমার না : শাহজাহান ওমর
বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও ঝালকাঠি-১ আসনে নৌকার প্রার্থী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বলেছেন, ১৯৯০ সালে আমার নেতা আমির হোসেন আমু আমাকে নিয়ে শেখ হাসিনার কাছে গিয়েছিলেন। তখন নেত্রী মুচকি হেসে বললেন- এক প্রার্থী এসেছেন, যিনি আমার (শেখ হাসিনা) বাবার বাল্যবন্ধু মরহুম কুদ্দুস সাহেব। তাকে তো ওয়াদা করেছি। তখন আমি বললাম- আমু ভাই আমি কী করবো? তখন আমু ভাই বললেন, যেখানে (বিএনপি) আছো সেখানেই থাকো। এই আমু ভাই কিন্তু আমাকে আবার বিএনপিতে পাঠান, দোষ কিন্তু আমার না।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে বরিশাল নগরীর কবি জীবনানন্দ দাশ সড়কস্থ ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর বাসভবনে রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
শাহজাহান ওমর বলেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জু ১৯৭৪ সালে আমাকে কেসে ঢুকিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ভুল বুঝিয়ে আমার চাকরি ডিসমিস করেছিল। আমি তখন খুব বিপদগ্রস্ত। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর আমাকে বললেন- আমার দল করো। তখন আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত ছিল না। তবে সেই বিপদে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, আমির হোসেন আমু ও আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ আমার জন্য লাফিয়ে পড়েছিলেন। যার জন্য আমি টিকে আছি, তা না হলে আমার অনেক আগে জেল হয়ে যেত। আব্দুর রব সেরনিয়াবাত তার বাসায় ডিস্ট্রিক্ট জজকে ডেকে এনে আমার জামিন করিয়েছেন, প্রকাশ্যে বললাম। আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ জেলে বার বার আমার সাথে দেখা করেছেন। এগুলো আমি স্মরণ করি।
আরও পড়ুন
তিনি আরও বলেন, জিয়ার সময় আমি এমপি হলাম। আর এরশাদকে আমি ঘৃণা করি। পাকিস্তান আর্মিতে যে সকল বাঙালি অফিসার এই দেশে আসতে চেয়েছিল বা এই দেশের পক্ষে কথা বলছিল তাদের বিচার করার জন্য কোর্ট মার্শাল করা হয়েছে আর সেই কোর্টের চেয়ারম্যান ছিলেন লেফট্যানেন্ট কর্নেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর সময় একটি আইন পাস হয়েছিল যে পাকিস্তান থেকে যদি কোনো আর্মি অফিসার দেশে এসে মুক্তিযুদ্ধে শামিল না হয় তাহলে তার চাকরি চলে যাবে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একমাত্র ব্যক্তি যে ৭১ এ দেশে এসে যুদ্ধ না করে চলে গেছে। আবার তাকে চাকরিতেও বহাল রাখা হয়েছে জেনারেল ওসমানীর কারণে। এই কারণে আমি এরশাদ ও জাতীয় পার্টি যারা করে তাদেরও ঘৃণা করি।
আমি বিএনপিতে ২৯ তারিখ পর্যন্ত ছিলাম। ৩০ তারিখ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আমার বাসায় ফোন আসলো, প্রধানমন্ত্রী আমার সাথে দেখা করতে চায়। হাতে সময় অল্প, স্ত্রীকে জানিয়ে রওনা হলাম। আমি গেলাম, যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বললেন- ‘বসেন কমান্ডার, আপনি আমার দল করেন।’ আমি বললাম- করতে পারি এক শর্তে, ১৫ আগস্ট আপনার তিন ভাই শহীদ হয়েছে। আপনি যদি আমাকে চতুর্থ ভাই হিসেবে গ্রহণ করেন তাহলে। এরপর বললেন- ‘দস্তখত করেন।’ দস্তখত করলাম, আওয়ামী লীগে যোগ দিলাম, টিকেট দিয়ে দিলো, নিয়ে চলে আসলাম। এরপর আমু ভাই ও হাসানাত ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করি। তখন আমু ভাই বললেন- ‘আমি সব জানি।’
শাহজাহান ওমর বলেন, রাজাপুর গুটিকয়েক নাবালক ছেলে আছে, ওরাও এসে যাবে। এটা কোনো ঘটনা না। আর না আসলে কীভাবে আনতে হয় তা আমার জানা আছে।
তিনি বলেন, সংবিধানের কোথাও নেই দল চেঞ্জ করা যাবে না। বরিশালে সবচেয়ে বড় রাজনীতিবিদ শের-ই বাংলা একে ফজলুল হক, তিনি প্রথমে কংগ্রেস করেছেন, তারপর মুসলিম লীগ, কেএসপি এবং শেষে যুক্তফ্রন্ট। শের-ই বাংলা দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে, শিক্ষার স্বার্থে, উন্নয়নের স্বার্থে এটা করতে পারে তাহলে আমি তো একটা চুনোপুঁটি।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে শাহজাহান ওমর বলেন, আপনারা বানিয়ে বানিয়ে যা লেখেন তা সত্য নাকি? আমি বলি ক আপনারা খ গ মিলিয়ে একটা প্রবন্ধ লেখেন। রাজাপুরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এখানে, আমির হোসেন আমু ভাই এখানে, জেলা নেতৃবৃন্দ এখানে রয়েছেন তাহলে বর্জন করল কে? আমি বর্জনের লোক? ওরা কৃতার্থ, ওদের দলকে আমি গৌরবান্বিত করেছি, অলংকৃত করেছি। ওরা আমাকে সাদরে গ্রহণ করেছে, বর্জন করার প্রশ্নই ওঠে না।
আবার বিএনপিতে ফিরবেন কিনা- এমর প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান ওমর বলেন, তওবা আস্তাগফিরুল্লাহ। আই অ্যাম এ ফ্রিডম ফাইটার, আই ফট ফর দিস কান্ট্রি। আমি তিন বার গুলি খেয়েছি। আমার তো সংগ্রামী চেতনা। আমার চেতনা তো অন্য লাইনে হতে পারে না। এই বেসিক জিনিসটা আপনারা কেন বোঝেন না। গুরু (আমু) তো বললেন আমি জয় বাংলার লোক, কতবার বলবো। তার সাথের লোক, ৬৪ থেকে তার সাথে অদ্যবধি আছি।
এ সময় ঝালকাঠি জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর