নৌকা পেয়েও কপাল পুড়ল গোলাম মোস্তফার, মাঠে লড়বেন তার স্ত্রী
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসন ১৪ দলের শরিকদের বন্টন করায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম মোস্তফা মনোনয়ন প্রত্যাহারের করে নিয়েছেন। ওই আসনে তার স্ত্রী মার্জিয়া সুলতানা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটের মাঠে লড়বেন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল রানার বিপরীতে মার্জিয়া নির্বাচন করবেন।
রোববার (১৭ ডিসেম্বর) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর জেলার চারটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠে থাকা ২৭ জনের মধ্যে একমাত্র নারী প্রার্থী তিনি। স্বতন্ত্র ওই প্রার্থী জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি। ৪ নভেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাইকালে ত্রুটিপূর্ণ মনোনয়নপত্রের জন্য মার্জিয়া সুলতানার মনোনয়ন বাতিল হয়। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিল করে তিনি বৈধতা ফিরে পান।
আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগির কারণে মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েন। সে নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল। এবারও জাতীয় পার্টির ওই সংসদ সদস্যের অনুকুলে আসনটি ছেড়ে দেওয়ার কারণে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা। তিনি প্রত্যাহারের পর মাঠে রয়ে গেলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম মোস্তফার স্ত্রী মার্জিয়া সুলতানা।
আসনটিতে মার্জিয়া সুলতানাসহ প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠে থাকলেন নয়জন প্রার্থী। ওই নয় প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র রয়েছেন চারজন। আওয়ামী লীগের অপর স্বতন্ত্ররা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ শামিম, কেন্দ্রীয় যুবলীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন পাভেল, উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হুকুম আলী খান।
এদিকে জাতীয় পাটির মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেলের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ওই আসনের জাতীয় পাটির সাবেক সংসদ সদস্য জেলা জাতীয় পাটির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য কাজী ফারুক কাদের। জাতীয় পাটির মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তিনি। আসনটির অন্য প্রার্থীরা হলেন, মো. খলিলুর রহমান (তৃণমূল বিএনপি), মো. মোজাম্মেল হক (গণতান্ত্রিক পার্টি), বাদশা আলমগীর (বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি)।
এ বিষয়ে মার্জিয়া সুলতানা বলেন, এ আসনে নয় প্রার্থীর মধ্যে আমি একমাত্র নারী। নারী ভোটাররা অবশ্যই আমার সঙ্গে থাকবেন। এছাড়া আমি দীর্ঘদিন রাজনীতির মাঠে আছি। কলেজের সাবেক শিক্ষক হিসেবে আমার অনেক শিক্ষার্থী, আভিববকসহ শুভকাঙ্ক্ষী রয়েছে। আমার বাবারবাড়ি, শ্বশুরবাড়ি নির্বাচনী এলাকায়। এ আসনে আমার স্বামী গোলাম মোস্তফা একজন সফল সংসদ সদস্য ছিলেন। দুইবার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরেও দলীয় সিদ্ধান্তে প্রত্যাহার করেছেন। জয়ের ব্যপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ জানান, নীলফামারী জেলার চারটি আসনে ৩৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। যাচাই-বাছাইয়ে ১০ জনের মনোনয়ন বাতিল এবং ২৭ জনের বৈধ হয়। নির্বাচন কমিশনে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পান আরও সাতজন। রোববার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে চারটি আসনে ৭ জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। বর্তমানে নীলফামারী-১ আসনে সাতজন, নীলফামারী-২ আসনে চারজন, নীলফামারী-৩ আসনে নয়জন ও নীলফামারী-৪ আসনে সাতজনসহ মোট ২৭ প্রার্থী ভোটযুদ্ধে লড়াই করবেন।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত চলবে। ভোটগ্রহণ আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি (রোববার) অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়োগ চুড়ান্ত করা হয়েছে।
শরিফুল ইসলাম/আরকে