ডিম-সিঙারা বিক্রি করে চলছে প্রতিবন্ধী ঝর্ণার বেঁচে থাকার লড়াই
নড়াইলের সদর উপজেলার শেখহাটি ইউনিয়নের মালিয়াট গ্রামের শ্রবণ প্রতিবন্ধী ঝর্ণা বিশ্বাস। বয়স তার ষাটের একটু বেশি। ভাগ্য বদলের চেষ্টায় জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় ধরে রাস্তার পাশে ছোট্ট একটি দোকানে ডিম, সিঙারা ও পরোটা বিক্রি করে চলেছেন তিনি। তবে অনেক চেষ্টা করেও ভাগ্যের চাকা ঘোরেনি ঝর্ণার। আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়ার আশায় যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন তা এখন রুপ নিয়েছে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে।
জানা যায়, প্রায় ৩৫ বছর আগে শ্রবণ প্রতিবন্ধী ঝর্ণার বিয়ে হয় একই এলাকার হরিচাঁদ বিশ্বাসের সঙ্গে। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে থাকতেন মালিয়াট বাজারের একটি ঝুপড়ি ঘরে। সে সময় স্বামীর অভাবের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে ঘরের সামনে ছোট একটি দোকান দেন ঝর্ণা। সেখানে ডিম, সিঙারা, পরোটা বিক্রি শুরু করেন। তার স্বামীও খেত-খামারে কাজ করে আয়-রোজগার করতেন তখন। তবে বিয়ের দীর্ঘদিন পার হলেও তাদের কোন সন্তানাদি না হওয়ায় ঝর্ণার সম্মতিতে স্বামী হরিচান দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই ঘরে এক সন্তানের জন্ম হয়। দুজনের সংসার হয় চারজনে। ঝুপড়ি ঘরে জায়গা না হওয়ায় পাশে সরকারি জমিতে একটি দোচালা ঘর উঠিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করেন তারা। গাদাগাদি করে এখনও সেখানেই বসবাস করছেন। একই সঙ্গে ৩০ বছর ধরে রাস্তার পাশে ডিম, সিঙারা বিক্রি করে চলেছেন ঝর্ণা। তবে এসব বিক্রি করে এখন আর তেমন আয় নেই। স্বামীর রোজগারও ভালো না। কোনো মতে চলছে তাদের সংসার। সচ্ছলতা ফেরানোর সংগ্রামে জয়ী না হতে পেরে এখন কেবল বেঁচে থাকার লড়াই করে চলেছেন প্রতিবন্ধী ঝর্ণা ও তার পরিবার।
ঝর্ণা বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক সময় স্বামীর সঙ্গে এই দোকানেই বসবাস করতাম। এখন পাশের একটা সরকারি জায়গায় কোনো মতে একটা ঝুপড়ি ঘর তুলে থাকি। প্রায় ২৫-৩০ বছর ধরে দোকানদারি করছি। এ করে এখন আর সংসার চলে না। তারপরও বাঁচতে তো হবে। সরকারের আরেকটু সাহায্য-সহযোগিতা পেলে একটু ভালোভাবে বসবাস করতে পারতাম।
ঝর্ণার স্বামী হরিচান বিশ্বাস বলেন, ঝর্ণাকে দোকানের কাজে সবসময় সহযোগিতা করি। তবে এখন দ্রব্যমূল্যের দামের কারণে সব কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কোনো রকমে আমাদের সংসারটা চলছে। খুব কষ্টে দিন যায়। সরকার মানুষদের ঘর-বাড়ি দিচ্ছে। আমরা পাইনি। সরকারের সহযোগিতা পেলে একটু উপকার হয়।
মালিয়াট এলাকার বাসিন্দা শংকর বিশ্বাস ও নিউটন গোস্বামী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ঝর্ণা বিশ্বাস এখানে দোকানদারি করছেন। এই দোকান থেকে যে আয় হয় তাতে তাদের সংসার চলে না। তাদের কোনো জায়গা-জমি নেই। সরকারি জমিতে থাকে। তারা যদি একটু সরকারি সাহায্য পায় তাহলে ভালো থাকবে।
শেখহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সুরঞ্জন গুপ্ত ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঝর্ণা বিশ্বাস দীর্ঘদিন ধরে মালিয়াট বাজারে সিঙারা, ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালায়। সে একজন অসহায় প্রতিবন্ধী। ইতোমধ্যে তাকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। আগামীতে ঝর্ণাকে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
আরকে